'ডাক্তার' ট্রাম্পের বিতর্কিত ওষুধ
২৪ এপ্রিল ২০২০ফের বিতর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, শরীরে আলট্রা ভায়োলেট রে এবং জীবাণুনাশক ঢুকিয়ে দিতে পারলে করোনার থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। করোনার সঙ্গে লড়াইয়ে এটাই সেরা চিকিৎসা। যা শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে প্রাণহানিও হতে পারে। অন্য দিকে, অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা করোনার টিকা আবিষ্কারে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলেন।
করোনা নিয়ে প্রতিদিন সাংবাদিক সম্মেলন করেন ট্রাম্প। কিছু দিন আগে বলেছিলেন, না শিখলেও জনস্বাস্থ্য বিষয়টি ভালো বোঝেন তিনি। বৃহস্পতিবার তারই প্রমাণ দিলেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। জন স্বাস্থ্য আধিকারিককে পাশে বসিয়ে অবলীলায় তিনি বলে দিলেন, তীব্র তাপ করোনা রোগ নির্মুল করতে পারে। ফলে চামড়ার তলায় যদি আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি ঢুকিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে করোনাকে প্রতিহত করা সম্ভব। এখানেই থেমে থাকেননি প্রেসিডেন্ট। জানিয়েছেন, শরীরে জীবাণুনাশক ইনজেক্ট করে দিলেও করোনা ভাইরাস অকেজো হয়ে পড়বে। প্রকাশ্য সাংবাদিক সম্মেলনে প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্য শুনে মাথায় হাত চিকিৎসকদের। তাঁরা বলছেন, ট্রাম্প যা বলেছেন, কেউ যদি সত্যি সত্যি তা পরীক্ষা করে দেখতে যান, তা হলে মৃত্যুও হতে পারে। কারণ, কীটনাশক বা জীবাণুনাশক ঘর-বাড়ি পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা হয়, তা শরীরে ব্যবহারের জন্য নয়।
তবে আশার কথা, সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমের করা জরিপ বলছে, করোনা নিয়ে ট্রাম্প যা বলছেন, তা অধিকাংশ মার্কিনিই বিশ্বাস এবং সমর্থন করেন না। রিপোর্ট বলছে, ২৮ শতাংশ অ্যামেরিকান ট্রাম্পের কথায় সারমর্ম আছে বলে মনে করেন। তার মধ্যে ট্রাম্পের কথা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করেন ২৩ শতাংশ। বাকিরা সকলেই মনে করেন, ট্রাম্প যা বলছেন, তা অর্থহীন। ডেমোক্র্যাটপন্থীরা তো বটেই, এমনকী, রিপাবলিকানপন্থীরাও মনে করছেন ট্রাম্পের কথা না শুনলেও কোনও ক্ষতি নেই। তবে ট্রাম্পের এই আচরণকে কি তাঁরা মান্যতা দিচ্ছেন? এই প্রশ্নে ৪২ শতাংশ অ্যামেরিকান জানিয়েছেন, ট্রাম্প যা করছেন, তাতে তাঁদের আপত্তি নেই।
প্রায় প্রতিদিনই কোনও না কোনও বিতর্কিত মন্তব্য করা কার্যত অভ্যাস করে ফেলেছেন ট্রাম্প। অন্য দিকে অ্যামেরিকার পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরও উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার। আক্রান্ত আট লাখ ৮০ হাজার। তারই মধ্যে প্রায় দুই কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। সকলেই বেকার ভাতার জন্য দরখাস্ত করেছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ১৯৩০ এর মহা মন্দা বা গ্রেট ডিপ্রেশনের পরে অ্যামেরিকায় এমন পরিস্থিতি আর কখনও হয়নি। বস্তুত, অর্থনীতির এই বেহাল অবস্থার কথা মাথায় রেখেই মার্কিন কংগ্রেস বৃহস্পতিবার একটি ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক বিল পাশ করেছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং করোনা মোকাবিলার জন্য ৪৮৪ বিলিয়ন ডলারের একটি প্যাকেজ ঘোষণা হয়েছে। এ দিকে এরই মধ্যে নিউ ইয়র্কে দু'টি বেড়ালের শরীরে করোনার সংক্রমণ মিলেছে। এই প্রথম কোনও পোষ্য়ের শরীরে করোনা মিলল।
বিতর্ক এখানেই শেষ নয়। সম্প্রতি হাইতি অভিযোগ করেছে, এই ভয়াবহ সময়েও তাদের দেশে একের পর এক অ্যামেরিকার বিমান ঢুকছে। কারণ, করোনা পরিস্থিতিতেও ডি-পোর্টেশন বা দেশ থেকে অন্য দেশের নাগরিকদের বিতারণের প্রক্রিয়া চালু রেখেছে অ্যামেরিকা। হাইতির আশঙ্কা, অ্যামেরিকা ফেরত ওই সমস্ত নাগরিকদের মাধ্যমেই সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়বে।
অ্যামেরিকার বাইরে বাকি বিশ্বের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ফের জানিয়েছে, এশিয়ার কিছু দেশ এবং আফ্রিকা ও দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে করোনা। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই দেশগুলিতে করোনা ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে বলে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। ইউরোপের পরিস্থিতি একই রকম। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানাচ্ছে, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গোটা পৃথিবীতে করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৯০ হাজার মানুষের। আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ লাখ ১৮ হাজার। এখনও পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৪৫ হাজার জন। তারই মধ্যে আরও নয়টি নতুন করোনা সংক্রমণের কথা জানিয়েছে চীন।
এ দিকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জানিয়েছে, করোনা ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় তাঁরা সাফল্য পাচ্ছেন। মানুষের শরীরে ভ্যাকসিনের প্রয়োগ তাঁরা শুরু করেছেন এবং তাতে সাফল্যও মিলছে। তবে এখনও কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সব ঠিক থাকলে সেপ্টেম্বর নাগাদ এই ভ্যাকসিন হাতে পাওয়া যাবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
জাপানেও করোনা সংক্রমণ এক ধাক্কায় অনেকটা বেড়ে গিয়েছে। সম্প্রতি ইটালি থেকে একটি জাহাজ পৌঁছেছে জাপানের বন্দরে। সেই জাহাজে বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত আছেন বলে জানিয়েছে জাপান। এখনও জাহাজেই আটকে আছেন তাঁরা।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)