ডুয়ার্সের জঙ্গলে হাতিদের দুর্দশা
৮ অক্টোবর ২০১০জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রেলপথ থেকে বন্যপ্রাণীর ক্ষতি ঠেকাতে এখন তৎপর কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রকও৷ কিন্তু এ যেন গোড়া কেটে আগায় জল দিয়ে গাছ বাঁচানোর চেষ্টা৷
উন্নয়ন বনাম সংরক্ষণ
১০ বছর আগে, যখন মহানন্দা অভয়ারণ্যে মিটার গেজ রেলপথ তুলে ব্রডগেজ রেলপথ বসানোর তোড়জোড় চলছিল, তখন ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ড লাইফ ফান্ডের পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষ থেকে আপত্তি জানিয়ে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়েছিল৷ কিন্তু উন্নয়ন ব্যাহত করা যাবে না, এই যুক্তিতে খারিজ হয়ে যায় সেই আপত্তি৷ এবারও, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত যখন ১৩টি হাতির প্রাণ গেছে ট্রেনের ধাক্কায়৷ পরিবেশবিদ এবং পশুপ্রেমীরা দাবি তুলেছেন যে সংরক্ষিত অভয়ারণ্য দিয়ে ট্রেন চালানো বন্ধ হোক৷ কিন্তু হাতিমৃত্যুর খবর পেয়ে যদিও ডুয়ার্সে দৌড়ে এলেন কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ, কিন্তু জঙ্গলে ট্রেন চলাচল বন্ধ করার প্রস্তাব তিনি কার্যত খারিজ করে দিলেন৷ কারণ সেই একই, উন্নয়ন ব্যাহত হবে৷
হাতিদের অবদান
অথচ হাতির মত জঙ্গলের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি প্রাণী এভাবে বেঘোরে মারা যেতে থাকলে পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি হবে, তার দায় কে নেবে – সেই জরুরি প্রশ্নের উত্তর কেউ দিচ্ছে না৷ এমনকি হাতির দল যখন সারা জঙ্গল তছনছ করে দাপিয়ে বেড়ায়, তখনও তারা পরোক্ষে উপকারই করে৷
জঙ্গলে এমন অনেক জায়গা থাকে, যেখানে এত ঘন গাছপালা যে মাটিতে সূর্যের আলো পৌঁছয় না৷ ফলে নতুন করে গাছ জন্মাতে পারে না৷ হাতির দল যখন এই সব জায়গা দিয়ে যায় তখন তাদের গায়ের ঘষা লেগে, বা হাতি শুঁড় দিয়ে ডালপালা ভেঙে, ওই যে ছাতার মত হয়ে থাকে, যেটাকে ‘ক্যানোপি এফেক্ট' বলা হয়, সেটা সরিয়ে দেয়৷ ফলে সূর্যের আলো আবার ঢুকতে পারে৷ বলছিলেন বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ডঃ নির্মল হালদার৷ কিন্তু বন্যজন্তুরা তো তাদের অ্যানিমাল ইনস্টিংকট-এর সাহায্যে বিপদ আঁচ করতে পারে? বিশেষত হাতি রীতিমত বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবেই পরিচিত৷ তাহলে তারা কেন রেলপথের বিপদ থেকে সাবধান থাকে না? প্রশ্নটা করতে, বিখ্যাত হস্তি বিশেষজ্ঞ প্রকৃতীশ চন্দ্র বড়ুয়া ওরফে লালজির একটি মন্তব্যের উল্লেখ করলেন সাহিত্যিক, অরণ্য-প্রেমিক বুদ্ধদেব গুহ৷ বললেন, লালজি মজা করে একবার তাঁকে বলেছিলেন, হাতির যদি অতই বুদ্ধি হবে তাহলে তো সে ডিএফও হবে৷ জঙ্গলে ঘুরে বেড়াবে কেন!
সংরক্ষণের উপায়
তাহলে কী করা যেতে পারে? বুদ্ধদেব গুহ বললেন, আফ্রিকায় তিনি দেখেছেন গ্রামের পর গ্রাম সংরক্ষিত বনভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেসব গ্রামের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে যাতে বন্যপ্রাণীর অসুবিধে না হয়৷ ভারতেও কানহা এবং কিসলি অভয়ারণ্যে সেরকম করা হয়েছে৷ এক্ষেত্রেও তেমনই কিছু ভাবতে হবে৷
কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশ এবার ডুয়ার্সের জঙ্গল এবং দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখে অবশ্য বেশ কিছু সমাধানসূত্র দিয়ে গেছেন৷ যেমন রেলপথের কিছু জায়গায় হাতি পারাপারের জন্য আন্ডারপাস তৈরি করা, বাকি রেলপথের দুধারে উঁচু তারের বেড়া দিয়ে দেওয়া, ৫০০ জন স্থায়ী ট্র্যাকার নিয়োগ করা যারা হাতির দলকে তাড়িয়ে আন্ডারপাসের দিকে নিয়ে যাবে৷ এছাড়া অন্তত রাতে যাতে জঙ্গল দিয়ে ট্রেন না চলে, সে প্রস্তাব নিয়ে রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়ে গিয়েছেন পরিবেশমন্ত্রী রমেশ৷
প্রতিবেদন: শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন