ডিসট্যান্ট লার্নিং এবার জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে
২৮ মার্চ ২০১১অনলাইন স্টাডি অর্থাৎ ডিসট্যান্ট লার্নিং বা দূর-শিক্ষণ নতুন কিছু নয়৷ অ্যামেরিকার প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই দূর-শিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ ইউরোপের বেশ কিছু দেশে জনপ্রিয় এই দূর-শিক্ষণ শিক্ষা ব্যবস্থা৷
দূর-শিক্ষণ বা অনলাইন স্টাডিতে জার্মানির চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ব্রিটেন এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলো৷ সেখানে এই শিক্ষা ব্যবস্থা নতুন নয়৷ চাকরির পাশাপাশি অনেকেই এই দূর-শিক্ষণের মাধ্যমে পড়াশোনা করছেন৷ আর অনলাইন স্টাডির সবচেয়ে বড় সুবিধা হল – যে কোন বয়সের যে কেউ অনলাইন স্টাডির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে এবং সেটা অন্য দেশ থেকেও সম্ভব৷ চাকরির পাশাপাশি পড়াশোনার এই সুযোগ শুধুমাত্র অনলাইন স্টাডিই দিতে সক্ষম হয়েছে৷
প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হোখশুলে হাগেন
জার্মানির হাগেন শহরে অবস্থিত হোখশুলে হাগেন৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়টিই জার্মানির প্রথম প্রতিষ্ঠান, যেখানে অনলাইন স্টাডির প্রথা চালু হয়েছিল৷ চাকুরিজীবী, গৃহিণী এবং ছাত্র-ছাত্রীরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দূর-শিক্ষণ ব্যবস্থাটি বেছে নিয়েছেন৷ ক্লাসে কী কী পড়ানো হবে, তা ডাকযোগে ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পাঠানো হয়৷ তবে শুধু পরীক্ষার জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে হয়৷ পরীক্ষা সব সময়ই হয় লিখিত৷ আর ক্লাসের বিভিন্ন বিষয় তুলে দেয়া হত ইন্টারনেটে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রি অর্জন করা যায় এবং তা দূর-শিক্ষণ বা ডিসট্যান্ট লার্নিং-এর মাধ্যমে৷ পেট্রা কোসি বললেন,‘‘যেমন ধরা যাক ভার্চুয়াল ক্লাসরুম৷ সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত আসে৷ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যম হল এই ক্লাসরুম৷ সেখানে চ্যাটের ব্যবস্থা থাকে৷ সবাই এভাবেই যোগাযোগ করে৷ পড়াশোনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে৷''
পিছিয়ে নেই স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়
কথাগুলো জানান স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের পেট্রা কোসি৷ স্টুটগার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু বিষয় এখন অনলাইনের মাধ্যমে পড়ানো হচ্ছে৷ এর মধ্যে মাস্টার্সের কিছু বিষয়ও রয়েছে৷ পেট্রা কোসি আরো জানান,‘‘আমরা সব বয়সের দিকে তাকিয়েই অনলাইনে পড়াশোনার ব্যবস্থাটি চালু করেছি৷ একজন পড়াশোনায় আগ্রহী অথচ তাঁর বয়স চল্লিশের বেশি – তার মানে কি সে পড়াশোনা করবে না? আমরা কি তাঁর জন্য কিছুই করতে পারবো না? ডিজাইনিং এবং অটোমোবাইল ছাড়াও আরো বেশ কিছু বিষয়ে অনলাইনে পড়তে আগ্রহ দেখাচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা৷''
পেট্রা কোসি অনলাইনে পড়াশোনার জন্য বিভিন্ন বিষয় বাছাইয়ের দিকটি দেখাশোনা করেন৷ যে সব বিষয় নিয়ে আগে অনলাইনে পড়াশোনা সম্ভব হত না কীভাবে অনলাইনের মাধ্যমে তা দ্রুত ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেয়া যায় তা নিয়ে কাজ করছেন তিনি৷ বছরে দু'বার এসব অনলাইনে পড়ুয়াদের সঙ্গে তিনি মিলিত হন৷ যে কোন উইকএন্ডকে বেছে নেয়া হয় সরাসরি সাক্ষাতের জন্য৷
দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া সম্ভব ইংরেজিতে
আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্ন৷ সেখানে অনলাইনে যে কোন বিষয় নিয়ে ভর্তির আগে কয়েকটি শর্ত পালন করা আবশ্যক৷ যেমন আগ্রহীকে অবশ্যই গ্র্যাজুয়েট হতে হবে, জার্মান ভাষা জানা থাকতে হবে৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪টি বিভিন্ন বিষয় অনলাইনে পড়া সম্ভব৷ দূর-শিক্ষণে আগ্রহী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে বিশেষ একটি স্টাডি সেন্টার৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি বিষয় পুরোপুরি অনলাইনে পড়া যায়৷ তা হল সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ন্যানোটেকনলজি৷ তবে কাইজার্সলাউটার্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে কার্লসরুয়ে ইউনিভার্সিটি৷ সেখানে বেশ কিছু আফ্রিকান ছাত্রছাত্রীও রয়েছে, জানান মিশেল শামারি৷ তিনি জানান,‘‘আমাদের এখানে একটি বিষয়ের নাম ‘স্কুল ব্যবস্থাপনা'৷ সেই বিষয়ে বেশ কিছু ইরিত্রিয়ান ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছে৷ তারা বসবাস করে ইরিত্রিয়ায়, সেখানেই তারা কাজ করছে৷ তারা সময় করে নিয়মিত ইন্টারনেটে আসছে, পড়াশোনা করছে৷''
তবে টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি কাইজার্সলাউটার্ন এবং হাগেন বিশ্ববিদ্যালয় সবচেয়ে বড় যে সুবিধাটি দিচ্ছে তা হল – এখানকার অনলাইনের বিষয়গুলো ইংরেজিতে পড়া সম্ভব৷ জার্মান ভাষার কিছুটা জ্ঞান থাকা ভাল – সেকথা ছাত্র-ছাত্রীদের জানানো হয়৷
ক্লাসে উপস্থিত হওয়ার ঝক্কি থেকে এই দূর-শিক্ষণ অনেককেই বাঁচিয়েছে৷ তবে সমস্যা হল পছন্দমত বিষয় সবসময় খুঁজে পাওয়া যায় না৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘তথ্য সেন্টার'-এর প্রতিটি লিফলেটও তুলে দেয়া হয় না সেখানে৷ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নাম মাত্র জানিয়ে দেয় যে তাদের প্রতিষ্ঠানে দূর-শিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে৷ এর বেশি কিছু জানানো হয় না৷ তাই ইন্টারনেটে খুঁজে বেড়াতে হয় পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়টি, কাঙ্খিত বিষয়টি৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন