ওয়াসার পানি পরীক্ষা করে না বিএসটিআই
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন’ বিএসটিআই-এর উপ-পরিচালক রিয়াজুল হক বলেন, ‘‘ওয়াসা তো প্রচুর মানুষকে পানি দিচ্ছে৷ এই পানি শুধু খাবার কাজে নয়, নানা ধরনের কাজে ব্যবহার হচ্ছে৷ এটা আমরা পরীক্ষা করিনি৷ কারণ পরীক্ষার পর যদি দেখা যায় এই পানির মান আমাদের স্ট্যান্ডার্ডের নীচে, তাহলে একটা ঝামেলা হবে৷''
তবে ওয়াসার পানি পরীক্ষা করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয় বলে জানান বিএসটিআই কর্মকর্তা রিয়াজুল হক৷ ‘‘আমাদের কাজ বোতল ও জারের পানি নিয়ে,'' বলেন তিনি৷
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, নগরাঞ্চলে পাইপলাইনে সরবরাহ করা ৮২ শতাংশ পানিতে ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়ার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি৷ ওই প্রতিবেদনের পর নভেম্বরে উচ্চ আদালতে একটি রিট করা হয়৷
ওই রিটের পর ঢাকা মহানগরীর ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন হাইকোর্ট৷ পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে পানি পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশও দেয়া হয়৷ চলতি মাসেই সেই প্রতিবেদন দেয়ার কথা থাকলেও কমিটি আবারও সময় নিয়েছে৷
রিটকারীর আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেছেন, প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে, আসলে ওয়াসার পানিতে ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া আছে কি-না?
বিশ্বব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষ অপরিচ্ছন্ন এবং অনিরাপদ উৎসের পানি পান করছে৷ পানির নিরাপদ উৎসগুলোর ৪১ শতাংশই ক্ষতিকারক ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়াযুক্ত এবং ১৩ শতাংশে রয়েছে আর্সেনিক৷ পাইপলাইনের পানির ৮২ শতাংশেই রয়েছে ই-কোলাই৷ ৩৮ শতাংশ টিউবওয়েলের পানিতে পাওয়া গেছে এই ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া, আছে আর্সেনিকও৷
স্বাস্থ্যের কী ক্ষতি হতে পারে?
ই-কোলাইসহ নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি পান করলে কী ধরনের রোগ হতে পারে? জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডীন অধ্যাপক ডা. এ বি এম আব্দুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শুধু ই-কোলাই নয়, যে কোনো ধরনের ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি পান করলে পেটের সমস্যা হতে পারে৷ পাতলা পায়খানা, বমিসহ নানা ধরনের সমস্যা হয়৷''
দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমস্যা হয় কি-না? জবাবে তিনি বলেন, ‘‘যে রোগগুলো হয় সেগুলো নিরাময় উপযোগী৷ আপনি চিকিৎসা নিলে সুস্থ হয়ে উঠবেন৷ তবে পানি ফুটিয়ে খেলে সব ধরনের ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করা সম্ভব৷ তাই আমার পরামর্শ, পানি টগবগ করে ফুটিয়ে নিয়ে তারপর পান করুন৷ তাহলে এই ধরনের রোগব্যাধি থেকে মুক্তি সম্ভব৷''
বিএসটিআই-এর কাজ
পানির মান দেখতে বিএসটিআই কী ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে? জানতে চাইলে রিয়াজুল হক বলেন, ‘‘সারা দেশে বোতলজাত ও জারের পানি বিক্রির জন্য ১৭০টির মতো প্রতিষ্ঠান আমাদের কাছ থেকে লাইসেন্স নিয়েছে৷ আমরা নিয়মিত তাদের পানি বাজার থেকে এনে পরীক্ষা করি৷ সেখানে কারো পানির মান অনুমোদিত সীমার চেয়ে নীচে নেমে গেলে তাদের লাইসেন্সও বাতিল করা হয়৷ এটা বিএসটিআই-এর প্রতিদিনকার কাজ৷ কিন্তু অনুমোদনহীন অনেক প্রতিষ্ঠান পানি বিক্রি করছে৷ গত এক সপ্তাহে এমন ৪০ হাজার পানির জার ধ্বংস করা হয়েছে৷ এগুলোর মান একেবারেই নিম্নমানের৷''
লাইসেন্স বাতিল
‘প্রতারণার নাম বোতলজাত পানি' এই শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে উচ্চ আদালতে রিট করেছিলেন শাম্মী আক্তার নামে একজন নারী৷ তাঁর রিটের উপর ভিত্তি করে আদালত বিএসটিআইকে প্রতিবেদন দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন৷
এরপর বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশন বিএসটিআই পরীক্ষার জন্য বাজার থেকে ২৮টি পানির নমুনা সংগ্রহ করে বলে জানান শাম্মী আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জে আর খান রবিন৷ ‘‘এর মধ্যে ২২টির প্রতিবেদনের মধ্যে ১২টি মানসম্মত এবং ১০টি নিম্নমানের৷ এই ১০টিকে শো'কজের পর তিনটি কোম্পানি জবাব দেয়নি৷ তাই তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে৷ বাকি সাতটি শো'কজের জবাব দিয়ে মানোন্নয়নের জন্য সময় চেয়েছে৷ এ কারণে তাদের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে৷ এছাড়া লাইসেন্স না থাকায় ৩৬ কারখানার উৎপাদন বন্ধ করা হয়েছে৷''