চরমোনাই পীরের ভাইয়ের বিতর্কিত মন্তব্য
১৪ জানুয়ারি ২০১৭তবে নতুন বছরের শুরুতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বই প্রকাশিত হওয়ার পর বক্তব্যটি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ কারণ ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে যা দাবি করেছিলেন নতুন পাঠ্যপুস্তকে তার প্রতিফলন কিছুটা হলেও পাওয়া গেছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন দলটির প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমেদ আবদুল কাইয়ূম৷ ইউটিউব এবং টিউবচপ নামে সামাজিক যোগাযোগের দু'টি মাধ্যমে ফয়জুল করীমের বক্তব্যটি রয়েছে৷ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের ভাই বলে জানা গেছে৷
ফয়জুল করীম তাঁর বক্তব্যে বলেছিলেন, ‘‘১৯১১ সালে বাংলাদেশের রাজধানীর বুকে যে ইউনিভার্সিটির প্রস্তাব করা হয়েছিল একমাত্র হিন্দুদের বিরোধিতার কারণে সেটা সম্ভব হয়নি৷ সেই ইউনিভার্সিটি স্থাপন করা হয়েছিল ১৯২১ সনে নবাব সলিমুল্লাহর প্রস্তাবে৷ কোনো খ্রিষ্টান, কোনো হিন্দু বা নাস্তিকদের প্রস্তাবে এই ইউনিভার্সিটি করা হয়নি৷ কাজেই ইউনিভার্সিটি মুসলমানদের ইউনিভার্সিটি, এখানে কোনো নাস্তিক থাকতে পারবে না৷’’
এছাড়া তিনি উল্লেখ করেন সিলেবাসে যে বই আছে তাতে দেব-দেবীর নামে কোরবানি করে খাওয়া বৈধ বলা হয়েছে৷ এছাড়া ‘এই লাল গরুটা’ কবিতার মধ্যে গরুকে দেবী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি৷
ফয়জুল করীম বলেছেন, যেই সিলেবাসের মধ্যে নবী (সা:) এর জীবনী থাকবে না, ওমরের জীবনী থাকবে না, যেখানে এমন মহৎ লোকদের জীবনী থাকবে না – এরকম সিলেবাসের বই বাংলাদেশে পড়ানো হবে না, এমনকি পড়তে দেয়া হবে না৷
ঐ ভিডিওতে সিলেবাস পরিবর্তনের দাবিতে সরকারের বিরুদ্ধে আরো অনেক কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল৷
চরমোনাই পীরের মুখপাত্র যা বললেন
এ প্রসঙ্গে চরমোনাই পীরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি৷ তবে শুক্রবার তাঁর পক্ষে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেন দলের প্রচার সম্পাদক আহমেদ আবদুল কাইয়ূম৷ তিনি দাবি করেন, ‘‘পীর সাহেব ঐ সমাবেশে দাবি তুলেছিলেন বলেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের নতুন বইয়ে পরিবর্তন আনা হয়েছে৷ এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছি৷ নির্বাচন কমিশন নিয়ে সংলাপে আমরা যখন রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়েছি সেখানে রাষ্ট্রপতিকেও ধন্যবাদ জানিয়েছি৷ তবে আমাদের দাবি এখনো পুরোটা মানা হয়নি৷''
এই বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) মুসলমানদের – হিন্দু, খ্রিষ্টান বা নাস্তিকদের নয়৷ এটা বলতে ফয়জুল করীম কী বোঝাতে চেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘‘তিনি বুঝাতে চেয়েছেন স্যার সলিমুল্লাহ মুসলমান৷ তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয় মুসলিম চিন্তাধারা থেকে স্থাপন করেছেন৷ ৯২ ভাগ মুসলমানের দেশ এখানে মুসলমানিত্ব শিখবে৷ এখানে নাস্তিকতার জায়গা হবে না৷''
ডয়চে ভেলে: সিলেবাসে কি নাস্তিক্যবাদী পড়াশোনার ব্যবস্থা আছে?
আবদুল কাইয়ূম: সিলেবাস তো আমরা দেখিনি৷ তবে এখানে মাদ্রাসার ছাত্রদের কম সুযোগ দেয়া হয়৷ হিজাব পরায় বাধা দেয়া হয়৷ নাস্তিক্যবাদী আস্ফালন করা হয়৷
তাহলে এখানে শুধু মুসলমানরাই পড়বে?
- না অন্য ধর্মের লোকরাও পড়বে৷ কিন্তু সংখ্যালঘুদের শিক্ষানীতি চলবে না৷ তারা আলাদাভাবে তাদের ধর্ম পড়বে৷
পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু বা অন্য ধর্মের মহাপুরুষদের জীবনী না থাকলে তারা কেন মুসলিম মহাপুরুষদের জীবনী পড়বে?
- তাদের পড়ার দরকার নাই৷ তাহলে আমরা সব ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা সিলেবাস ও শিক্ষা ব্যবস্থা চাই৷ একসঙ্গে পড়ার দরকার নাই৷
শোলাকিয়ার ইমামের প্রতিক্রিয়া
শোলাকিয়ার ইমাম মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কোনো সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানতো কোনো একক ধর্মের অনুসারীদের হতে পারে না৷ তবে বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকতে পারে৷ আমাদের হয়ত অনেকেই জানেন না যে রাজা রামমোহন রায় মাদ্রাসায়ও পড়েছেন৷''
অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের পবিত্র কোরান শরিফে ইহুদি ধর্মের হযরত মুসা, খ্রিষ্টান ধর্মের হযরত ইসার নাম রয়েছে৷ তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে৷ ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে কোরান শরীফে ‘জারকিফ' শব্দ দিয়ে বৌদ্ধদের বোঝানো হয়েছে৷ তাই সাধারণ পাঠ্যপুস্তকে অন্য ধর্মের যারা অনুসরণীয় তাঁদের জীবনী থাকতে বাধা কোথায়? যা ভালো তা নিতে দোষের কিছু নেই৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘সাধারণ শিক্ষায় হিন্দু, মুসলমান, খ্রিষ্টান – এ সব ধর্মীয় ভেদ থাকতে পারে না, এটা কূপমন্ডূকতা৷ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসে যদি নাস্তিকতা থাকেও তারপরও সব শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানকে নাস্তিক্যবাদী বলা অনুচিত৷''
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক ড. সফিউল আলম ভূঁইয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন প্রতিষ্ঠা হয়, তখন এটা কোনো সাম্প্রদায়িক চিন্তা থেকে প্রতিষ্ঠিত হয়নি৷ নবাব সলিমুল্লাহসহ আরো যাঁরা এটা প্রতিষ্ঠার পেছনে কাজ করেছেন, তাঁরা কোনো সাম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষ ছিলেন না৷ তাঁরা বাংলাদেশের সবার উচ্চশিক্ষার জন্য এটা প্রতিষ্ঠা করেন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় হলো মুক্তচিন্তার জায়গা৷ এখানে সব ধরনের জ্ঞানের চর্চা হয়৷ এখানে সব ধরনের প্রশ্ন করা যায়৷ আর এই প্রশ্নের মধ্য দিয়েই জ্ঞান বিকশিত হয়৷ কোনো সাম্প্রদায়িক বা কূপমন্ডূকতার জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই৷’’ সফিউল আলম বলেন, ‘‘শুরু থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনগ্রসর শ্রেণি, সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলেছে৷ আর তা বলেই যাবে৷’’
প্রতিবেদনটি আপনার কেমন লাগলো? লিখুন নীচের ঘরে৷