ডলফিন কি আসলেই মানুষের বন্ধু?
বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণীদের মধ্যে দু’টি হলো মানুষ ও ডলফিন৷ দুই প্রজাতির মধ্যে প্রকৃতিগতভাবেই এক রকমের পারস্পরিক আগ্রহ কাজ করে৷ অনেকেই একে বন্ধুত্ব বলেন৷ কিন্তু আসলে তা কী?
বিশেষ বন্ধন?
ডলফিনদের বুদ্ধিদীপ্ততা, জটিল যোগাযোগ প্রক্রিয়া ও মানুষের প্রতি তাদের ভালোবাসার কারণে বলা হয় যে, এদের সঙ্গে মানুষের বিশেষ সম্পর্ক আছে৷ কিন্তু আমরা যতটুকু মনে করি, আসলেই কি মানুষের প্রতি তাদের বিশ্বস্ততা ততটুকু? এই বিশেষ বন্ধন কি আসলেই আছে?
এক্স-রে ভিশন
ডলফিনদের সম্ভবত এমন ক্ষমতা আছে, যাতে তারা মানুষের প্রতি আকৃষ্ট হয়৷ এতে তারা বিপদে পড়া মানুষদের বাঁচাতে আগ্রহী হয়৷ তারা সোনার প্রক্রিয়ায় (এক্স-রে’র মতো) পানিতে অন্য বস্তু শনাক্ত করে৷ সম্ভবত স্তন্যপায়ী প্রাণী হিসেবে মানুষের হাড় ও ফুসফুস তাদের কাছে সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়৷ বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি দেখা যায়৷ তারা, এমনকি গর্ভাবস্থায় শিশুর হৃৎস্পন্দনও শনাক্ত করতে পারে৷
সুন্দর মন
শরীরের অনুপাতে মস্তিষ্কের আকারের হিসেবে মানুষের পরই ডলফিন৷এছাড়া তারা কৃত্রিমভাবে তৈরি ভাষা বুঝতে পারে৷ বাহ্যিক সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারে৷ এমনকি সমস্যা সমাধানে একে অন্যকে সহযোগিতা করতে পারে৷ এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, দুটি ডলফিন একটি টিউব খুলতে একে অপরের সহযোগিতা নিচ্ছে, এবং নিজেকে চেনার জন্য একে অন্যকে আয়না সরবরাহ করছে৷
ডলফিনিজ ভাষা
ডলফিনরা অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়ায় যোগাযোগ করে৷ প্রশ্ন হলো, তাদের কোনো ভাষা আছে কি? একদিন কি মানুষ ডলফিনদের সঙ্গে কথা বলতে পারবে? ষাটের দশকে জন লিলি নামের এক গবেষক বিতর্কিত এক পরীক্ষায় ডলফিনের শরীরে এলএসডি প্রবেশ করিয়েছিলেন৷ এতে ডলফিনগুলোর কথাবার্তা বেড়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু মানব-ডলফিন যোগাযোগ সম্ভব হয়নি৷
সামাজিক ‘একা’ ডলফিন
ডলফিন সামাজিক প্রাণী৷ খুব কম সময়ই এরা একা থাকে৷ কিন্তু মাঝে মাঝেই একা পাওয়া যায় অনেক ডলফিনকে৷ তারা নিজেদের প্রজাতিকে বাদ দিয়ে তখন মানুষের সঙ্গে সামাজিকতায় মেতে ওঠে৷ কিন্তু একে শুধু বন্ধুত্বসুলভ আগ্রহ হিসেবে দেখেন না অনেক গবেষক৷ তাঁদের মতে, মানুষের সঙ্গে যৌন মিলনে আগ্রহী হয়ে ওঠে তারা৷
আগ্রাসীও হয়
বন্ধু ডলফিন অনেক সময় আগ্রাসীও হয়৷ এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যখন ডলফিন মানুষকে টেনে এমনকি পানির নীচেও নিয়ে গেছে৷ মানুষের হাড় ভেঙেছে৷ অনেকে ধারণা করেন যে, তাদের প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণের প্রতিশোধ নিতেই তারা কখনো কখনো এমন করে৷ কিন্তু এর প্রমাণ দিতে পারেনি কেউ৷
ডলফিন-অবান্ধব পর্যটন
ডলফিনের সঙ্গে সাঁতার অনেকের জন্যই জীবনের সবচেয়ে সুন্দর অভিজ্ঞতা৷ পৃথিবীর অনেক পর্যটনস্থান জনপ্রিয় শুধু এ কারণেই৷ কিন্তু এতে ডলফিনরা হয়রানির শিকার হয় বলে অনেকেই এখন এই ধরনের পর্যটন কার্যক্রমের বিপক্ষে৷ যেমন হাওয়াইতে কর্তৃপক্ষ বলেই দিয়েছে যে, ডলফিনদের ৫০ গজের মধ্যে যাওয়া যাবে না৷
মানববন্ধুরা তাদের জন্য হুমকি
সারা বিশ্বেই মানুষ ডলফিনদের অস্তিত্বের জন্য নানা মাত্রায় হুমকি সৃষ্টি করছে৷ সরাসরি হত্যা তো আছেই, সেই সঙ্গে দূষণ, আবাস হারানো ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেও ডলফিনদের সংখ্যা কমে আসছে৷