টাইটানিক ট্র্যাজেডি
১৫ এপ্রিল ২০১২এই দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ১,৫১৩ জনের৷ জাহাজটি ব্রিটেনের সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিল৷
এই শত বছরে জাহাজডুবির আরও অনেক ঘটনাই ঘটেছে৷ কিন্তু টাইটানিকের মতো কোনোটাই এতটা আলোড়ন তুলতে পারেনি৷
এই এক জাহাজকে নিয়ে কত যে গান, কবিতা আর বই লেখা হয়েছে তার কোনো ইয়ত্তা নেই৷ হলিউডে হয়েছে ব্লকবাস্টার ছবিও৷
যেবছর টাইটানিক ডোবে সে বছরই কয়েকটি বই প্রকাশ পায়৷ এরপর পঞ্চাশের দশকে টাইটানিককে নিয়ে বানানো হয় ‘এ নাইট টু রিমেম্বার' নামের একটি ছবি৷ সেসময় একটি বই'ও বের হয়েছিল৷
এরপর আবার টাইটানিক নিয়ে আলোচনা হয় আশির দশকে, যখন ১৯৮৫ সালে আটলান্টিকের তলদেশে টাইটানিকের খোঁজ পাওয়া যায়৷ আর ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় জেমস ক্যামেরনের ‘টাইটানিক' ছবিটি৷ শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ছবিটি এবার থ্রিডি'তে মুক্তি দেয়া হয়েছে৷
কিন্তু টাইটানিককে নিয়ে কেন এত মাতামাতি? এই বিষয়টা নিয়ে কয়েকটা বই লিখে ফেলেছেন অধ্যাপক জন উইলসন ফস্টার৷ তিনি বলছেন, কারণ অনেক৷ যেমন, যে সময় টাইটানিক ডোবে তখন সেটাই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ৷ এছাড়া যাত্রী তালিকায় ছিল পৃথিবীর অনেক বড় বড় ধনীর নাম৷ ছিলেন পেইন্টার, লেখক, ফ্যাশন ডিজাইনার থেকে শুরু করে অভিনেতারাও৷
উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্ট শহরের একটি কারখানায় টাইটানিকটি তৈরি হয়েছিল৷ ট্র্যাজেডির শত বছর উপলক্ষ্যে সেখানে একটি জাদুঘর খোলা হয়েছে৷ টাইটানিকের সঙ্গে বেলফাস্টের নাম জড়িয়ে থাকায় সেখানকার অধিবাসীদের কাছে দুর্ঘটনাটা কিছুটা কলঙ্কের বটে৷ নতুন উদ্বোধন করা এই জাদুঘরটি সেই কলঙ্ক থেকে তাদের মুক্তি দেবে বলে আশা বেলফাস্টবাসীর৷
এদিকে, টাইটানিকের যাত্রীদের ব্যবহার করা বিভিন্ন জিনিসপত্রের নিলামের ব্যবস্থা করা হয়েছে নিউ ইয়র্কে৷ প্রায় পাঁচ হাজার জিনিসের মধ্যে রয়েছে পারফিউম, শেভিং ক্রিম, অলঙ্কার ইত্যাদি৷ সব মিলিয়ে এগুলোর মূল্য হতে পারে প্রায় ১৯০ মিলিয়ন ডলার বা দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি৷
আর হবেই বা না কেন? ২০০৮ সালে এক ক্রেতা ৫৫ হাজার ডলার বা প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা দিয়ে ডুবে যাওয়া টাইটানিকের একটি টিকিট কিনেছিলেন৷ ২০১০ সালে আশি হাজার ডলার বা প্রায় ৬৬ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি চিঠি কিনেছিলেন আরেক ক্রেতা৷ চিঠিটি টাইটানিকে বসে লেখা হয়েছিল৷
এবার টাইটানিক জাহাজ সম্পর্কে কিছু তথ্য৷ ২৬৯ মিটার লম্বা, ২৮ মিটার চওড়া আর ৫৩ মিটার উঁচু টাইটানিক তৈরিতে খরচ হয়েছিল ১০ মিলিয়ন ডলার৷ বর্তমানের হিসেবে সেটা প্রায় ২১৩ মিলিয়ন ডলারের সমান৷ প্রস্তুতকারক কোম্পানি জাহাজে কোনো অ্যালার্ম সিস্টেম রাখেন নি, কারণ টাইটানিক কখনো ডুববে না এমনটা ধরে নেয়া হয়েছিল৷
টাইটানিকের প্রথম শ্রেণির টিকিটের মূল্য ছিল তখনকার দিনে ৪৪০০ ডলার৷ এখনকার দিনে যেটা প্রায় ৭৬ লক্ষ টাকার সমান৷ টাইটানিকে ছিল না কোনো টেলিস্কোপ৷ ফলে যেসব নাবিক জাহাজ চলার পথে নজর রাখছিলেন তারা আইসবার্গকে অনেক পরে দেখতে পান৷ এছাড়া একই পথ দিয়ে যাওয়া আগের জাহাজগুলো থেকে আইসবার্গ থাকা প্রসঙ্গে টাইটানিকে খবর পাঠানো হলেও বাড়তি নজরদারির জন্য টাইটানিকের ক্যাপ্টেন কোনো ব্যবস্থা নেননি৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক (ডিপিএ)
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম