দ্বিতীয়বার আক্রান্তরা মারাত্মক ঝুঁকিতে
১ আগস্ট ২০১৯বাংলাদেশে এবার যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তাদের বেশিরভাই এর আগে এই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে চিকৎসকেরা জানিয়েছেন৷ এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের কতজনের আগে এই জ্বর হয়েছিল তা নিয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই৷
চিকৎসকেরা বলছেন, কারো আগে ডেঙ্গু হয়েছিল কি না তা রক্ত পরীক্ষা করে সহজে জানা গেলেও এটা রোগীর চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় না হওয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা করা হচ্ছে না৷
ঢাকায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে গত জুন মাস থেকে। জুলাইয়ের শেষে এসে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রায় সব জেলায়।
সরকারি হিসেবেই চলতি বছর সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯ হাজার ৫১৩ জন, মারা গেছেন ১৪ জন৷ তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এই রোগে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়িয়েছে৷
ডেঙ্গু আক্রান্তদের একটা বড় অংশ ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে৷ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে নতুন-পুরনো মিলিয়ে ৭০৬ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন৷
এই হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান ডয়েচে ভেলেকে জানান, এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশিরভাগই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত৷
অধ্যাপক রহমান বলেন, ‘‘কেউ হাসপাতালে আসার পর রক্ত পরীক্ষা করলেই বোঝা যায় তার আগেও ডেঙ্গু হয়েছিল কি না ৷ তবে রোগীর ম্যানেজমেন্টে ওটার কোনো দাম নেই৷ এজন্য আমরা আর ওই পরীক্ষাটা করি না৷ তবে এবার যারা মারা যাচ্ছে বা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই দ্বিতীয়বার আক্রান্ত৷ আমরা ধরেই নেই সিভিয়ার ডেঙ্গু বা ডেঙ্গু শক সিনড্রম মানেই হলো সেকেন্ড অ্যাটাক৷''
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুল্লাহ শাহরিয়ারও বলছেন, এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের বেশিরভাগই দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত৷
ডয়েচে ভেলেকে তিনি বলেন, এবারের ডেঙ্গুর তীব্রতা বেশি হওয়ার সহজেই বলে দেওয়া যায় বেশিরভাগই দ্বিতীয় দফায় আক্রান্ত হয়েছেন৷ প্রথম দফায় ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু হয় বলে অনেকে তা বুঝতেই পারেন না৷ কারণ শরীরে কোনো প্রভাব পড়ে না৷
‘‘আগে জ্বরের মধ্যে ২/৩ দিনের একটা গ্যাপ থাকত, ওই গ্যাপে শক হত, এখন জ্বর হওয়ার একিদন পর থেকে শক শুরু হয়৷ এবার বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে, জ্বরের কোনো গ্যাপ নেই, ফলে শকে চলে যাচ্ছে৷''
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক সময় রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয় না জানিয়ে আবদুল্লাহ বলেন, রোগীর অবস্থা যে খারাপের দিকে যাচ্ছে অনেক সময় তা বোঝা যায় না৷
একবার যারা ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের সবথেকে বেশি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে এই চিকৎসক বলেন, ''একবার যাদের ডেঙ্গু হয়েছে তাদের সবথেকে বেশি সতর্ক থাকতে হবে৷ কারণ দ্বিতীয়বার কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে মাত্রা হয় ভয়ঙ্কর৷''
যেভাবে বোঝা যাবে আগেও ডেঙ্গু ছিল কি না
কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন কি না তা রক্তের একটি পরীক্ষা করিয়েই নিশ্চিত হওয়া যায়৷
হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এল ই ফাতমী ডয়েচে ভেলেকে বলেন, চারটি সিরোটাইপ দিয়ে যে কারো চারবার ডেঙ্গু হতে পারে৷ কেউ একটি সিরোটাইপে আক্রান্ত হলে বাকী তিনটিতেও আক্রান্ত হতে পারে৷
‘‘প্রথমে ডেঙ্গু এনএসওয়ান এন্টিজেন দেখি, পাঁচদিন পরে এন্টিবডি অর্থাৎ আইিজিজি, আইজিএম দেখি৷ আইিজিজি পজিটিভ থাকলে বোঝা যায় আগে ডেঙ্গু হয়েছিল৷ আর আইজিএম পজিটিভ হলে বোঝা যায় এবারের জ্বরটা ডেঙ্গু৷''
অবশ্য এবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের সবাই দ্বিতীয় বা তৃতীয় দফায় আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করে জানা যায় না৷ তার মতে, আগে যাদের ডেঙ্গু হয়নি তারাও মারাত্মক আক্রান্ত হতে পারে৷ কারণ এবার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েই শক সিনডমে চলে যাচ্ছে এবং ব্রেনে রক্তক্ষরণ হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটছে৷
এছাড়া ভাইরাসজিনত কারণে হৃদপিণ্ডে সংক্রমন হয়েও ডেঙ্গু রুগীরা মারা যাচ্ছে বলে জানান তিনি৷
শহীদুল ইসলাম