‘ডিজিটাল’ প্রদর্শনীতে তারুণ্যের জমজমাট উপস্থিতি
১০ নভেম্বর ২০১০গত ১৭ বছরে এই আয়োজনের পরিধি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে মানুষের আগ্রহ৷ বেড়েছে ক্রেতার ভিড়৷ ৩০ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সেমিনার কেন্দ্রটিতে বসেছিল তাই তারুণ্যের মিলনমেলা৷
তরুণ প্রজন্মের মেলা
এই দেখুন না, মেলা থেকেই কিনতে হবে ল্যাপটপ৷ তাই, সুদূর সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকায় হাজির দুই ভাই, রাকিব আর রাজন৷ জানালেন, ডেস্কটপ আর নয়, এবার ল্যাপটপ চাই৷ মেলা ঘুরে অবশ্য শেষমেষ নেটবুকই কিনলেন রাজন৷ তাঁর কথায়, এটি আকারে বেশ ছোট৷ আমার কাজে লেগে যাবে৷
সঙ্গে একটা ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে নিলে হতো না? এমন প্রশ্নে রাজনের যুতসই উত্তর, মোবাইলে ইন্টারনেট আছে, সেটাকেই নেটবুকে জুড়ে দেবো৷ সাবাস, এই না হলে নতুন প্রজন্ম! এমন প্রযুক্তিপ্রেমীর সংখ্যা কিন্তু মেলা প্রাঙ্গণে একান্ত কম ছিল না৷ আর তাদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাই বেশি৷ বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি'র সভাপতি মোস্তফা জব্বার এই বিষয়ে জানান, আনুমানিক প্রায় ২ লাখ মানুষ এসেছিল এবারের মেলায়৷
নতুন প্রযুক্তির ছড়াছড়ি
সাইফুল ইসলাম-এর বয়স ২২ বছর৷ বিবিএ পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ মেলা ঘুরে বেশ অবাক তিনি৷ কত নতুন নতুন ইন্টারনেট প্রযুক্তির দেখা মিললো এবার৷ মেলা প্রাঙ্গণ জুড়ে ছিল ওয়াইম্যাক্স, ওয়াইফাই ইন্টারনেটের ছড়াছড়ি৷ ছিল ইন্টারনেট রেডিও, ইন্টারনেট গেমস আর আইপি টেলিভিশনের জমজমাট উপস্থিতি৷ সাইফুল ইসলাম অবশ্য বাড়ি ফিরে গেছেন কিছু না কিনেই৷ তাঁর কথায়, সর্বশেষ প্রযুক্তি পণ্য দেখতেই এসেছিলাম মেলায়৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ কি সেটার খানিকটা পরিচয় মিলেছে এখান থেকে৷
ডিজিটাল বাংলাদেশ
এবারকার তথ্য প্রযুক্তি মেলার শিরোনামও, ‘নতুন প্রজন্মের জন্য ডিজিটাল বাংলাদেশ৷' ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে চায় সরকার৷ সেই চেষ্টায় সামিল বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি৷ মেলা চলাকালে তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে ছিল নানা সেমিনার, জ্ঞানগর্ভ আলোচনা৷ তরুণ প্রজন্মের মাঝে ডিজিটাল সচেতনতা গড়াই কি এবারের মেলার উদ্দেশ্য? মোস্তফা জব্বারের কথায়, বুঝতেই পারছেন, বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছে৷ আর বিসিএস আগে থেকেই সে চেষ্টায় শরিক৷
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘দেশকে ডিজিটাল করতে হলে আগে দেশের মানুষকে ডিজিটাল পণ্যের সাথে পরিচয় করাতে হবে৷ এ ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি মেলা দেশের সব শ্রেণীর মানুষকে ডিজিটাল পণ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবে৷'
ল্যাপটপ যুগ
সে যাই হোক, এবারকার মেলায় একটা বিষয় কিন্তু বেশ লক্ষণীয়৷ প্রযুক্তি পণ্য বিক্রেতাদের মূল নজরটা ছিল ল্যাপটপ, নোটবুকের দিকে৷ অন্তত যারা এই মেলায় অংশ নিয়েছে, সংখ্যার হিসেবে ৬৯টি স্টল আর ২৬টি প্যাভিলিয়নের অধিকাংশেই ছিল ল্যাপটপ, নেটবুকের আধিক্য৷ ডেস্কটপের চেহারা দেখা যায়নি তেমন একটা৷ বিসিএস সভাপতি স্বীকার করে নিলেন সে কথা৷ তিনি বলেন, ২০১০ সালে বাংলাদেশে ল্যাপটপের বিক্রি বেড়েছে পাঁচগুন৷ আমাদের মেলা থেকেও প্রচুর ল্যাপটপ বিক্রি হয়েছে৷ ডেস্কটপতো এবার তেমন একটা দেখাই যায়নি৷
ভেন্যু সংকট
জার্মানির নানা শহরে প্রায়ই আয়োজন করা হয় মেলার৷ হানোফারের কম্পিউটার প্রযুক্তি মেলা বিশ্বের সবচেয়ে বড়৷ এই মেলার এক প্যাভিলিয়ন থেকে অন্যটিতে যেতে প্রয়োজন পড়ে গাড়ি৷ এমন মেলার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রযুক্তি মেলার তুলনা করা বাহুল্য৷ কিন্তু তারপরও ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সেমিনার কেন্দ্রটিকে প্রযুক্তি মেলার জন্য পর্যাপ্ত মনে করেননি অনেকে৷ এদেরই একজন, মোহাম্মদপুরের মিথিলা মাহবুব৷ তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ আরেকটু খোলামেলা হলে ভালো হতো৷ তবে, এমন আয়োজনেও সন্তুষ্ট তিনি৷
মেলার আয়োজক কর্তৃপক্ষ অবশ্য জানিয়েছেন, ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে মেলার আয়োজন করতে চান তারা৷ এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন৷ কেননা, মেলার জন্য বড়সড় জায়গার যে বড়ই সংকট বাংলাদেশে৷
প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন