ঢাকা-চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা চলছেই
যে দেশে নদী আছে জালের মত, নগর গড়ে উঠে নদীর তীরে, নগরে পানি নিষ্কাশনের জন্য থাকে প্রাকৃতিক খাল, সেই দেশে বছরের পর বছর ধরে নগরে চলে জলাবদ্ধতা৷
চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতার শুরু
সমুদ্রের খুব কাছে থাকায় খাল-নদীর এই নগরের মানুষ জোয়ারের সঙ্গে পরিচিত নগরীর গোড়াপত্তন থেকেই৷ জলাবদ্ধতার ইতিহাস নিয়ে সবচেয়ে শক্তিশালী মত হচ্ছে, এখানে এই সমস্যার শুরু হয়েছে ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকে৷ এরপর সময়ে সময়ে এটা কেবল বেড়েছে৷ বৃষ্টি ও আটকে যাওয়া জোয়ারের পানিতে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়৷ এ জন্য খাল দখল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনাকে দায়ী করা হয়৷
চাক্তাই খাল
এক সময় চট্টগ্রামের চাক্তাই খাল ছিলো নগরীর প্রাণ৷ কয়েক দশক পূর্বেও এই খাল দিয়েই বহদ্দারহাট পর্যন্ত যেতো সওদাগরী নৌকা৷ তবে এখন আর সেই অবস্থায় নেই এই খাল৷ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ অংশে খালটি দখল হয়ে আছে৷ অভিযোগ রয়েছে, দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউই তাদেরকে উচ্ছেদ করতে কার্যকর উদ্যোগ নেয় না৷ এখন এই খালকে বলা হয় নগরীর দুঃখ৷
নতুন দুঃখ মহেশখালের বাঁধ
২০১৫ সালের চট্টগ্রামে নতুন এক দুঃখ যুক্ত হয়েছে৷ জোয়ারের পানি থেকে বাঁচতে নগর কর্তৃপক্ষের অনুরোধে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ মহেশখালে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করে৷ পরের বছরই এটি নগরীর বিশাল একটি এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ২০১৬ সালে এই বাঁধ অপসারণে সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর সাধারণ মানুষ বাঁধটি কাটতে গেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়৷ এবার মেয়র বলছেন, সেখানে স্থায়ী স্লুইস গেট নির্মাণ করা হবে৷
খালের নৌকা রাস্তায়
চট্টগ্রাম নগরে মোট ১৭টি খাল রয়েছে৷ অধিকাংশ খালই বেদখল হয়ে নৌ চলাচল কঠিন বা অসম্ভব হয়ে গেছে৷ তবে বর্ষায় সেই নৌকা প্রায় প্রতি বছরই রাস্তায় ওঠে আসে৷ অবশ্য কারো কারো মতে খালের সংখ্যা ২৫টি৷
মূল ইস্যু, তবু দৃষ্টি নেই
নগরীর এই জলাবদ্ধতাই সেখানকার নির্বাচনসহ জনপরিসরের অন্য আলোচনায় প্রাধান্য পেলেও এই সমস্যা থেকে উত্তরণে কার্যকর উদ্যোগ নেই৷ অবশ্য জনপ্রতিনিধি হলেও বর্তমান কাঠামোয় নগর শাসনে সিটি কর্পোরেশনের একক ক্ষমতাও নেই৷ সরকারি নানা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে এই প্রতিষ্ঠানকে কাজ করতে হয়৷ খাল উদ্ধারে গেলে প্রভাবশালীদের চাপে কর্পোরেশনের কর্তারাও পিছুটান দেন৷ এমনকি খালের জায়গায় কর্পোরেশনের ভবন থাকার অভিযোগও রয়েছে৷
পানিতে ডোবে রাজধানীও
যে ঢাকা নগরে এখনো সুপেয় পানির তীব্র সংকট রয়েছে, মানুষকে ফুটিয়ে বা বিশুদ্ধ করে পানি খেতে হয়, সেই নগরে এখনো অল্প বৃষ্টিই বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়ায়৷ ডুবে যায় নগরীর বিভিন্ন সড়ক৷
হাতিরঝিলের রাস্তায়ও পানি
ভীষণ অপরিকল্পিত শহর ঢাকার জলাধার রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে৷ নগরীর চারপাশ দখল উৎসবের মাঝে অবশ্য উচ্চ আদালত হাতিরঝিলে গড়ে উঠা একটি স্থাপনা উচ্ছেদে কঠোরভাবেই আদেশ দিয়েছে৷ যদিও সেই আদেশ এখনো বাস্তবায়িত হয়নি৷ তবুও নগরীর জলাধার ব্যবস্থাপনায় হাতিরঝিলকেই সবচেয়ে পরিকল্পিত এলাকা মনে করা হয়৷ তবে বৃষ্টির পানি জমে এই প্রকল্পের রাস্তায়ও৷
উন্নয়ন দুর্ভোগ
বাংলাদেশে অর্থ বছর শুরু হয় জুলাই থেকে৷ নগরের বাৎসরিক বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে অর্থ ছাড়ের পর কাজ শুরু করতে করতে বর্ষা এসে যায়৷ নগরীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিবছরই এটা জলাবদ্ধতার সাথে নতুন মাত্রা যোগ করে৷
খাল দখল ঢাকায়ও
ঢাবির বঙ্গবন্ধু হলের পাশে মৃতপ্রায় একটি পুকুর রয়েছে৷ তবে চমক হচ্ছে, এক সময় এটি ছিল একটি খাল৷ ঢাকার বহুল আলোচিত হাতিরঝিল নদী ছিল৷ পূর্বের বালুনদী থেকে পশ্চিমে তুরাগ পর্যন্ত এটি বিস্তৃত ছিলো৷ নড়াই নামে এই নদীর পূর্বাংশ এখনো স্বনামে রয়েছে৷ পশ্চিমে কোথাও এটা রামপুরা খাল, কোথাও হাতিরঝিল, কোথাও বেগুনবাড়ি খাল নামে পরিচিত৷ বাকি অংশ হারিয়ে গেছে৷ পুরাতন এই নদীর দুই তীরে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা রয়েছে৷