টিভি ক্যামেরার সামনে ট্রুডোকে তিরস্কার শি জিনপিংয়ের
১৭ নভেম্বর ২০২২ক্যানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কোনোরকম রাখঢাক না করে শি জিনপিংবলেছেন, তাদের দুজনের বৈঠকের সব খবর কী করে মিডিয়াতে চলে এলো? জি২০ বৈঠকের ফাঁকে ট্রুডো ও শি-র কথপোকথন ধরা রইলো টিভি-র চিত্রসাংবাদিকদের ক্যামেরায়।
চীনা প্রেসিডেন্ট উত্তেজিত হয়ে অন্য এক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানকে কিছু বলছেন, এই ঘটনা বিরল। সাধারণত তিনি খুবই সংযত ব্যবহার করেন।
কিন্তু ক্যানাডার মিডিয়াতে এই ভিডিও সম্প্রচার করা হয়েছে এবং সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, শি জিনপিং রীতিমতো অভিযোগের সুরে ট্রুডোকে বলছেন, তিনি তাদের আগের বৈঠকের কথা মিডিয়াতে ফাঁস করেছেন। এটা ঠিক নয়।
দুই দেশের সম্পর্ক এখন খুব একটা মধুর নয়। এই অবস্থায় এই ধরনের ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো তিক্ত করতে পারে।
গত সোমবারই ক্যানাডার কর্তৃপক্ষ একটি সংস্থার এক কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে কিছু বাণিজ্যিক গোপন তথ্য চীনে পাঠাবার চেষ্টা করছিল।
কী হয়েছিল?
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ট্রুডো ও শি জিনপিং কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দুইজনের মধ্যে আছেন একজন ইন্টারপ্রেটার।
শি-র কথা অনুবাদ করে ইন্টারপ্রেটার বললেন, ''আমাদের আলোচনার সবকিছু একটা কাগজে লিক হয়ে গেছে। এটা ঠিক হয়নি। এভাবে কোনো আলোচনা করা যায় না। যদি আপনার দিক থেকে আন্তরিকতার অভাব থাকে তাহলে...।'' এই অবস্থায় ট্রুডো ইন্টারপ্রেটারকে থামিয়ে বলেন, ''ক্যানাডায় আমরা মুক্ত ও খোলামেলা আলোচনায় বিশ্বাস করি। আমরা সেভাবেই চলব। আমরা দুই জনে গঠনমূলক কাজ করব। কিন্তু কিছু বিষয়ে আমাদের মতান্তর হতেই পারে।''
এর জবাবে শি বলেন, ''প্রথমে আলোচনার পরিবেশ তৈরি করা দরকার।'' এই বলে ট্রুডোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলে যান শি।
বৈঠকে কী হয়েছিল?
এই বৈঠক নিয়ে ক্যানাডা সরকারিভাবে কোনো কথা বলেনি। মঙ্গলবার বালিতে ১০ মিনিট ধরে বৈঠক হয়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সরকারি মিডিয়াও কিছু জানায়নি। কারণ এটা কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছিল না।
পরে ট্রুডো সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ''প্রতিটি আলাপচারিতা কখনই মসৃন হয় না। কিন্তু সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো, আমাদের আলোচনা করে যেতে হবে। ক্যানাডার মানুষের জন্য যা জরুরি, তার পক্ষে আমাদের দাঁড়াতেই হবে।''
দুইজনের মধ্যে বৈঠকে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ, উত্তর কোরিয়া ও পরিবেশ নিয়ে কথা হয়েছে। ক্যানাডার এক কর্মকর্তা সংবাদসংস্থা এপি-কে জানিয়েছেন, ট্রুডো ক্যানাডার অভ্যন্তরীণ ঘটনায় চীনের হস্তক্ষেপ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন।
শি-র আচরণ নিয়ে
চীনে ক্যানাডার সাবেক রাষ্ট্রদূত গাই সেইন্ট বলেছেন, ''শি-র ব্যবহার স্বাভাবিক ছিল ন।'' তিনি মনে করেন, ক্যামেরার সামনে ইচ্ছাকৃতভাবে শি এই আচরণ করেছেন। ক্যানাডার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক কতটা তিক্ত তা এর থেকে বোঝা যাচ্ছে।
২০১৮ সালে চীনা সংস্থার কর্মকর্তা মেং ওয়াংঝাউকে ক্যানাডা আটক করে। তারপর বেজিং দুইজন ক্যানাডার নাগরিককে চরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে। তিনজনকেই গত বছর মুক্তি দেয়া হয়েছে। কিন্তু চীন ও ক্যানাডার মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক খুবই খারাপ জায়গায় চলে গেছে।
জিএইচ/এসজি(এপি, এএফপি, রয়টার্স)