1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ট্রানজিটের জটিল কাহিনি

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড়
৫ মে ২০২৩

বাংলাদেশকে বিনা ফি-তে নেপাল ও ভুটানে পণ্য নিয়ে যাওয়া, দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ভারত৷

https://p.dw.com/p/4QwMW
Auto-Rallye Kolkatta Kunming 2013
বাংলাদেশকে বিনা ফি-তে নেপাল ও ভুটানে পণ্য নিয়ে যাওয়া, দিল্লি বিমানবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে ভারত৷ছবি: Getty Images/AFP/D. Sarkar

কাহিনিটা বেশ জটিল৷ তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক উপ-কাহিনি, যা না বুঝলে ট্রানজিট ফি-র পুরো গল্পটা বোঝা সম্ভব নয়৷ এটা না জানলে এমন ধারণা হতেই পারে, ট্রানজিট ফি থেকে বাংলাদেশের যে পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা ছিল, তা তারা পাচ্ছে না৷

এখন কলকাতা থেকে আগরতলায় যদি মাল পাঠাতে হয় তাহলে এক হাজার ছয়শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়৷ আসাম থেকে চা কলকাতা বন্দরে আনতে গেলে এক হাজার চারশ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হয়৷ আর বাংলাদেশের বন্দর ও সড়কপথ ব্যবহার করে যদি সেই মাল পাঠানো যায়, তাহলে দূরত্বটা কমে দাঁড়ায় চারশ কিলোমিটারে৷ সেজন্যই ভারত ও ভারতের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের মধ্য়ে দিয়ে উত্তরপূর্ব ভারতে মাল পাঠানোর জন্য এতটা উদগ্রীব৷ নাহলে ভারত থেকে ভারতেই মাল পাঠাবার জন্য বাংলাদেশের মধ্য়ে দিয়ে যাওয়ার কোনো দরকার হত না৷ ট্র্রানজিট ফি নিয়ে এত আলোচনা, এত চাপ-পাল্টা চাপ, বঞ্চনার অভিযোগও উঠত না৷

ভারতের সঙ্গে ট্রানজিট ফি ঠিক করার জন্য আগে বাংলাদেশ সরকার একটা কোর কমিটি গঠন করে৷ কমিটি বলেছিল, কনটেনারে মাল নিলে ১০ হাজার টাকা, খোলা মাল নিলে টনপ্রতি এক হাজার টাকার মতো ট্রানজিট ফি হওয়া উচিত৷ কারণ, কোর কমিটির চিন্তা ছিল, ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণ পণ্যবাহী ট্রাক এলে তার চাপ পরিকাঠামোয় পড়বে৷ সে জন্য  বর্তমান পরিকাঠামো খারাপ হবে, নতুন পরিকাঠামো বানাতে হবে৷ তার একটা খরচ আছে৷ নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভারতীয় আধিকারিক জানিয়েছেন, ভারত ও বাংলাদেশের আধিকারিকদের মধ্যে অনেক আলাপ-আলোচনা করে সেই ফি ঠিক করা হয় টনপ্রতি ১৯২ টাকা৷ তার সঙ্গে নিরাপত্তা, বন্দর ব্যবহার করার চার্জ যোগ করলে এক টন পণ্যের ক্ষেত্রে ভারতকে দিতে হচ্ছিল ২৭৭ টাকা৷ এ নিয়ে বাংলাদেশে ক্ষোভ ছিল৷ যার জেরে ২০২০ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৭টি কনসাইনমেন্ট ভারত থেকে বাংলাদেশ হয়ে আবার ভারতে এসেছিল৷

তারপর আবার নতুন করে আলোচনা শুরু হয়৷ বাংলাদেশ এখন সেই ট্রানজিট ফি নতুন করে ধার্য করেছে, যা পুরনো ফি-র তুলনায় অনেকটাই বেশি৷ কিন্তু ওই যে বলছিলাম না, এটা সরল কোনো কাহিনি নয়৷ এর সঙ্গে আরো অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে৷ শেখ হাসিনার শেষ ভারত সফরের সময় দিল্লি জানায়, নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য পরিবহনের জন্য কোনো মাসুল লাগবে না৷ নেপাল ও ভুটানকে যে সুবিধা দেয় ভারত, তা বাংলাদেশকেও দেবে৷

এর ফলে বাংলাদেশের জিনিস কোনোরকম ট্রানজিট ফি ছাড়াই পৌঁছে যাবে নেপাল ও ভুটানে৷ ভারতের মধ্যে দিয়ে৷ আর ওই দুই দেশও বাংলাদেশে একইরকমভাবে পণ্য পাঠাতে পারবে৷ ফলে এখানে তিন দেশই ভারতীয় পরিকাঠামো ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে৷ নেপাল ও ভুটানের কথায় পরে আসছি, এর ফলে বাংলাদেশ ও তার ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন তাতে সন্দেহ নেই৷ ২০২১ সালে তারা ৫২ হাজার মেট্রিক টন সার নেপালে পাঠিয়েছেন৷  ফলে ভারতের পণ্য়ের মাসুল নির্ধারণের সময় এই হিসাবও তো ঢুকে যাবে৷

তাছাড়া ভারতের যে পণ্য বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে যাবে, তা বাংলাদেশের ভিতরে তাদের ট্রাক ও জাহাজ বহন করবে৷ সেই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে৷ ভারতীয় ব্যবসায়ীদের বক্তব্য ছিল, মোংলা বন্দর ও সড়কপথ আন্তর্জাতিক মানের নয়৷ ফলে তাদের পণ্য পাঠানোর ক্ষেত্রে অসুবিধা হয়৷ তারপর বাংলাদেশ এই পরিকাঠামোর উন্নতি করার চেষ্টা করেছে৷ ভারতের পণ্য না গেলে সেই পরিকাঠামোর পুরো ব্যবহার হবে না৷

২০২১ সালে বাংলাদেশ ভারতের চতুর্থ সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারী দেশ হয়েছে৷ অ্যামেরিকা, চীন, আমিরাতের পরেই রয়েছে বাংলাদেশ৷ এই তথ্যটাও মাথায় রাখা জরুরি৷ আর গত ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা তাদের ট্রানশিপমেন্ট কার্গো দিল্লির এয়ার কার্গো অফিসের সুবিধা ব্যবহার করে অন্য দেশে পাঠাতে পারছেন৷ এই সুবিধাটাও কম নয়৷ আর কয়েকমাস আগে ভারত তার নদী ও বিমান বন্দর ব্যবহার করে বিনা ফি-তে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের তৃতীয় দেশে পণ্য পাঠাতে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে৷

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লি
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

আরো একটা কথা ভারতীয় কর্মকর্তারা বলে থাকেন৷ ট্রানজিট লাভজনক হলে তবেই তো ব্যবসায়ীরা তা ব্যবহার করবেন৷ প্রচুর ফি থাকলে তারা পিছিয়ে যাবেন৷ তাতে ক্ষতি বাংলাদেশেরই৷

তাই একটা হিসাবের মধ্য়ে অনেক হিসাবই জড়িয়ে তাকে৷ নেপাল ও ভুটানকে তো ভারত ফ্রি ট্রানজিট দেয়৷ ২০২২ সালের আগে নেপাল শুধু কলকাতা ও বিশাখপত্তনম বন্দর ব্যবহার করে জিনিস অন্য দেশে পাঠাতে পারত৷ ২০২২-এর পর থেকে নেপাল গুজরাটের মুন্দ্রা ও ওড়িশার ধামরা বন্দর ব্যবহার করতে পারছে৷ কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতের সব বন্দর ও বিমানবন্দর ব্যবহার করে পণ্য পাঠাবার সুবিধা দেয়া উচিত৷ বড় প্রতিবেশী হিসাবে এইটুকু করতেই পারে ভারত৷

কিন্তু ওই যে বাণিজ্য বিষয়টিই দেয়া-নেয়ার উপর ভিত্তি করে হয়৷ ‘দিবে আর নিবে’ না হলে 'মেলাবে-মিলিবে’ হয় না৷ সেজন্যই ট্রানজিটের কাহিনি একমাত্রিক নয়, বহুমাত্রিক৷  কিন্তু সেখানে বেশি দরাদরি করলে কী হয়, তা এর আগের ট্রানজিট ফি নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে বোঝা গেছে৷ খুব কম ট্রানজিট ফি রাখার পর পণ্য পরিবহনই হচ্ছিল না৷ তাই এবারের ফি অনেক বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা৷

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি গৌতম হোড়৷
গৌতম হোড় ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি৷