ঢাকায় পার্বত্য মেলা
বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন-কৃষ্টি-সংস্কৃতি, পোশাক-পরিচ্ছদ, ইতিহাস-ঐতিহ্য সমতলের মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ৪ দিনের ‘পার্বত্য মেলা’ শুরু হয়েছে৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান
ঢাকার সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এ মেলা উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালেদ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং৷
নতুন ভেন্যু
পার্বত্য মেলা চালু হওয়ার পর থেকে গত বছর পর্যন্ত ঢাকার বেইলি রোডের শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সে আয়োজিত হলেও এ বছর সম্পূর্ণ নতুন ভেন্যুতে আরো বড় পরিসরে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা জানান৷ এতে ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েই উপকৃত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা৷
ফলমূল ও সবজির সমাহার
পার্বত্য মেলায় বিভিন্ন স্টলে অর্গানিক ফলের বাহারি আয়োজন দেখা যায়৷ মিষ্টি ভুট্টা, চালতা, পাহাড়ি কমলা, কলা, পেঁপে, আনারস, বড়ই, বেল, মো আলু, মিষ্টি আলু, বাদাম, ড্রাগন ফল, তেঁতুল, আমলকি, কচু, কাঁঠাল, নারিকেল, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি পণ্যের সমাহার দেখা যায় মেলায়৷
হাতির দাঁতের চুড়ি
পার্বত্য মেলায় শতাধিক স্টলে পার্বত্য এলাকার মানুষদের কৃষ্টি-সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য বিষয়ক নানান পসরার সমাহার দেখা যায়৷ তেমনি এক পণ্য হাতির দাঁতের চুড়ি৷ বিশেষ এ চুড়ি নিয়ে দর্শনার্থী এবং ক্রেতাদের ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়৷ চুড়ি জোড়া ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান বিক্রেতা৷
বাঁশ চা
পার্বত্য মেলা প্রাঙ্গণের একটি অংশে আয়োজন করা হয়েছে ফুড কর্নারের৷ এখানে একাধিক দোকানে দেখা মেলে ব্যাম্বু টি বা বাঁশ চায়ের৷ বিক্রেতা বাসন্তী চাকমার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ চা রান্না থেকে শুরু করে পরিবেশন সব-ই হয় বাঁশের পাত্রে৷ সাধারণ চায়ের মতোই এর উপকরণ তবে এক্ষেত্রে শুধু গরুর দুধ ব্যবহার করা হয়৷ বাঁশের পাত্রে রান্না হয় বলে স্বাদটা একটু ভিন্নও হয়৷ চা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কাপ ৪০ টাকায়৷
কাপ্তাইয়ের মাছ
পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মানুষের সাথে সমতলের মানুষের মিলন ঘটানো পার্বত্য মেলায় খাবারের দোকানগুলোতে দেখা মেলে হরেক পদের মাছের৷ এর মধ্যে রুই, পোয়া, তেলাপিয়া মাছ অন্যতম৷ বিক্রেতারা জানান, এ সকল মাছ কাপ্তাই লেকের৷ মাছ ছাড়াও কাঁকড়া ও শুটকির বিভিন্ন পদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলেও জানান তারা৷
হাতে বোনা পণ্যের পসরা
মেলায় বড় একটা অংশের স্টল ছিল আদিবাসী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর হাতে বোনা বিভিন্ন পণ্যের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে৷ এখানে ফতুয়া, শাল, লুঙ্গি, গামছা, পিনন খাদি, বিছানার চাদর, ওড়না, কামিজ, থ্রি-পিস, মানিব্যাগ, মাফলার, সোয়েটার, বাচ্চাদের কাপড়, বিভিন্ন আকারের ব্যাগ, ছাতা, বাশ-বেতের পণ্যসহ শতাধিক পণ্যের সমাহার দেখা যায় মেলাটিতে৷
বাঁশ গোড়ান চিকেনের প্রচুর চাহিদা
পার্বত্য মেলায় বাঁশ গোড়ান চিকেনের প্রচুর চাহিদা দেখতে পাওয়া যায়৷ এ বিষয়ে একাধিক ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যাম্বু চিকেনের প্রধান উপকরণ মুরগিগুলো তাঁরা স্থানীয়ভাবে লালন-পালন করেন বলে এর স্বাদ একটু ভিন্ন৷ তাই এ মাংসের পদটি নিয়ে সমতলের মানুষের আগ্রহ রয়েছে বেশ৷ ব্যাম্বো চিকেনে বাঁশের আকার ও মাংসের পরিমাণ ভেদে দাম ১০০ থেকে ৭৫০ টাকা পর্যন্ত বলে জানান বিক্রেতারা৷
তুলা গাছ
মেলায় কৃষিপণ্যের স্টলগুলোতে দর্শকদের আগ্রহ ছিল লক্ষ্য করার মতো৷ সাধারণ দর্শকদের আগ্রহের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ছিল তুলা গাছ৷ তবে এ গাছগুলো শুধু প্রদর্শনীর জন্য, বিক্রির জন্য নয় বলে জানান বিক্রেতারা৷
শীতের পিঠা
মেলায় পাহাড়ি অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি বাঙালিদেরও কয়েকটি স্টল দেখতে পাওয়া যায়৷ পিঠার দোকানে সেমাই পিঠা, মুখ পাকন পিঠা, পুলি পিঠা, নকশী পিঠা, মালপোয়া পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, চিতই পিঠাসহ হরেক রকম পিঠার আয়োজন করা হয়েছে৷
মিনি বায়োস্কোপ
পার্বত্য মেলায় দেখা যায় মিনি বায়োস্কোপের৷ এর মালিক আবদুর রহমান জানান, মেলার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আজকের জন্য বায়োস্কোপ প্রদর্শনী ফ্রি, তবে আগামীকাল থেকে টাকা লাগবে৷
দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়
মেলার উদ্বোধনী দিনেই সাধারণ দর্শনার্থীদের ব্যাপক আগ্রহ এবং উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে৷ আয়োজকরা জানান, বেইলি রোডের মেলার আয়োজনেও তাঁরা ভালো সাড়া পেয়েছেন৷ এবার মেলার পরিসর বড় হওয়ায় বেচা-কেনা আগের চেয়ে ভালো হবে বলেও আশা করছেন বিক্রেতারা৷
আদিবাসীদের আগ্রহ
পার্বত্য এলাকার জনপদের বাসিন্দাদের সাথে সমতলের মানুষের নানা বিষয়ে পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার এ পার্বত্য মেলায় বাঙালিদের পাশাপাশি ঢাকায় বসবাসরত আদিবাসীদেরও মেলায় ছিল সরব উপস্থিতি৷ খাবারের দোকানগুলোতে তাঁদের উপস্থিতি ছিল বিশেষভাবে লক্ষণীয়৷
মেলার পণ্যগুলো আমাদের ঐতিহ্য বহন করে
ঢাকার সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী শাহরুননেসা নীলা মেলার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, মেলার পণ্যগুলো হাতে তৈরি হওয়ায় মান ভালো এবং দামও আমার কাছে বেশি লাগছে না৷ এসব পণ্য আমাদের দেশের পার্বত্য অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে৷ এখান থেকে নিজের ব্যবহার এবং কাছের মানুষদের জন্য উপহার হিসেবে দেওয়ার জন্য কেনা হয়৷
তৈরি হচ্ছে পিনন খাদি
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে পার্বত্য মেলায় বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি পাহাড়ি অধিবাসীদের পরনের কাপড়ের প্রতি সাধারণ ক্রেতাদের ছিল ব্যাপক আগ্রহ৷ একটি স্টলে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে পিনন খাদি কাপড় বোনা হচ্ছে৷ দুই পিস সেটের খাদির দাম তিন হাজার থেকে ছয় হাজার টাকার মধ্যে রাখা হচ্ছে৷
পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এই মেলা জনসাধারণের জন্য খোলা থাকবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত৷