‘ডাল উৎপাদনে ধস নামার আশঙ্কা'
৬ মে ২০১১ডাল-ভাত শব্দটি যেন বাঙালির রক্তে মিশে আছে! শুঁটিজাতীয় মৌসুমি ফসলের শুকনো বীজটি প্রোটিন জাতীয় খাদ্য৷ ডালকে বলা হয় গরিবের আমিষ খাবার! প্রোটিন ছাড়াও ডালে পর্যাপ্ত শর্করা, চর্বি ও খনিজ উপাদান রয়েছে৷ ফি বছর কেবল বাংলাদেশেই ডালের চাহিদা রয়েছে কমবেশি ১২ লাখ থেকে ১৫ লাখ টন৷ এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন৷ চাহিদা মেটাতে প্রতি বছর অন্তত ৮ লাখ টন ডাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হচ্ছে৷ এ তো গেল বাংলাদেশের হিসাব৷ তবে বিশ্ব চাহিদার হিসাব কষাটা খুব সহজ কোন ব্যাপার নয়৷ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ডাল বিশেষ করে মসুর ডাল উৎপাদিত হয় অ্যামেরিকা, ক্যানাডা এবং অস্ট্রেলিয়ায়৷
নতুন এক গবেষণায় কৃষি ও পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, এক পাউন্ড বা প্রায় আধা কিলোগ্রাম ডাল উৎপাদনে প্রয়োজন হয় ৪৩ গ্যালন পানি৷ অপরদিকে, একই পরিমাণ সয়াবিন উৎপাদনে পানির প্রয়োজন ২১৬ গ্যালন, বাদামে ৩৬৮ গ্যালন আর যদি মাংসের হিসাব করা হয়, তাহলে বলা যায়, কেবল এক পাউন্ড গোমাংসের জন্য প্রয়োজন ১ হাজার ৮৫৭ গ্যালন পানি৷
তাঁরা বলছেন, ডাল কেবল যে মানুষের খাবার হিসাবেই ভালো, তাই নয়৷ এই উদ্ভিদটি পরিবেশের জন্যও বেশ উপকারী৷ এটি মাটির উর্বরতা বাড়ায়, বাড়িয়ে দেয় মাটিতে থাকা শক্তির উপাদান৷ আর পানি কম শোষণ করে তা ভূগর্ভস্থ জলাধারে পানির পরিমাণ বাড়াতে সহায়তা করছে৷
এক কথায় ডাল উৎপাদনে পানির প্রয়োজন খুব কম এবং প্রয়োজন শুষ্ক স্থান৷ কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন শুরু হওয়ায় সরাসরি আঘাত লাগতে শুরু করেছে এর উৎপাদনে৷ শীর্ষ ডাল উৎপাদনকারী দেশ অ্যামেরিকা এবং ক্যানাডায় বরফ গলা পানির কারণে সৃষ্ট বন্যা লেগে আছে হরহামেশা৷ ফলে সেখানে ডাল উৎপাদন উপযোগী বেশিরভাগ জমি প্লাবিত হওয়ায় এবং ভিজে যাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে ডাল উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে বলেই আশঙ্কা৷ অস্ট্রেলিয়ার ক্ষেত্রেও প্রায় একই ধরণের আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা৷
প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক