মুখোমুখি জার্মানি-আলজেরিয়া
৩০ জুন ২০১৪তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানি প্রথমেই পর্তুগালের বিরুদ্ধে ঝলসে উঠে তারপর ঘানার বিরুদ্ধে ২-২ ড্র করে৷ তারও পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিরুদ্ধে খেলাতে জার্মানদের ব্রহ্মাস্ত্র টোমাস ম্যুলার দলকে ১-০ গোলে জিতিয়ে দিয়েছেন বটে, কিন্তু সব মিলিয়ে জার্মানরা যে ঠিক হবু চ্যাম্পিয়নের মতো খেলেছে, এ কথা তাদের অতি বড় মিত্রও বলবে না৷
ল্যোভের সমস্যা কি শুধু একটা?
প্রথমে তো ক্যাপ্টেন ফিলিপ লামকে বাঁ দিকের ডিফেন্স থেকে তুলে এনে তাঁকে ফরোয়ার্ড আর ডিফেন্সের মধ্যে যোগসূত্র করে রাখার উর্বর পরিকল্পনাটি কতটা সফল হয়েছে, তা বলা শক্ত৷ লামকে আজও-ইনজুরি-থেকে-পুরোপুরি-সেরে-না-ওঠা সামি খেদিরার সঙ্গে জুটি বাঁধতে বাধ্য করে বিশেষ কোনো লাভ হয়নি৷ ওদিকে মেসুত ও্যজিল যে কেন এত ম্রিয়মান, তা শুধু তিনি একাই জানেন৷ আশার কথা, বাস্টিয়ান শোয়াইনস্টাইগার মাঠে ফিরেছেন তাঁর পুরো ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা নিয়ে৷ কিন্তু তাঁকে গোড়া থেকে খেলানো ডাক্তারি দৃষ্টিকোণ থেকে কতটা সমীচিন হবে, তা শুধু জার্মান ডাক্তার ম্যুলার-ভোলফার্টই বলতে পারবেন এবং কোচ ইওয়াখিম ল্যোভকে বলেছেনও নিশ্চয়৷ আবার ঐ ম্যুলার-ভোলফার্টই নিশ্চয় লুকাস পোডোলস্কি সম্পর্কে বলেছেন, ওর যা থাইয়ের চোট, তা-তে ওকে খেলানোর কথা ভুলে যান৷
পুরনো কাসুন্দি
আসল কথা হলো, আলজেরিয়া যতই ‘‘প্রতিশোধ'' নেবার স্বপ্ন দেখুক না কেন, হালের বিশ্বকাপ জেতার এক ফেবারিট জার্মানির বিরুদ্ধে তাদের বানের মুখে কুটোর মতো ভেসে যাওয়া কথা৷ মজার কথা, সাম্প্রতিক ইতিহাসে ‘‘মরুভূমির শৃগালদের'' সঙ্গে জার্মানির মোলাকাত হয়েছে সাকুল্যে দু'বার – ১৯৬৪ সালের একটি ফ্রেন্ডলিতে এবং ১৯৮২ সালের বিশ্বকাপে, যখন গ্রুপ পর্যায়ের খেলায় আলজেরিয়া জার্মানিকে হারায় ২-১ গোলে, যার পরেই আসে ‘‘ডিজন-এর লজ্জা''৷ এবার আলজেরিয়ার কাঁধে সারা আরব দুনিয়ার আশা৷ আলজেরিয়া স্বয়ং সে আশা উস্কে দিয়েছে গ্রুপ পর্যায়ে রাশিয়ার সঙ্গে ড্র করে এবং দক্ষিণ কোরিয়াকে ৪-২ গোলে নস্যাৎ করে – সেটা আবার ঘটে পোর্তো আলেগ্রোর এই বায়রা রিও স্টেডিয়ামেই, যেখানে আজ আলজেরিয়া-জার্মানি মোলাকাত৷
আলজেরিয়ার কোচ ফাহিদ হালিহোজিচ বলেছেন, তাঁর প্লেয়াররা ১৯৮২ সালকে ‘‘ভুলে যায়নি'', যদিও জার্মান কোচ ইওয়াখিম ল্যোভের মতে অতীতের সে ঘটনার আজ আর কোনো প্রাসঙ্গিক তাৎপর্য নেই, কেননা বর্তমান জার্মান দলের অধিকাংশ প্লেয়ারের তখন জন্মই হয়নি৷ অপরদিকে ল্যোভ – সাধারণভাবেই – নক-আউট স্টেজে কোনো প্রতিপক্ষকেই সহজ বলে গণ্য করার বিরুদ্ধে সাবধান করে দিয়েছেন৷ আসল কথা হলো, কোচ হিসেবে ল্যোভকে আশাবাদী হতে হবে বৈকি; যেমন বাস্তববাদী হিসেবে তাঁকে জানতে হবে: (১) এই জার্মান দলের খেলা দেখে কেউ মুচ্ছো যাবে না; (২) ব্রাজিল বা আর্জেন্টিনাই বা কোনো আকাশের চাঁদ পেড়ে এনেছে? (৩) বড় দলগুলোর সাবধানতার কারণ হলো: ফুটবল খেলাটাকে কোনোদিনই ঠিক ভদ্দরলোক কি বড়লোকদের খেলায় পরিণত করা যাবে না – তা সে ফিফা যতই প্রতি বিশ্বকাপে চার বিলিয়ন ডলার মুনাফা করুক না কেন৷
ফুটবলের জোয়ার-ভাটা
ফুটবল হলো জোয়ার-ভাটার মতো, জল এখন বইছে আবার মোহানার দিকে, ছোট দেশ, ছোট ছোট মানুষ, গলি আর বস্তিতে খালিপায়ের ফুটবলের দিকে – যেখানে বড়রা নাও সামলায় আর ছোটরা অঘটন ঘটায়৷ তাই আজ আলজেরিয়া জার্মানির বিরুদ্ধে, অথবা নাইজেরিয়া ফ্রান্সের বিরুদ্ধে অঘটন ঘটালে কেউ যেন আশ্চর্য না হন৷
ইউরোপের বিরুদ্ধে আফ্রিকার দিন যে একদিন আসবে, সে তো সবাই জানতো৷
এসি/জেডএইচ (রয়টার্স, এএফপি, এপি)