জেনিনের সাংস্কৃতিক অঙ্গন জাগাতে জার্মান উদ্যোগ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১১পশ্চিম তীরের ছোট্ট শহর জেনিন৷ ২০০৫ সাল পর্যন্ত শহরটি তেমন কোন আলোচনায় ছিল না৷ কিন্তু ঐ বছরের একটি লোমহর্ষক ঘটনা নাড়া দেয় বিশ্ববাসীর মন৷ ১১ বছরের ছোট্ট বালক আহমেদ খতিব তার খেলনা জলবন্দুক নিয়ে খেলছিল৷ অথচ ঐ খেলনা বন্দুককে আসল মারণাস্ত্র মনে করে ছোট্ট বালক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করেছিল ইসরায়েলি সেনারা৷ তবে ঘটনার এখানেই শেষ নয়৷
আদরের সন্তান আহমেদকে হারিয়েও ইসরায়েলিদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিশোধের কথা ভাবেননি আহমেদের পিতা ইসমাইল খতিব৷ তিনি মহানুভবতার রেকর্ড সৃষ্টি করেন প্রিয় ছেলের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ইসরায়েলিদের দান করার সিদ্ধান্ত নিয়ে৷ আহমেদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার করে সেসময় পাঁচটি ইসরায়েলি শিশুর জীবন রক্ষা করা সম্ভব হয়েছিল৷ আর এমন মহান কাজের জন্য মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হন ফিলিস্তিনি বাবা ইসমাইল খতিব৷ ফলে খতিবের নাম মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠে৷
এই ঘটনার উপর ভিত্তি করে ‘জেনিনের হৃদয়' নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করা হয় ২০০৮ সালে৷ ছবিটির জার্মান পরিচালক মারকুস ফেটার সেটির মহরত জেনিনে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ অথচ ১৯৮৭ সালে শুরু হওয়া ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েল বিরোধী আন্দোলনের সময় থেকে জেনিন শহরে চলচ্চিত্রের নাম-গন্ধও নেই৷ তাছাড়া এই ছবিতে ফুটে উঠে ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি সংহতির বাণী৷ তাই স্থানীয় মতমোড়লদের বিরোধিতা ছিল সেখানে প্রামাণ্যচিত্রটি প্রদর্শনে৷ তবে পরিচালক ফেটার এবং ইসমাইল খতিবের প্রচেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ২০১০ সালে ছবিটি জেনিনে প্রদর্শিত হয়৷
জেনিনের সংস্কৃতি জগতকে চাঙ্গা করতে ফেটার ও খতিবের সাথে কাজ করছেন প্রায় একশ' জার্মান ও ফিলিস্তিনি তরুণ-তরুণী৷ প্রথম কাজের সাফল্যের পর এবার জেনিনের চলচ্চিত্র জগত নিয়ে আরেকটি ছবি করছেন ফেটার৷ এটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিনেমা জেনিন'৷ এই ছবিটিতে থাকা সংগীতগুলোর মধ্যে রয়েছে ইরানি সুরকার কাইহান কালোরের সৃষ্ট সুর-সংগীত৷ কালোরসহ মিশর, ইসরায়েল ও মার্কিন শিল্পীদের সংগীত নিয়ে শনিবার জার্মানির শহর ড্রেসডেনে আয়োজন করা হয়েছে সংগীত আসর ‘ড্রেসডেন সিম্ফনি অর্কেস্ট্রা'৷ সেখানে দেখানো হবে ‘সিনেমা জেনিন' এর কিছু বিশেষ দৃশ্য৷
পশ্চিম তীরের শহর জেনিনেও এমন সংগীত আসর আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে অর্কেস্ট্রার পরিচালক মারকুস রিন্ডট-এর৷ তবে সেজন্য নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির দিকে চেয়ে আছেন জার্মান আয়োজকরা৷
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন