ঢাকার মতো আকর্ষণীয় করে আরো শহর গড়ার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের
৫ আগস্ট ২০১১বাংলাদেশে এমন সমস্যার পাশাপাশি রয়েছে সম্ভাবনার ভাণ্ডার বলে মত আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের৷
বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে গৃহহীন হচ্ছে মানুষ৷ কিন্তু শুধু প্রকৃতির ছোবলেই নয়, অনেক জায়গায় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও আদি বাসিন্দাদের ভিটে-মাটি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়৷ তবে এসব মানুষের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের জন্য সঠিক পরিকল্পনা এবং সুব্যবস্থা থাকা জরুরি৷ একদিকে যেমন মানুষকে দুর্যোগ মোকাবিলা এবং ব্যবস্থাপনায় দক্ষ হতে হবে৷ অন্যদিকে, উন্নয়ন কাজের ক্ষেত্রে তাদের পুনর্বাসনের এবং সুষ্ঠু বিন্যাসের জন্যও সরকারের পক্ষ থেকে উদ্যোগ থাকতে হবে৷
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব একটি সমস্যা৷ কিন্তু সেখানে আরো এমন কিছু সমস্যা আছে যেগুলো পরিবেশ সংক্রান্ত না হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সেগুলোকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে৷ গৃহহীন মানুষ অভিবাসন তথা স্থানান্তরিত হওয়ার যে সমস্যা তা কীভাবে মোকাবিলা করতে পারে এবং দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এসব বিষয় নিয়ে বাংলাদেশে কাজ শুরু করছে ইন্ডিপিন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট - আইসিসিসিএডি৷ তাদের কার্যক্রমের ধরণ এবং মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি দেখতে সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেছে জার্মানির বন শহরে অবস্থিত জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধি দল৷
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা এবং মাওয়া ঘাট অঞ্চল পরিদর্শন করেন জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোপীয় অঞ্চলের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ইয়াকব রিনার এবং পরিবেশ ও মানব নিরাপত্তা বিষয়ক ইন্সটিটিউটের শাখা প্রধান ড. কোকো ওয়ার্নার৷ বাংলাদেশ সফরকালে তাঁরা সেখানে নদী ভাঙন, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস আইলা এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার বাস্তুহারা মানুষের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন৷ এছাড়া এসব মানুষের সুষ্ঠু পুনর্বাসনের জন্য সেখানে গোষ্ঠী ভিত্তিক প্রকল্পের মাধ্যমে তাদেরকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলার ব্যাপারে সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন৷
ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে ড. ইয়াকব রিনার জানান, ‘‘মাওয়া ঘাট অঞ্চলে পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে৷ এই সেতু নির্মাণের ফলে সেখানে অপার সম্ভাবনার সুযোগ রয়েছে কিন্তু একইসাথে ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর জন্য নানা ঝুঁকি রয়ে গেছে৷ আমরা মাওয়া অঞ্চলে গিয়ে এসব মানুষের অবস্থা সম্পর্কে দেখা ও জানার কিছুটা সুযোগ পেয়েছি৷'' বাংলাদেশের প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের জীবনে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে ড. রিনারের পর্যবেক্ষণ, ‘‘নিচু এলাকা হওয়ার কারণে বিশেষ করে বন্যার হুমকির মুখে বিস্তীর্ণ জনপদের মানুষ৷ তবে সেখানে আমি এটিও দেখেছি যে, মানুষ বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও জীবনযাত্রা সচল রাখতে কীভাবে বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করছে৷ যেমন তারা বিদ্যালয় এবং হাসপাতালে প্রবেশ পথ এবং বের হওয়ার পথ উঁচু করে তৈরি করছে৷ অবশ্য আমরা সেখানে যেমনভাবে মানুষের জন্য নানা হুমকি লক্ষ্য করেছি, ঠিক একইসাথে অপার সম্ভাবনাও দেখেছি৷''
সমস্যার কথা বলতে গিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব একটি ঝুঁকি৷ তবে সেখানে আরো এমন কিছু ঝুঁকি রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন যেগুলোর মাত্রা আরো বাড়িয়ে দিতে পারে৷ যেমন নানা কারণে ঘরছাড়া মানুষ একমাত্র ঢাকা শহরের দিকেই ছুটছে৷ তাদের সবার কাছে একমাত্র আকর্ষণীয় স্থান হলো রাজধানী ঢাকা৷ ফলে সেখানে মানুষের সংকুলান করাটা আরো কঠিন হয়ে পড়ছে৷ তাই দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও এমন শহর গড়ে তুলতে হবে যাতে করে মানুষে সেগুলোতেও ছুটে যাওয়ার জন্য আকর্ষণ বোধ করে৷'' বাংলাদেশের সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকগুলোকে তিনি থ্রি পি'র ছকে বেঁধে দেখার কথা বললেন৷ অর্থাৎ প্রবলেমস, পসিবিলিটিস এবং পার্টনার্স৷ তাঁর মতে, সেখানে সমস্যা থাকলেও রয়েছে সম্ভাবনা এবং সেসব সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলার জন্য চমৎকার সহযোগী সংগঠন৷
ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিসিসিএডি'র প্রধান ড. সেলিমুল হক জানান, ‘‘জাতিসংঘ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থাগুলোর সাথে যৌথভাবে আমরা বাস্তুহারা বা স্থানচ্যুত মানুষের সুষ্ঠু পুনর্বাসন এবং তাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়ার উপরে দীর্ঘ মেয়াদি অ্যাকশন রিসার্চের প্রকল্প গ্রহণ করছি৷ বাংলাদেশের ১৮টি জায়গায় এই প্রকল্পের মাঠ পর্যায়ের কার্যালয় হবে৷ এর আওতায় পল্লী থেকে মানুষের শহরে গমনের ধারা ও সমস্যা এবং তাদের জীবনচক্র সুষ্ঠুভাবে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে কী করণীয় এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা হবে এবং সরকারের কাছেও সুপারিশ হিসেবে সেগুলো তুলে ধরা হবে৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন