1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘জয় যেন বাংলাদেশের হয়'

২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ডয়চে ভেলে বাংলা ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান ‘কেমন বাংলাদেশ দেখতে চাই'-এর প্রথম পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে৷  

https://p.dw.com/p/3AiW8
Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
ছবি: bdnews24.com

আলোচনায় অংশ নিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন, ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরী৷

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার শেষ দিনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বক্তারা নির্বাচন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন৷ 

আলোচনার শুরুতেই নূহ-উল-আলম লেনিন ও ডা. জাফরুল্লাহ যার যার অবস্থান থেকে মানুষ কেন তাঁদের দল বা জোটকে ভোট দেবে তার কারণ ব্যাখ্যা করেন৷  লেনিন বলেন, আওয়ামী লীগ সামগ্রিকভাবে উন্নয়নের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করেছে৷

Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সাবেক সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিনছবি: bdnews24.com

‘‘আমাদের দারিদ্র্যসীমার নীচে জনসংখ্যার হার ২০০৫-০৬ সালের ৪৫% থেকে নামিয়ে ২২%-এ আনা হয়েছে৷  অতি দরিদ্রের হার ১১%-এ নামানো হয়েছে৷  এগুলো আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং তা বাস্তবায়ন হয়েছে,'' বলেন লেনিন৷

ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী আওয়ামী লীগ সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি এই অভিযোগ এনে বলেন, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতেই ঐক্যফ্রন্টকে ভোট দেয়া উচিত৷

‘‘বঙ্গবন্ধুর মূল কথা ছিল গণতন্ত্র৷  কথা বলতে পারবে৷ সমালোচনা করতে পারবে৷  ওনার সমালোচনা করা যেতো৷ কিন্তু অবজ্ঞা করতেন না মানুষকে৷  অথচ এখন আওয়ামী লীগের লোকেরা মানুষকে অবজ্ঞা, হয়রানি করে,'' বলেন তিনি৷

<iframe src="https://www.facebook.com/plugins/video.php?href=https%3A%2F%2Fwww.facebook.com%2Fdw.bengali%2Fvideos%2F1785110204932044%2F&show_text=0&width=560" width="560" height="315" style="border:none;overflow:hidden" scrolling="no" frameborder="0" allowTransparency="true" allowFullScreen="true"></iframe>

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু জোর দেন ভোটকেন্দ্রে মানুষ যেন যেতে পারেন, তেমন শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরির দিকে৷

‘‘গত এক মাসের মতো এখনো পরিস্থিতি এমনই আছে যে, মানুষ ভাবছে সে কি শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট দিতে পারবে? আইন- শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি ভালো থাকবে? আমি কি ঐরকম একটা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে গিয়ে স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারব?''

Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু ছবি: bdnews24.com

সাইফুল আলম চৌধুরী মনে করেন, এক পক্ষ উন্নয়নের কথা বলছে,  অন্যপক্ষ গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার কথা বলছে৷  এই দুই পক্ষের মাঝে মানুষ আছে সংশয়ের মধ্যে৷‘‘উন্নয়ন আর গণতন্ত্র– একাদশ জাতীয় সংসদের ভোটারদের মধ্যে ‘ডিলেমা' তৈরি করেছে৷   ঐক্যফ্রন্ট ও বিএনপি বলছে,গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে তাদের ভোট দিতে হবে৷  কার কাছে গণতন্ত্র রক্ষার দায়িত্ব দেবো? ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে পেট্রোলবোমা হামলাকারী যুদ্ধাপরাধীদের কাছে দেবো? গণতন্ত্র অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন৷ রক্ষা কঠিনতম জায়গায় ফেলে দেবো? আর উন্নয়নের কথা বললে, যখন মানুষের অধিকার, মৌলিক কিছু অধিকার পাবো না, যখন দুর্নীতি হয় তখন কিন্তু মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন হয়৷ দু' দিকেই এক ধরনের বৈপরীত্য আছে,'' বলেন তিনি৷

তবে লেনিন মনে করেন উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একই ধারায় চলছে৷ তিনি বলেন, ‘‘ডেমোক্রেসি আর ডেভেল্পমেন্টের মধ্যে কোনো চীনের প্রাচীর নেই৷ দুটোকে এক করে দেখতে হবে৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জন করতে পারিনি৷  সামগ্রিকভাবে গণতন্ত্রের যে প্রাণপ্রতিষ্ঠা, তা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ করেছে৷ যেটুকু বাকি ছিল '৭২-এর সংবিধানে ফিরে গিয়ে তা প্রতিষ্ঠা করেছে,'' বলেন এই বর্ষীয়ান নেতা৷

তবে আওয়ামী লীগ যে উন্নয়নের কথা বলছে, তা কতটা গুণগত হয়েছে, তা দেখার অবকাশ আছে বলে মনে করেন সাইফুল আলম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যদি শিক্ষাখাত দেখি, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগের দশ বছরের চেয়ে বিগত দশ বছরে পরিমাণগত উন্নয়ন হয়েছে অনেক বেশি৷ কিন্তু আসলেই গুণগত উন্নয়ন হয়েছে কিনা তা দেখার অবকাশ আছে৷ সেটা অবশ্য একদিনেই বোঝা যাবে না৷'' 

Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সাইফুল আলম চৌধুরীছবি: bdnews24.com

 এদিকে বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্টের আলাদাভাবে ইশতাহার দেয়ার কারণ জানতে চাইলে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, বিএনপি কেন আলাদা ইশতাহার দিয়েছে তা তাঁর কাছে পরিষ্কার নয়৷ এমনকি  যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি তাদের ইশতাহারে না থাকায় অসন্তোষও প্রকাশ করেন তিনি৷

‘‘ঐক্যফ্রন্টের ইশতাহারে পরিষ্কারভাবে লেখা আছে যে, মানবতাবাদী অপরাধের বিচার অব্যাহত থাকবে৷ তবে সেটা অনন্তকাল নয়, এটাকে এক সময় শেষ করতে হবে৷ সেটা বিএনপি কেন তাদের ইশতাহারে রাখেনি, সেটা ভুল করেছে,'' বলেন জাফরুল্লাহ৷

তবে সরকারকেও এর জন্য দোষারোপ করেন তিনি৷

‘‘কোনো আলাপ আলোচনা করার আগে, যদি আমরা সময় পেতাম, তাহলে আলোচনা করতে পারতাম৷ যেমন আমাদেরটা আমরা তাদের দিয়েছি এক দিন আগে৷ এ কারণেই সময় চেয়েছিলাম৷ হয়তো এ কারণেই হয়েছে,'' মন্তব্য করেন তিনি৷

এদিকে ঐক্যপ্রক্রিয়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও পরে আশাভঙ্গ হয়েছে বলে জানান সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেন৷

Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীছবি: bdnews24.com

 

 ‘‘ঐক্যপ্রক্রিয়া ও ঐক্যফ্রন্ট গঠন এটি কামাল হোসেনেরএকটি সদর্থক রাজনৈতিক ভূমিকা, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার জন্য, গণতন্ত্রের প্রশ্নে সমাধানের ভূমিকা পালনের জন্য৷  তাঁদের মধ্যে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি ভূমিকা রেখেছেন, তাঁরা ১৫-২০ জন আলাদা প্লাটফর্মেই সংসদে যেতে পারতেন, তাহলে জামায়াতের ওপর বিএনপির যে নির্ভরশীলতা, বা এরশাদের ওপর আওয়ামী লীগের নির্ভরশীলতা, সেটি কমে যেত৷ আমরা একটা নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করতে পারতাম৷ সেদিনই আমার আশাভঙ্গ হলো, যেদিন সবাই এক প্রতীকে নির্বাচনে যেতে রাজি হলেন,'' বলেন তিনি৷

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে ডা. জাফরুল্লাহ সরকারি দলের পেশীশক্তি প্রয়োগের কারণে ঐক্যফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা প্রচারণা চালাতে পারছেন না বলে অভিযোগ তুললে পাল্টা প্রশ্ন তুলে লেনিন বলেন,  ঐক্যফ্রন্ট বা বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে আসছেন না৷

‘‘আমি পরশুদিন আমার এলাকায় গিয়েছিলাম৷  সেখানে তো তেমন কোনো ঘটনা ঘটে নাই৷  তাদের তো প্রতিটি ওয়ার্ড ইউনিয়নে নেতা-কর্মী আছেন৷ তাঁরা বেরুচ্ছেন না কেন? পোস্টার লাগাচ্ছেন না কেন?'' 

জবাবে জাফরুল্লাহ বলেন, ‘‘ধানমন্ডিতে কোনো পোস্টার নাই৷ যখন লাগাতে এসেছে, দাবড়িয়ে দিয়েছে, লাগাতে পারেনি৷ তফসিল ঘোষণার পর পরশুদিন পর্যন্ত গাজীপুরেই ২৬টি নতুন মামলায় ১২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে৷ কর্মী কোথায় পাওয়া যাবে?'' 

Bdnews-Deutsche Welle Talkshow
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলেছবি: bdnews24.com

সাংবাদিক মঞ্জুও মনে করেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হয়নি৷ ‘‘কোনো রকমেই প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য সমতলভূমি তৈরি হয়নি৷ এই নির্বাচনের যে বৈশিষ্ট্য, যা গত ১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত চারটি নির্বাচনে ছিল না, তা হলো, গত দশ বছরে একটি সরকার ক্ষমতায়৷  অভিযোগ আছে, আমাদের দেশে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রশাসনে দলীয়করণ যেহেতু একটি বড় ফ্যাক্টর, তাই সেটি বলবৎ আছে৷ এটি ভারসাম্যহীন,'' বলেন মোজাম্মেল হোসেন মঞ্জু৷

দুই নির্বাচন কমিশনের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আপেক্ষিক৷

‘‘কমিশনের মধ্যেই ডেমোক্রেসি আছে৷ তাঁরা সাংবিধানিক পদে আছেন৷ তার মানে, সেখানে ডেমোক্রেসি আছে৷ আবার নির্বাচন একটি মহাযজ্ঞ৷ এই নির্বাচন কমিশনে যদি ঐক্যমত্য না থাকে, তখন এই মহাযজ্ঞে নানা ধরনের অস্থিরতা থাকে৷ তা বিশেষ করে নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ৷ বাদানুবাদ এমন পর্যায়ে গেছে, যা অপ্রীতিকর,'' বলেন তিনি৷

এছাড়া পর্যবেক্ষক আশানুরূপ না হওয়ায়ও কিছুটা আশাহত হয়েছেন বক্তারা৷ সব মিলিয়ে তাঁরা দেখতে চেয়েছেন এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে মানুষ স্বস্তিতে ও শান্তিতে থাকবে, সহিংসতা বর্জিত নির্বাচনে ভোট দেবে এবং প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ হবে৷ আর ভোটে যেই জিতুক, জিতবে বাংলাদেশ৷

এ বিষয়ে আপনার মতামত লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷