ট্যাক্সি! ট্যাক্সি!
২১ অক্টোবর ২০১৪বার্লিনে বাস করেন মোট ৩৫ লাখ মানুষ, কিন্তু এখানে এত বেশি ট্যাক্সি চলার সেটাই একমাত্র কারণ নয়৷ যেমন পর্যটন, তেমনই ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল এই বার্লিন৷ এ শহরে ট্যাক্সির সংখ্যা: প্রায় সাত হাজার ছ'শো৷
মার্টিন ডল গত ২৪ বছর ধরে বার্লিনে ট্যাক্সি চালাচ্ছেন৷ গোড়ায় ছিলেন ছাত্র, খরচ চালানোর জন্য ট্যাক্সি চালাতেন৷ পরে সেই ট্যাক্সি চালানোই তাঁর মূল পেশা হয়ে দাঁড়ায়৷ আজ তাঁর ট্যাক্সি চলে বার্লিন ও তার আশেপাশের প্রায় ৯০০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে৷ মার্টিন বলেন:
‘‘শহরটা এত বড় বলেই হয়ত আমি সপ্তাহের পর সপ্তাহ, এমনকি মাস-দু'মাস ধরে শহরের কোনো কোনো অংশে ঢুকি না৷ ট্যাক্সিচালক হিসেবে প্রতিবারই আমি আশ্চর্য হই যে, বার্লিনে কতো কিছু বদলে গেছে৷ বার্লিনে তো সর্বত্র কনস্ট্রাকশন চলেছে: সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে হয়তো কোথাও রাস্তা বন্ধ ছিল৷ হঠাৎ দেখি সেখানে সব ব্যারিয়ার সরিয়ে ফেলা হয়েছে আর সে জায়গায় কোনো নতুন বাড়ি কিংবা ব্রিজ কিংবা শপিং সেন্টার গড়ে উঠেছে৷''
ক্রিম-কলর্ড মার্সিডিজ
১২০ বছর ধরে জার্মানিতে ট্যাক্সি চলছে৷ গোড়ায় ট্যাক্সির রং ছিল কালো, বলতে কি বহু দশক ধরে৷ ১৯৭১ সাল যাবৎ নিয়ম করে দেওয়া হয়েছে যে, ট্যাক্সির রং হতে হবে ‘‘গজদন্তের মতো'' হলুদ-সাদা৷ বহুকাল ধরে জার্মানিতে ট্যাক্সি মাত্রেই ছিল মার্সিডিজ, কিন্তু আজকাল নানা মডেলের ট্যাক্সি দেখতে পাওয়া যায়৷
বার্লিনে ট্যাক্সির ভাড়া তুলনামূলকভাবে বেশি নয়৷ ২০ মিনিটে দশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে ভাড়া ওঠে ২০ ইউরো মতন৷ কাজেই ট্যাক্সি চালিয়ে ভালোভাবে বাঁচতে হলে মার্টিন ডল-এর মতো নিজের ট্যাক্সি থাকা চাই৷ মার্টিনের ভাষ্যে:
‘‘শুনেছি নাকি এমন ট্যাক্সিচালক আছেন, যাঁরা ঘণ্টায় চার থেকে আট ইউরো রোজগার করেন, যা কিনা সরকারি ন্যূনতম মজুরি থেকেও কম৷ আমি নিজের ট্যাক্সি চালাই যতক্ষণ খুশি – কিন্তু তা সপ্তাহে ৬০ ঘণ্টা বা তারও বেশি হয়ে দাঁড়াতে পারে৷''
যা টুরিস্ট গাইডে নেই
বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর পটসডামার প্লাৎস চত্বরটিকে নতুন করে সাজান ইটালির স্থপতি রেনসো পিয়ানো৷ চত্বরটি পর্যটকদের কাছে একটি দর্শনীয় বস্তু৷ মার্টিন ডল-কেও বারংবার এই প্রশ্ন শুনতে হয়, তিনি বার্লিনে দেখবার মতো এমন কিছু চেনেন কিনা, যা টুরিস্ট গাইডে নেই৷ চেনেন বৈকি: বার্লিনে যখন সন্ধ্যা নামে, তখন ট্যাক্সিচালকদের কাজ বাড়ে৷ মার্টিন ডল নিজে প্রায় দশ বছর ধরে শুধু রাত্রে ট্যাক্সি চালিয়েছেন৷ ফ্রিডরিশহাইন-ক্রয়েৎসব্যার্গ হলো হালের ফ্যাশনেবল গন্তব্য৷ বার্লিনের মানুষ একটি পার্টি থেকে আরেকটি পার্টি, একটি নাইট ক্লাব থেকে আরেকটিতে যেতে ভালোবাসেন – ফলে ট্যাক্সিচালকদের পোয়াবারো৷ কোনো কোনো নাইট ক্লাব সপ্তাহান্তে চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে৷