ডয়চে ভেলের আফগান সাংবাদিকেরা জার্মানিতে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলের বিষয়টি যখন প্রায় নিশ্চিত মনে হচ্ছিল তখন ডয়চে ভেলে তার সব প্রতিবেদকদের কাবুলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল৷
আহমেদের গল্প
ঐ সময় আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরিফ শহরে ছিলেন আহমেদ৷ কয়েক বছর ধরে তিনি জার্মানিতে ডয়চে ভেলেতে কাজ করছেন৷ এক আত্মীয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনি আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন৷ তালেবানের ক্ষমতা দখল প্রক্রিয়া শুরুর পর তিনি তার স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে দ্রুত কাবুল পৌঁছান৷ কিন্তু সেই সময় কাবুল বিমানবন্দরে দেশ ছাড়তে চাওয়া অনেক মানুষের ভিড় ছিল৷ অনেক চেষ্টার পরও বিমানবন্দরে পৌঁছতে না পেরে একসময় তাকে বাধ্য হয়ে পরিবারসহ ভূগর্ভস্থ এক দোকানে আশ্রয় নিতে হয়েছিল৷ এরপর তালেবান ক্ষমতা দখল করলে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ডয়চে ভেলের অন্য সাংবাদিক ও তাদের পরিবারের সঙ্গে আহমেদ ও তার পরিবার সড়কপথে পাকিস্তান সীমান্তে পৌঁছায়৷ কিন্তু সীমান্তের কাছে তালেবানের হাতে ধরা পড়েছিলেন আহমেদ৷ ‘‘আমি আসলেই মনে করেছিলাম পৃথিবীতে ওগুলোই আমার শেষ মুহূর্ত,'' ঐ সময়ের কথা এভাবেই স্মরণ করছিলেন আহমেদ৷ তার শুধু কাবুলে দেখে আসা মৃতদেহের ছবি মনে পড়ছিল৷ এরপর জার্মানিতে থাকা তার সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনার পর আহমেদকে ছেড়ে দেয়া হয়৷ এরপর সীমান্ত পার হয়ে ইসলামাবাদ পৌঁছান তিনি৷ সেখানে কিছুদিন থেকে ভিসা প্রক্রিয়া শেষ করে জার্মানি পৌঁছেছে আহমেদ ও তার পরিবার৷
ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের নিরাপদে ও বৈধভাবে জার্মানিতে পৌঁছার পেছনে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, কাবুলের জার্মান দূতাবাস ও রাষ্ট্রদূতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল৷
মোহাম্মদের গল্প
আফগানিস্তানের হাজারা সম্প্রদায়ের সদস্য মোহাম্মদ তিন বছর ধরে ডয়চে ভেলের প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেছেন৷ তিনিও স্ত্রী ও তিন কন্যাসহ জার্মানি পৌঁছেছেন৷
ডেকুণ্ডি প্রদেশের বাসিন্দা মোহাম্মদ জানান তার এলাকায় তালেবান জোর করে মানুষের ঘরবাড়ি, জমিজমা দখল করছে৷ ‘‘তালেবান শুধু বলছে যে এসব এখন তাদের,'' বলেন মোহাম্মদ৷
আহমেদসহ ডয়চে ভেলের চার প্রতিবেদক তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে যাওয়ার পর তালেবান সেখানে হামলা করেছে৷
জার্মানিতে নতুন জীবন
জার্মানিতে থাকা এক আফগান সাংবাদিকের ভাই বোন ও তার বাবাও জার্মানিতে পৌঁছেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে আমরা অনেক কেঁদেছি৷ আর কোনো অশ্রু বাকি নেই৷''
জার্মানিতে আসা সাংবাদিকদের সবাই ডয়চে ভেলের বন কার্যালয়ে কাজ করবেন৷ তাদের জন্য বন ও কোলন শহরে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ডয়চে ভেলের প্রধান সম্পাদক মানুয়েলা কাস্পার-ক্লারিজ বলেন, ‘‘এটা খুবই স্বস্তির বিষয় যে অবশেষে আমাদের সহকর্মীরা তাদের পরিবারসহ নিরাপদে জার্মানিতে পৌঁছেছেন৷ এখন তারা বন শহরে আমাদের সদর দপ্তর থেকে তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারবেন৷''
‘‘টিভি, অনলাইন ও সামাজিক মাধ্যমের পাশাপাশি আমরা মাত্রই শর্টওয়েভ রেডিওতে একটি নতুন অনুষ্ঠান শুরু করেছি৷ এর মাধ্যমে যত বেশি সম্ভব আফগানের কাছে পৌঁছাতে চাই আমরা৷ আফগানিস্তানে আফগান সাংবাদিকদের অবস্থা এখন বেশ কঠিন৷ কিন্তু সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটছে যেগুলো নিয়ে রিপোর্ট করা উচিত,'' বলেন তিনি৷
জার্মানি ও সারা বিশ্বে কর্মরত ডয়চে ভেলের কর্মীরা আফগান প্রতিবেদকদের প্রতি দারুন সহমর্মিতা দেখিয়েছে৷ তাদের জন্য একটি দান কর্মসূচি ও ‘পেট্রোনেজ' স্কিম চালু করেছে৷ আফগানিস্তানের পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করতে একটি টাস্ক ফোর্সও গঠন করা হয়েছে৷
ডয়চে ভেলের সাংবাদিকদের জার্মানিতে নিয়ে আসতে সহায়তা করায় জার্মান সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ডয়চে ভেলের মহাপরিচালক পেটার লিমবুর্গ৷ তবে আরও সহায়তা প্রয়োজন বলেও জানান তিনি৷ লিমবুর্গ বলেন, ‘‘নিরাপত্তা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে৷ তাই আফগানিস্তানে এখনও থাকা ডিডাব্লিউর কর্মী ও তাদের আত্মীয়স্বজনদের জার্মানিতে নিয়ে আসতে জোরেশোরে কাজ করে যেতে হবে৷''
এখনও আফগানিস্তানে ডয়চে ভেলের দুজন প্রতিবেদক ও তাদের পরিবার রয়েছে৷ এছাড়া জার্মানিতে থাকা ডয়চে ভেলের এক প্রতিবেদকের পরিবার রয়েছে আফগানিস্তানে৷
ইলিয়ট ডুগলাস/জেডএইচ