ঢাবিতে অবৈধ ভর্তি চক্রের কুশীলব
২৯ জানুয়ারি ২০২০এই চক্র ভর্তি পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস করে৷ এভাবে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়া মোট ৭৮ ছাত্রের ভর্তি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ তার মধ্যে মঙ্গলবার ৬৩ জনের ভর্তি বাতিল করা হয়৷ একবছর আগে আরো ১৫ ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করেছিল৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘‘সিআইডি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত ১২৫ জনকে চিহ্নিত করার পর ৪৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷ ওই ১২৫ জনের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ৮৭ জন৷ তারমধ্যে ৭৮ ছাত্রকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে৷ বাকি নয় জনকে মঙ্গলবারের সিন্ডিকেট বৈঠকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে কেন স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে না মর্মে নোটিস দিয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করতে বলা হয়েছে৷''
২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত তদন্ত করে ওই ৮৭ ছাত্রকে পাওয়া গেছে৷ তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীর ভর্তি জালিয়াতিতে জড়িত থাকার প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি৷ এখন পরবর্তী শিক্ষাবর্ষগুলো নিয়ে তদন্ত চলছে৷
কীভাবে ভর্তি জালিয়াতি হয়:
মূলত তিন ধরনের জালিয়াতির মাধ্যমে ছাত্র ভর্তি করা হয়েছে৷ বিজি প্রেস থেকে আগাম প্রশ্ন ফাঁস, ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা শুরুর পরই প্রশ্ন বাইরে পাঠানো এবং একই ভাবে উত্তর সংগ্রহ৷
সিআইডি এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৪৫ জনকে আটকের পর মোট তিনটি মামলা করেছে৷ জালিয়াতি করে ভর্তি সংক্রান্ত দু'টি মামলার চার্জশিট দেয়া হয় গত বছর মে মাসে৷ বর্তমানে নৌ পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি মোল্যা নজরুল ইসলাম তখন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার ছিলেন এবং তার তত্ত্বাবধানে ঢাবি ভর্তি জালিয়াতি তদন্ত হয়েছে৷
এই কর্মকর্তা বলেন, ‘‘একটি দল বিজি প্রেস থেকে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে৷ প্রেসের কয়েকজন কর্মচারীকে আমরা ধরেছি৷ পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মচারী ও শিক্ষকও জড়িত৷ তবে তাঁরা কেউ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মচারী নন৷ ভর্তি পরীক্ষা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের স্কুল কলেজেও হয়৷ ওইসব স্কুল কলেজের কয়েকজন কর্মচারী ও শিক্ষক এতে জড়িত৷
‘‘আরেকটি গ্রুপ আছে যারা প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর তার উত্তর লিখে দেয়৷ এই গ্রুপটি পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন পাওয়ার পরই তার উত্তর ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট পরীক্ষার্থীর সঙ্গে থাকা ডিভাইসে পাঠিয়ে দেয়৷''
অনেক টাকার ‘ব্যবসা':
২০১৭ সালের ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ' ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক মহিউদ্দিন রানা ও ছাত্র আব্দুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেপ্তারের মধ্যমে ভর্তি জালিয়াত চক্রের সন্ধান পায় সিআইডি৷ এই ঘটনায় সিআইডি অর্থপাচারের একটি মামলা করে৷
মোল্যা নজরুল বলেন, ‘‘জড়িতদের ৪০ কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছি৷ যার একটি অংশ আদালতের মাধ্যমে জব্দ করা হয়েছে৷ তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ৮-৯ লাখ টাকা নিতো৷
এই চক্রগুলো পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে৷ ঢাকার বাইরে খুলনা, নড়াইলসহ আরো কয়েকটি এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছ৷ এই চক্র বিসিএস ও ব্যাংক পরীক্ষার প্রশ্নও ফাঁস করতো৷''
২০১৭ সালে ঢাবি ভর্তি জালিয়াতি নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেন চ্যানেল২৪-এর সাংবাদিক আব্দুল্লাহ ইমরান৷ তিনি বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দায়ও আছে, যেটা তারা এড়াতে পারবেন না৷ ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নগুলো তারা বিজি প্রেস ছাড়াও যেন তেন প্রেসে ছাপতেন৷ কোনো নিরাপত্তা ও নজরদারি ছিল না৷ ফলে প্রেস থেকে প্রশ্ন ফাঁস করা সহজ ছিল৷ অবশ্য গত এক বছর ধরে নিজস্ব প্রেসে প্রশ্ন ছাপা হচ্ছে৷
‘‘কেন্দ্র থেকে প্রশ্ন ফাঁসে কলেজের শিক্ষকরা জড়িত ছিলেন৷ তাদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে৷ ফাঁস করা প্রশ্ন মুখস্ত করতে ছাত্ররা সাভারে একটি বাসায় যেত৷ তাদের হাতে সরাসরি প্রশ্ন দেয়া হত না৷ সেখান থেকে একটি প্রশ্ন কোনোভাবে বাইরে চলে যাওয়ায় এই চক্রটিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়৷''