টেলিমেডিসিনের সুবিধা ও ঝুঁকি
২৮ ডিসেম্বর ২০১৩তবে চিকিৎসকরা বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা সারা দেশে কীভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন সেব্যাপারে এই সংখ্যা থেকে কিছু বলা যায় না৷ ‘দ্য জার্মান সোসাইটি ফর টেলিমেডিসিন' এর প্রধান ভল্ফগাং লোস এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘আমাদের গ্রামাঞ্চলে অবস্থাটা এইরকম যে, কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখাতে হলে মাঝে মাঝে গোটা এক দিন লেগে যায়৷ এই সমস্যার একটা সুরাহার প্রয়োজন৷ এক্ষেত্রে টেলিমেডিসিন বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে৷''
টেলিমেডিসিন জায়গা করে নিয়েছে
স্ট্রোক রোগীদের ক্ষেত্রে জার্মানিতে টেলিমেডিসিন অনেক দিন আগেই জায়গা করে নিয়েছে৷ ছোট ছোট ক্লিনিকগুলি বড় ক্লিনিকের সঙ্গে নেটওয়ার্ক চালিয়ে যায়৷ প্রয়োজন হলে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করতে পারে৷ হার্টের ক্রনিক রোগীদের জন্যও টেলিমেডিসিন ভবিষ্যতের কোনো বিষয় নয়৷ বর্তমানেও এই পদ্ধতিকে কাজে লাগানো হচ্ছে৷ অবশ্য জার্মানিতে টেলিমেডিসিন ব্যবহার করার সুযোগটা সীমিত৷
আইনত ডাক্তাররা কোনো রোগীকে আগে থেকে না দেখে বা চিকিৎসা না করে রোগ শনাক্ত করতে পারেন না৷ টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রেও একথা প্রযোজ্য৷ সুইজারল্যান্ডে দূর থেকে রোগ শনাক্ত করার ব্যাপারে আইনটা তত কঠোর নয়৷ বাসেলের ‘সুইস সেন্টার ফর টেলিমেডিসিন মেডগেট'এ রোগীরা টেলিফোনের মাধ্যমে ডাক্তারি পরামর্শ নিতে পারেন প্রয়োজন হলে প্রেসক্রিপশনও পেতে পারেন৷
মেডগেট প্রতিষ্ঠানটিতে টেলিমেডিসিন বলতে টেলিফোনে মেডিসিন বোঝা হয়৷ ‘‘আমরা টেলিমেডিসিন বলতে যা বুঝি তার সঙ্গে খুব কম মিলই আছে এটির,'' বলেন ফ্রানৎস বার্টমান৷ তিনি জার্মানিতে টেলিমেডিসিনের ক্ষেত্রে কড়াকড়ি শিথিল করার সুপারিশ করেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘তবে ডাক্তার ও রোগীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ হওয়াটা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপরিহার্য৷''
জার্মান রোগীরা সরাসরি কথা বলতে অভ্যস্ত
জার্মানিতে রোগীরা ডাক্তারের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে অভ্যস্ত৷ এজন্য টেলিমেডিসিন মানুষের ‘পালসটা' ঠিকমত ধরতে পারেনি৷ এছাড়া জার্মানির মতো উন্নত দেশেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে কারিগরি দুর্বলতা রয়ে গেছে৷ বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের গতি বাড়ানোর কাজটাও চলছে শ্লথ গতিতে৷ তাই এই সব জায়গায় ভিডিও কনফারেন্স ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে রোগীদের তথ্যাবলী পাঠানের কথা চিন্তা করা যায় না৷ জার্মান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে পল্লি অঞ্চলেই টেলিমেডিসিনের প্রয়োজন বেশি৷
অন্যান্য দেশকেও সম্পৃক্ত করা হয়েছে
টেলিমেডিসিন এখন বিশ্বের অন্যান্য দেশকেও সম্পৃক্ত করেছে৷ যেমন ফ্রাঙ্কফুর্টের একটি হাসপাতাল ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সুলতানশাসিত রাষ্ট্র ব্রুনাইয়ের একটি ক্লিনিকের সঙ্গে সহযোগিতামূলক কাজকর্ম চলছে৷ জার্মান ডাক্তাররা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এশিয়ার সহকর্মীদের সহায়তা করছেন৷ এছাড়া জার্মানির সহায়তায় আরেকটি টেলিমেডিসিন প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে ভিয়েতনামে৷ এই প্রকল্পের আওতায় গ্রামাঞ্চলের হাসপাতালগুলির সাথে হ্যানয়ের কেন্দ্রীয় হাসপাতালের টেলিমেডিসিনের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হবে৷
বাংলাদেশেও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে
বাংলাদেশেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ধীরে ধীরে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা ব্যবস্থা জনপ্রিয় হচ্ছে৷ ইতোমধ্যেই কিছু হাসপাতাল মোবাইল ফোন বা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া শুরু করেছে৷ এতে টেলিফোন বা স্কাইপের মাধ্যমে রোগী ও ডাক্তার পরস্পরের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন৷ রোগবিষয়ক তথ্যাবলী ওয়েব ক্যামেরা বা ইমেইলের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়৷ এইভাবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষজন বিশেষভাব উপকৃত হতে পারেন৷ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর জন্য রাজধানীতে যাওয়ার প্রয়োজনটা কমে যাবে৷ অচিরেই তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক এই চিকিৎসা আরো সম্প্রসারিত করা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন৷