জেএনইউ কাণ্ড নিয়ে বিতর্ক
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬নতুন দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ক্যাম্পাসে কথিত রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডকে ঘিরে গত ১২ দিন ধরে গোটা দেশ তোলপাড়৷ ঘটনাটি আদৌ রাষ্ট্রবিরোধী ছিল কিনা, ঠিক কী বললে সেটা দেশের বিরুদ্ধে কথা বলা হয় – তা নিয়েও বিতর্কের শেষ নেই৷
শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে পুলিশ বিনা অনুমতিতে ঢুকে ছাত্র সংগঠনের নেতাসহ কয়েকজন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে এবং অন্য পড়ুয়াদের হেনস্থা করতে থাকে৷ ধৃত ছাত্রদের বিচার এখনও হয়নি, হয়নি জামিনও৷ যেসব ছাত্রের বিরুদ্ধে লুক-আউট নোটিশ ছিল, তারা গ্রেপ্তার এড়াতে সাময়িক আত্মগোপন করে৷ এদের নেতা ইতিহাসের ছাত্র উমর খলিদ তাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান-বিক্ষোভে সামিল হয়৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনও ঐ অবস্থান বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
খলিদের কথায়, ‘‘নামটা আমার মুসলিম বলেই কি আমি জঙ্গি? যেমন আদিবাসী মানেই কি সে মাওবাদী? এই ধারণা ভুল৷ আমি কখনই নিজেকে মুসলিম বলে বিচার করিনি বা সেভাবে নিজেকে তুলে ধরিনি৷''
খালিদ জানায়, যেসব ছাত্র ক্যাম্পাসে ফিরে এসেছে, তাদের ধরার জন্য পুলিশ ছুটে আসে৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের ঢোকার অনুমতি দেয়নি৷ কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তেরও সমালোচনা হয়েছে৷ পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে যে, তারা গেটের বাইরে পাহারায় থাকবে৷ আত্মগোপনকারীরা গেটের বাইরে এলেই তাদের গ্রেপ্তার করা হবে৷ তবে কিছু পুলিশ সাদা পোষাকে ক্যাম্পাসের ভেতরেও নাকি নজর রাখছে৷
এ মুহূর্তে অবশ্য প্রধান ইস্যু এই কাণ্ডের তদন্ত৷ কে করবে বা কারা করবে? ভারতীয় সমাজ স্পষ্টতই এ বিষয়ে দু'টো ভাগে ভাগ হয়ে গেছে৷ এ প্রসঙ্গে জেএনইউ-র ইতিহাসের অধ্যাপিকা মৃদুলা মুখার্জি ডয়চে ভেলেকে বলেন, পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়৷ যদি রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দেওয়া হয়েও থাকে, তাহলে সেটা দিয়েছিল বাইরে থেকে আসা কিছু লোক বা ‘এজেন্ট'৷ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নয়৷ তাই ন্যায্য বিচারের স্বার্থে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত করবে উপাচার্যের নেতৃ্ত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিধিবদ্ধ কমিটি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের কথা মাথায় রেখে অধ্যাপক মুখার্জি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ ঘটনার উল্লেখ করে ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক পদক্ষেপ৷ এক্ষেত্রেও তাই করতে হবে৷ ছাত্ররা দোষী প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষই যথাযথ ব্যবস্থা নেবে৷ আর বাইরে থেকে যারা এসেছিল, তারা কে বা কারা – সেসবের তদন্ত করবে পুলিশ৷''
ধৃত ছাত্ররা যে রাষ্ট্রবিরোধী স্লোগান দিয়েছিল এবং ভারতের সংসদে হামলাকারীদের অন্যতম অভিযুক্ত আফজল গুরুকে শহিদ বলেছিল, তার প্রমাণ হিসেবে পুলিশের হাতে ‘ভিডিও ক্লিপিং' আছে৷ সেই ‘ক্লিপিং' আসল নয়, সেটিকে বিকৃত করা হয়েছে বলেও শুরু হয়েছে বিতর্ক৷ কংগ্রেস নেতা মনিশ তেওয়ারি মনে করেন, ঐ ভিডিও আসল না বিকৃত – তার তদন্ত হোক আগে৷ অন্যদিকে বিজেপি বলছে, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে পুলিশি তদন্তে সাহায্যের জন্য পড়ুয়াদেরই এগিয়ে আসা উচিত৷