রাজনীতির হাতিয়ার টুইটার
২৭ মে ২০১৪ভারতের সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো, বিশেষ করে টুইটার রাজনীতিবিদ এবং প্রচার মাধ্যমগুলোর কাছে ‘অতি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার’ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে৷ যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টুইটার ইনকর্পোরেটেড জানিয়েছে, ভারতে ব্যবহৃত কৌশলগুলো অন্যান্য দেশের নির্বাচনেও কাজে লাগাবে তারা৷
সামাজিক যোগাযোগের আরেক জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকও এর আগে একই ধরনের ঘোষণা দিয়েছিল৷
বলা হচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনে মোদীর দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার গতিশীল এবং চমকপ্রদ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷ চলতি বছর ভারতীয় টুইটারে নির্বাচন সংক্রান্ত টুইট হয়েছে ৫ কোটি ৮০ লাখের বেশি৷ এর মধ্যে ১ কোটি ১৮ লাখ টুইট হয়েছে সরাসরি নরেন্দ্র মোদীর অফিশিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে৷
কেবল মোদী বা বিজেপি নয়, সব রাজনৈতিক দলকে নিয়েই নির্বাচনের আগে ঘনিষ্টভাবে কাজ করেছে টুইটার৷ অনলাইন ও অফলাইনে নিয়মিত টুইট করার সুবিধা দিতে বিভিন্ন মোবাইল ফোন কোম্পানির সঙ্গেও যৌথভাবে কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি৷
টুইটার বলছে, ভারতের নির্বাচনে যে টুলগুলো তারা ব্যবহার করতে দিয়েছে, সেগুলো ব্রাজিল, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনেও থাকবে৷ এর মধ্য দিয়ে টুইটারকে আরো বেশি মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়াই তাদের লক্ষ্য৷
ভারতে টুইটারের মার্কেট ডাইরেক্টর ঋষি জেটলি বলেন, ‘‘টুইটার কতটা ‘ভ্যালু অ্যাড’ করতে পারে তা দেখার জন্য নির্বাচন সবচেয়ে ভালো সময়৷ ভারতীয় নির্বাচনে আমরা যা শিখেছি, তা পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাই৷’’
ব্রাজিলের আইন প্রণেতাদের কাছে সোশ্যাল মিডিয়ার সম্ভাবনা আর গুরুত্ব তুলে ধরতে গত সপ্তাহেই ল্যাটিন অ্যামেরিকার এই দেশটিতে উড়াল দিয়েছেন টুইটারের ‘শীর্ষ রাজনৈতিক কৌশলবিদ’৷ ভারতের মতো ব্রাজিলেও এবার রাজনীতিবিদরা ভোটের লড়াইয়ে ব্যবহার করবেন ৬ সেকেন্ডের ভিডিও অ্যাপ ‘ভাইন’৷
চলতি বছরের শেষ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভারতের মতোই ‘টুইট টু রিমেম্বার’ ফিচারটি ব্যবহার করতে পারবেন ভোটাররা৷ এই ফিচারের মাধ্যমে একটি টুইট করলেই ব্যবহারকারীদের মোবাইল ফোনের ক্যালেন্ডারে ভোটের তারিখটি যুক্ত হয়ে যাবে৷
রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে টুইটার প্রথমবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে শুরু করে ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময়৷ এরপর আরব বসন্ত হিসাবে পরিচিতি পাওয়া গণজাগরণের দিনগুলোতে টুইটার ব্যবহার হয় আন্দোলন সংগঠিত করার গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসাবে৷
‘ফলোয়ার’, অর্থাৎ অনুসরণকারীর সংখ্যার বিচারে রাজনীতিবিদদের মধ্যে টুইটারে সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ তাঁর টুইট অনুসরণ করেন ৪ কোটি ৩২ লাখ ব্যবহারকারী৷ আর টুইটারে দ্রুত জনপ্রিয় হতে থাকা নরেন্দ্র মোদীর অনুসরণকারীর সংখ্যা ৪৩ লাখ ৯০ হাজার৷
গত ১৬ই মে ভারতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মোবাইল ফোনে মায়ের সঙ্গে নিজের তোলা যে ছবি মোদী টুইট করেছিলেন, সেটি ভারতীয় টুইটারের ইতিহাসে রেকর্ড সংখ্যকবার রিটুইট হয়েছে৷
ভারতের জনসংখ্যার দুই তৃতীয়াংশের বয়স বর্তমানে ৩৫ এর কম৷ নির্বাচনের আগে মোদি ভালভাবেই বুঝেছিলেন যে, ভোটে জয় পেতে হলে এই তরুণ জনগোষ্ঠীকেই তাঁর জয় করতে হবে৷ এই যুদ্ধে মোবাইল ফোনের ভয়েস কল থেকে শুরু করে হলোগ্রাম, ফেইসবুক, টুইটার- সবই তিনি ব্যবহার করেছেন৷
ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ২৩ কোটি ৯০ লাখ৷ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন ৯০ কোটির বেশি ভারতীয়৷ আর টুইটার অ্যাকাউন্ট আছে এমন ভারতীয়র সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ৷
ভারতীয় রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে যাঁরা টুইটারে যোগ দিয়েছিলেন, কংগ্রেস নেতা শশী থারুর তাঁদের অন্যতম৷ টুইটারে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা ২০ লাখের বেশি৷ কয়েক বছর আগে তিনি যখন রাহুল গান্ধীকে টুইটারে যোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন, রাহুল তা আমলে নেননি৷
নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবির পর এর দায়দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিয়েছেন রাহুল৷ আর আগামীর জন্য কংগ্রেসকে প্রস্তুত করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেদের অবস্থান শক্ত করার জন্য আবারো শীর্ষ নেতৃত্বকে পরামর্শ দিয়েছে শশী থারুর৷
তিনি বলেছেন, ‘‘এভাবে বিজেপিকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার কোনো অর্থ হয় না৷ এটা এমন এক জায়গা, যেখানে আমরাও একই রকম ভালো ফল দেখাতে পারতাম৷’’
জেকে/ডিজি (রয়টার্স, এপি)