এর্দোয়ানের বাকসর্বস্ব বক্তৃতা ভণ্ডামিপূর্ণ!
১৪ ডিসেম্বর ২০১৭তিনি আবার ফিরে এসেছেন৷ দুষ্ট, স্বৈরশাসক, অভদ্রলোক এবং চিরদিনের পলিটিক্যাল ক্যাম্পেইনার রেচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান৷ ইস্তান্বুলে ওআইসির সম্মেলন শুরুর আগে তুরস্কের এই প্রেসিডেন্ট তাঁর পুরনো খেলায় ফিরে গেছেন৷ ইসরায়েলকে তিনি ‘সন্ত্রাসী ও দখলদারী রাষ্ট্র' হিসেবে উল্লেখ করে ‘সব দেশের' প্রতি ‘জেরুসালেমকে দখলে থাকা ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি' দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷
ক্ষোভের পরিচিত প্রতিক্রিয়া
এর্দোয়ান ক্ষুব্ধ৷ এবং তিনি চান, এটা সবাই জানুক৷ মনে হচ্ছে মাঝে কিছুদিনের বিরতির পর তিনি আবার তাঁর ক্রোধপূর্ণ বক্তৃতা দেয়ার রীতিতে ফেরার জন্য প্রস্তুত৷ কয়েকমাস আগে তিনি জার্মানি ও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ‘নাৎসি পদ্ধতি' প্রয়োগের অভিযোগ এনেছিলেন৷ তবে এবার তিনি আবার তাঁর প্রিয় বিষয় ইসরায়েলের সমালোচনায় ফিরে গেছেন৷
জেরুসালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বীকৃতি দেয়ার ঘোষণায় এর্দোয়ান যে আসলেই ক্ষুব্ধ তা যে কেউ অনুমান করতে পারেন৷ ঐতিহাসিক এই শহর শুধু খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের কাছেই বিশেষ অর্থ বহন করে না, মুসলমানদের জন্যও তা সত্য৷
অন্যদিকে, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনা ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র' ও ‘শিশু হত্যাকারী'র সেই পুরনো অভিযোগ অনেকটা রোবটিক শোনায়৷ এবং যেভাবে মুখস্থ ও একঘেঁয়ে উপায়ে অভিযোগগুলো উচ্চারিত হয় তা শুনতে প্রায় বিরক্তিকর মনে হয়৷ তাছাড়া রাজনৈতিক বিবেচনায় তুরস্কের ইসরায়েলকে দায়ী করার বিষয়টি ভণ্ডামি মনে হয় এই কারণে যে, সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্ক ও ইসরায়েলের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ নিয়মিত হারে বাড়ছে৷
তারপরও ইহুদি রাষ্ট্রকে আক্রমণ করা থেকে এর্দোয়ান নিজেকে বিরত রাখছেন না৷ ২০০৯ সালে সুইজারল্যান্ডের ডাভোসে অনুষ্ঠিত বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে দেয়া তাঁর বক্তব্য ভোলার নয়৷ সেই সময় পাশে বসা ইসরায়েলের প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেজকে তিনি অপমান ও গালাগালি করেছিলেন৷ তাঁর সেই বক্তব্যের ভিডিও ইউটিউবে ৩০ লক্ষবারের বেশি দেখা হয়েছে৷
বিভক্ত মুসলিম বিশ্ব
ওআইসি সম্মেলনের আগে এর্দোয়ান বলেছিলেন, ‘‘সম্মেলনে আমরা পুরো মুসলিম বিশ্বকে এক করব৷'' কিন্তু সম্মেলন শুরুর সময় একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে, এর্দোয়ানের বক্তব্য ছিল একেবারে অর্থহীন৷ ওআইসির ৫৭ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০টি দেশ তাদের রাষ্ট্রপ্রধানকে সম্মেলনে পাঠিয়েছে৷ কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপকারী সৌদি জোটের দেশগুলো উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি পাঠিয়েছে৷
কাতার সংকটের পর আর কে মুসলিম বিশ্বের ‘ঐক্যের' বিষয়টি বিশ্বাস করবে? আঞ্চলিক দুই বড় শক্তি সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে সংঘাত ছাড়াও তুরস্কের ধর্মীয়-রক্ষণশীল নেতা ও মিশরের সামরিক নেতাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে৷
তবে এর্দোয়ান তাঁর নীতিতে ঠিক আছেন৷ তিনি ‘সবসময় শিরোনাম তৈরি করতে' চান৷ তাঁর বার্তা সবসময় স্পষ্ট ছিল, ওআইসির সম্মেলনেও তা বলবৎ আছে৷ আর তা হচ্ছে, ইসরায়েল একটি ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র', একটি ‘দখলদারী রাষ্ট্র' এবং....এবং....এবং...৷
ডানিয়েল হাইনরিশ/জেডএইচ
সংবাদভাষ্যটি আপনাদের কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷