ঢাকায় হিজড়াদের নিয়ে ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা
১৮ নভেম্বর ২০১১গ্রাম অঞ্চলে বা শহরতলিতে কোনো বাচ্চার জন্ম হলেই, দলে দলে এসে ভিড় করেন এঁরা৷ নবজাতককে কোলে করে নেচে বকশিশ নেন অথবা কখনও চাঁদা তোলেন বিভিন্ন দোকানে৷ অথচ, এঁদের দেখলে এখনও ভ্রূকুঞ্চন করেন অনেকেই৷ পরিবার, সমাজ এমনকি রাষ্ট্রও তাঁদের মানুষ হিসেবে প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দিতে প্রস্তুত নয়৷
এরই মধ্যে ‘আন্ডার দ্য রেইনবো' নাম দিয়ে এই ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিযোগিতার আয়োজন করে সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে ঢাকাস্থ জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বা ‘গ্যোটে ইনস্টিটিউট'৷ সহযোগী বন্ধু হিসেবে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘স্যোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি', সৃষ্টি, দৃক, ‘বয়েজ অব বাংলাদেশ' এবং স্বপ্রভা নামের বেশ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা৷
আয়োজকরা জানান, ‘আন্ডার দ্য রেইনবো'-র পরিকল্পনা অনেকটা আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার আদলে করা হয়েছে৷ অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও প্রতিযোগিতার মূল মটো – ‘বিউটি উইথ ব্রেন'৷ মানে শুধু দেখতে সুন্দর হলেই হবে না, মেধা ও প্রজ্ঞারও প্রমাণ দিতে হবে তাঁদের৷ থাকতে হবে সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয় নিয়ে জ্ঞান৷ আর তাই, সেরা ‘হিজড়া'-র মুকুট পরতে নানা রকম মহড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন প্রতিযোগীরা৷
এই যেমন, ধামাই শামীম৷ বার্তা সংস্থা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-কে তিনি বলেন, ‘‘আগে ফ্যাশন শো-তে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থাকলেও, আমি এমন একটা পরিসরে এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসে সত্যিই বেশ নার্ভাস৷'' ঢাকার শ্যামপুর থেকে আসা তিতাশারও ঐ একই অবস্থা৷ ‘‘আসলে যাঁদের বেশ-ভূষা, সাজ-গোজ সর্বদাই মানুষের হাসির পাত্র করে তোলে, তাঁদের এমন একটা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ সহজ কথা নয়'', জানান তিনি৷
হিজড়াদের অন্যতম সংগঠন ‘সাদা-কালো'-র প্রধান অনন্যার কথায়, ‘‘আমাদের সংগঠনের মোট সদস্য সংখ্যা ৭০৷ প্রথম দিকে তাদের ২০ জনের অংশগ্রহণ করার কথা থাকলেও, শেষ পর্যন্ত মাত্র ১১ জন এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছে৷ আমিও নিচ্ছি৷''
স্বাভাবিকভাবেই, নানা বৈষম্যের শিকার এই হিজড়াদের বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করাই এ উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য৷ তাই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতার পাশাপাশি, এ উৎসবে থাকছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, এমনকি মুক্ত আলোচনাও৷ শুক্রবার এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ী নির্ধারণ করা হবে৷
প্রতিবেদন: দেবারতি গুহ / বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক