ঢাকায় বিকল্প যান সাইকেল
২০ আগস্ট ২০১৪সামহয়্যার ইন ব্লগে কাজী রায়হান লিখেছেন,
‘‘আপনি কেন সাইকেল চালাবেন?'' তিনি লিখেছেন, ‘‘আদাবর থেকে মতিঝিল যেতে চাইলে আপনাকে হেঁটে বা রিকশায় শ্যামলী আশতে হবে৷ শ্যামলী থেকে আল্লাহার নামে মতিঝিলগামী বাসে চড়ে বসতে হবে, এই ক্ষেত্রে বাসে আপনি সিট পাবেন কিনা সেটা নির্ভর করে শতভাগ ভাগ্যের উপর৷ লম্বা সময় টিকেট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখা যায় ৫০ জনের বাসে ১৫০ জন নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে আসল তখন বাসের দরজায় ঝুলে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকে না৷ যাই হোক কোনো ক্রমে যদি আপনি ঝুলে যেতে পারেন ধরে নিতে হবে আগামী দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এভাবেই ঝুলে থাকতে হবে৷''
তিনি অবস্থা বর্ণনা করেছেন এভাবে – ‘‘শ্যামলী থেকে মতিঝিল সর্বোচ্চ ১০ কিমি, মাত্র ১০ কিমি পথ আপনার যেতে খরচ হল দুই ঘণ্টা, সাথে অক্লান্ত পরিশ্রম৷ ক্লান্ত শ্রান্ত এবং বিরক্ত হয়ে আপনি অফিসে ঢুকছেন, দিন শুরু করছেন৷ একইভাবে অফিস ছুটির পরে সেই ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরছেন৷ তবে এবার সময় আরো বেশি লাগছে, কারণ সন্ধ্যায় ঢাকার ট্রাফিক আরো বেশি ভয়ংকর হয়ে ওঠে৷ আবারো সেই লাইন, ঝুলে যাওয়া, ঘেমে নেয়ে একাকার, পাবলিকের ঝগড়া, গালাগালি ইত্যাদি পারিপার্শ্বিক নেতিবাচক ঘটনা যা আপনার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে৷ আর এই মানসিক এবং শারীরিক ভোগান্তির কারণে বাড়ি ফিরেও আপনার মেজাজ হয়ত প্রায়ই খিটখিটে থাকে৷''
তিনি যাতায়াতের একটা হিসেব তুলে ধরেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘আপনি ব্যাপারগুলোকে মেনে নিয়েছেন৷ এভাবেই বছরের পর বছর ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট করে যাচ্ছেন, টাকা খরচ করে যাচ্ছেন আপনার ট্রান্সপোর্ট সিস্টেমে৷ একজন সাধারণ চাকুরিজীবী মানুষের অফিস এবং অন্যান্য স্থানে যাতায়াত বাবদ মাসে ন্যূনতম ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকা খরচ হয়৷ বছরে ২৪,০০০ টাকা থেকে ৬০,০০০ টাকা৷''
কাজী রায়হান তাই একটা বিকল্প উপায়ের কথা উল্লেখ করেছেন৷ বলেছেন সাইকেল কিনতে৷ লিখেছেন, ‘‘আপনার দিন শুরু হবে উৎফুল্ল মন এবং মানসিক প্রশান্তি নিয়ে৷ বাসের জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে না৷ কখন বাস আশবে সেই উৎকণ্ঠায় থাকতে হবে না৷ বাসা থেকে নিজের সাইকেলটা নিয়ে হেলমেট মাথায় চাপিয়ে বের হয়ে যাবেন৷ অফিস যদি শুরু হয় ১০ টায় তাহলে ৯:১৫ মিনিটে বের হলেই যথেষ্ট৷ একটি ভালো মানের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের সাইকেলের ন্যূনতম মুল্য – ১৩,৫০০ থেকে ২০,০০০ টাকা৷ ২০,০০০ টাকাকে যদি আপনি আপনার যাতায়াতের বিনিয়োগ হিসেবে ধরেন, তাহলে মাত্র দশ মাসেই আপনার টাকা উঠে আসে, আর সেই সাইকেলটি আপনি কম হলেও ৬-৭ বছর চালাতে পারবেন৷''
তিনি ঢাকার বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেছেন, ‘‘গত দুই বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে, এখন রাস্তায় অনেকেই সাইকেল চালাচ্ছেন৷ নিজেদের যাতায়াত সমস্যার সমাধান করছেন, বোনাস হিসেবে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সাইকেল বন্ধুদের সাথে একটু দূরে ঘুরে বেড়াতে যাচ্ছেন৷ সেগুলোর মূল্য টাকা দিয়ে নির্ধারণ করা যাবে না৷''
তিনি আরো বেশ কিছু টিপস দিয়েছেন সাইকেল আরোহীদের জন্য৷ শেষে লিখেছেন, ‘‘সাইকেল চালান, দেখবেন আপনার হাতে প্রতিদিন অনেক অবসর সময়৷ জীবনটা উপভোগ করুন দুই চাকায়৷''
এই ব্লগের মন্তব্যে সোহানী লিখেছেন,
‘‘কঠিনভাবে সহমত৷ এভাবে সবাই শুরু করলে আমরা মেয়েরাও সাহস করে একদিন নেমে পড়বো সাইকেল নিয়ে৷''
নীল আকাশ ব্লগার কাজী রায়হানকে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন৷ লিখেছেন, ‘‘এ জন্য একটা ফেসবুক ফ্যান পেজ খুলুন৷ আমরা তাতে বেশি বেশি লাইক দেব৷ সাইকেল আরোহীদের চমৎকার সব ছবি সেখানে আপলোড করব, যাতে মানুষ বেশি বেশি সাইকেল চালাতে অনুপ্রাণিত হয়৷''
এছাড়া ছোটদের প্রশিক্ষণের ব্যাপারেও লিখেছেন তিনি৷ লিখেছেন, ‘‘ছোটদের সাইকেল চালানোর প্রশিক্ষণ ক্যাম্প প্রত্যেকটি আবাসিক এলাকায় আমাদের উদ্যোগে চালু হতে পারে৷ প্রত্যেক স্কুলে সাইকেল স্ট্যান্ড তৈরি ও স্কুলের কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সাইকেল প্রশিক্ষণের আয়োজন করা যায়৷''
এ বছরের জুনে ঢাকায় সাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বন ও পরিবেশ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি ড. হাছান মাহমুদ৷
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ