রেয়াল থেকে বিদায় নিচ্ছেন মুরিনিও
২২ মে ২০১৩এ মরশুমে রেয়াল কোনো খেতাবই জিততে পারেনি৷ তার আগের দু'মরশুমেও যে মুরিনিও বিশেষ ভেলকি দেখাতে পেরেছেন, এমন নয় – ঐ একবার লা লিগার খেতাব জেতা ছাড়া, যদিও রেকর্ড পয়েন্টে৷ অথচ তাঁর মূল কর্তব্য তো ছিল রেয়ালকে তাদের দশম চ্যাম্পিয়নস লিগ খেতাব এনে দেওয়া৷ কাজেই তাঁর চুক্তির তিন বছর বাকি থাকতেই মুরিনিও-কে সানন্দে না হলেও, স্বেচ্ছায় যেতে দিচ্ছে রেয়াল মাদ্রিদ৷
ফ্যানদেরও তা-তে কোনো আপত্তি নেই৷ মুরিনিও তাদের কোনো প্রত্যাশাই পূর্ণ করতে পারেননি, তার ওপর আবার তাদের চটিয়েছেন খোদ ইকার কাসিয়াসকে দল থেকে বাদ দিয়ে৷ যে ইকার কাসিয়াস শুধু রেয়ালের ক্যাপ্টেনই নন, বরং স্পেনের যে জাতীয় দল একবার বিশ্বকাপ ও দু'বার ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছে, সেই দলের ক্যাপ্টেনও বটে৷ এছাড়া কাসিয়াসকে বাদ দিয়ে কোনো ফললাভ হয়নি৷ কাজেই ফ্যানদের ঊষ্মাও বোধগম্য৷
ঠোঁটকাটা
শুধু ফ্যানদেরই নয়, মুরিনিও স্প্যানিশ মিডিয়ার মন জয় করতে ব্যর্থ হয়েছেন৷ ঠোঁটকাটা মানুষ, নিজের সম্পর্কে ধারণাটা তাঁর চিরকালই উচ্চ৷ গতমাসে রেয়াল চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে বিদায় নেবার পর মুরিনিও একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন: ‘‘আমি জানি ইংল্যান্ডে লোকে আমাকে ভালোবাসে, ফ্যানরা আমাকে ভালোবাসে৷ মিডিয়া আমাকে ভালোবাসে, আমার প্রতি ন্যায্য ব্যবহার করে...আমি জানি কয়েকটি ক্লাব আমাকে ভালোবাসে, বিশেষ করে একটি৷''
‘‘স্পেনে পরিস্থিতি একটু অন্যরকম,'' বলেন মুরিনিও, ‘‘কেননা কিছু লোক আমাকে দেখতে পারে না৷ তাদের মধ্যে কয়েকজন এই ঘরেই আছে৷'' সদ্য সেমিফাইনালে হারা কোচের পক্ষে এ ধরনের মন্তব্য ফুটবল, ভদ্র আচরণ কিংবা সুবুদ্ধি, কোনো দৃষ্টিকোণ থেকেই সমীচিন নয়৷ মুরিনিও যেন জেনেশুনে স্প্যানিশ মিডিয়াকে প্ররোচিত করছেন৷
সব মিলিয়ে অ্যালেক্স ফার্গুসনের ম্যানচেস্টার ইউনাইডেট ছাড়ার সঙ্গে মুরিনিও-র রেয়াল ছাড়ার পার্থক্যটা চোখে পড়ার মতো৷ রেয়ালের সঙ্গে মুরিনিও-র চুক্তির আরো তিন বছর বাকি থাকতেই তাঁকে যেতে দেওয়া হচ্ছে, যদিও ক্ষতিপূরণ ছাড়া৷ রেয়ালের প্রেসিডেন্ট ফিওরেন্তিনো পেরেজ শুধুমাত্র বলেছেন: ‘‘স্পেনের একটি ফার্স্ট ডিভিশন ক্লাবে তিন বছর কাটানোটা খুব সহজ নয়....উনি যে সব কারণে যেতে চাইছেন, সেগুলো আমারও যুক্তিযুক্ত মনে হয়৷''
কে এই মুরিনিও?
মুরিনিও নিজে খেলোয়াড় হিসেবে বিশেষ আহামরি ছিলেন না৷ কোচ হিসেবে তাঁর কপাল ফেরে যখন ইংলিশ কোচ ববি রবসন পর্তুগালের স্পোর্টিং লিসাবন-এর দায়িত্ব নেন৷ তাঁর দোভাষী হিসেবে ডাক পড়ে জোসে মুরিনিও-র৷ রবসন-ই মুরিনিও-কে সঙ্গে করে এফসি পোর্তোতে নিয়ে যান৷ সেখান থেকে উভয়ে যান বার্সেলোনায়, ১৯৯৬-৯৭ সালের মরশুমে৷ পরে রবসন বার্সেলোনা ছাড়লেও মুরিনিও থেকে যান লুই ফ্যান খাল-এর সহকারী হিসেবে৷
তারপর পর্তুগালের উনিয়াও লেইরিয়া ও বেনফিকা হয়ে মুরিনিও ফেরেন পোর্তোয়, কোচ হিসেবে৷ কোচ হিসেবে তাঁর প্রথম বড় সাফল্যগুলোও এখানে৷ সেই সাফল্যের কারণেই মুরিনিও চেলসির মালিক অ্যাব্রামোভিচের নজরে পড়েন৷ ৫০ বছর পরে চেলসিআবার প্রিমিয়ার লিগের খেতাব জেতে৷ সেখান থেকে মুরিনিও-কে ইন্টার মিলান যেতে হয় ঐ অ্যাব্রামোভিচের সঙ্গেই ক্ষমতার লড়াইয়ের দরুণ৷ তাঁর পরিচালনায় ইন্টার পর পর দুটি ‘সিরিয়ে আ' খেতাব জেতে, এবং সবশেষে চ্যাম্পিনস লিগ৷ ইন্টার থেকে মুরিনিও যান রেয়াল মাদ্রিদে৷
মানুষ হিসেবে কিছুটা আত্মম্ভরি, নিজেকে ‘স্পেশাল ওয়ান' কিংবা ‘ওনলি ওয়ান' বলতে যার কোনো দ্বিধা হয় না৷ যিনি অনায়াসে বলেন যে, তাঁকে নিয়ে ছবি করা হলে নামভূমিকায় জর্জ ক্লুনিকে রাখলেই ভালো হবে – অন্তত মিসেস মুরিনিও নাকি তাই বলেন৷ জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ফুটবলেও সাফল্যের অবয়বটা সকলের ভালো লাগার কথা নয়৷
জোসে মুরিনিও-র মতো মানুষরা সেই অবয়ব৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)