ঝিঁঝিঁপোকার যৌন জীবন
৭ জুন ২০১০খেয়ালই বটে৷ ব্রিটেনের এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানীরা উত্তর স্পেনের আস্তুরিয়াসের একটি মাঠে ১৫২টি ঝিঁঝিঁপোকা পর্যবেক্ষণ করেছেন৷ অবশ্য তাদের মেঠো ঝিঁঝিঁপোকা না বলে, গ্রিলাস কাম্পেস্ট্রিস বলাই উচিৎ৷ দ্বিতীয়ত, তাদের পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে ৯৬টি ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোন দিয়ে, যা'তে ঝিঁঝিঁপোকারা নড়লে-চড়লে কিংবা কোনো রকমের আওয়াজ করলেই তা রেকর্ড করা হবে৷ প্রত্যেক ঝিঁঝিঁপোকার পীঠে আবার একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্ল্যাকার্ড লাগানো হয়েছে, যা একমাত্র ক্যামেরার চোখে পড়বে৷ এছাড়া প্রত্যেক ঝিঁঝিঁপোকার ডিএনএ'র নমুনা নেওয়া হয়েছে, যা'তে তাকে এবং তার ভবিষ্যৎ সন্তান-সন্ততিদের সনাক্ত করা যায়৷
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য
ক্যামেরার ফুটেজ দেখেই বিজ্ঞানীরা বুঝেছেন, ঝিঁঝিঁপোকাদের কার্যকলাপ সম্প্রচার করলে সেন্সর বোর্ডের কোপে পড়তে হবে৷ তবে সাধারণ কিছু তথ্য পরিবেশন করা চলতে পারে৷ যেমন ঝিঁঝিঁপোকারা যে শুধু গান গেয়েই স্ত্রী ঝিঁঝিঁপোকাদের আকৃষ্ট করে, শুধু তা নয় - তারা রীতিমতো ‘‘যৌন শিকারে'' বার হয়৷ দম্পতিদের একযোগে ৪০ বার সহবাস খুবই স্বাভাবিক৷ আবার স্ত্রী ঝিঁঝিঁপোকারা তারই ফাঁকে আশপাশের পুরুষদের সঙ্গে চটজলদি সহবাস করে আসে৷
বংশবৃদ্ধি
স্ত্রী ঝিঁঝিঁপোকারা ডিমগুলো মাটির ভিতরে ঢুকিয়ে দেয়৷ এবং স্থানটির ও ডিমগুলির সুরক্ষার জন্য রীতিমতো যুদ্ধ করে থাকে৷ সকলেই গ্রীষ্ম অবধি শত শত ডিম পাড়ে, কিন্তু সবচেয়ে সফল স্ত্রী'দেরও গোটা কয়েক ছানা ছাড়া আর কিছু বাঁচে না৷ আর পুরুষ ঝিঁঝিঁপোকাদের তো কথাই নেই, তাদের অধিকাংশই কোনো ছানাপোনা রেখে যেতে পারে না৷
‘সে ইট উইথ মিউজিক'
গত শুক্রবারের ‘‘সায়েন্স'' সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে অপর একটি দিকও চোখে পড়ার মতো: পুরুষ ঝিঁঝিঁপোকাদের স্ত্রী'দের আকর্ষণ করার ক্ষমতার সঙ্গে তদের প্রজনন ক্ষমতার কোনো সম্পর্ক নেই৷ অপরদিকে দাপটশালী পুরুষদের যতো ছানাপোনা হয়, যে সব পুরুষরা নিয়মিত দ্বন্দ্বযুদ্ধে হারে, তাদেরও ঠিক ততোটাই হয়৷ আবার যে সব পুরুষরা বেশীক্ষণ ধরে ‘‘গান গায়'', তারা বেশী সঙ্গিনী পায় বটে, সাইজে ছোট ঝিঁঝিঁপোকাদের কিন্তু বেশী সন্তান অর্জনের জন্যই গান গাইতে হয়৷ বড়মাপের ঝিঁঝিঁপোকাগুলোর অতো ভালো গান না গাইলেও চলে৷
এক্সেটারের জীববিজ্ঞানী টম ট্রেগেঞ্জা একে একদিকে বলেছেন, ঝিঁঝিঁপোকাদের সোপ অপেরা, অন্যদিকে ডারউইনীয় ‘‘ন্যাচারাল সিলেকশন'' বা ‘প্রকৃতির বাছাই'৷ দুটো'ই হয়তো ঠিক৷
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম