তরলে ডুবিয়ে ঠাণ্ডা রাখা যাবে কম্পিউটার
২১ মার্চ ২০১৩যুক্তরাজ্যের গবেষকরা বিশ্বাস করেন, ফেসবুক এবং গুগলের মতো জায়ান্টদের বৈশ্বিক তথ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলো ঠাণ্ডা রাখতে এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, তার নব্বই শতাংশের বেশি কমিয়ে আনা সম্ভব৷ তথ্য সংরক্ষণের এসব কেন্দ্রে কী পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হয়, সেটা অল্পতে বোঝানো কঠিন৷ তবে গবেষকদের হিসেবে, সারা বিশ্বে বর্তমানে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে, তার দুই শতাংশের মতো ব্যয় হচ্ছে এসব তথ্য কেন্দ্রে৷ আর এই দুই শতাংশের অর্ধেক ব্যয় হয় শুধু সার্ভারগুলোকে ঠাণ্ডা রাখতে৷
ঠাণ্ডা রাখতে হয় সার্ভার
হিসেবটা বেশি জটিল মনে হচ্ছে? আসলে কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহারের সময় সেটির কিছু অংশ সবসময় ঠাণ্ডা রাখতে হয়৷ এই ঠাণ্ডা রাখার কাজটি করে কুলিং ফ্যান৷ কম্পিউটার সিপিইউ'র পেছনের দিকে এই ফ্যানটি থাকে৷ ল্যাপটপের ক্ষেত্রে সাধারণ কি-বোর্ডের ওপরের দিকে কুলিং ফ্যানের অবস্থান৷
আমরা এই যে ফেসবুকে ছবি শেয়ার করি, স্ট্যাটাস দেই কিংবা ইউটিউবে যেসব ভিডিও শেয়ার করি, সেগুলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত কম্পিউটার সার্ভারে গিয়ে জমা হয়৷ এসব সার্ভারের কর্মক্ষমতা আমাদের বাড়ির কম্পিউটার বা ল্যাপটপের চেয়ে অনেক বেশি৷ বড় বড় ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য সরক্ষণকেন্দ্রগুলোতে থাকে অসংখ্য সার্ভার৷ এসব সার্ভার ঠাণ্ডা রাখতে যে বায়ু শীতলীকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করা হয়, তার পেছনে বিদ্যুৎ খরচ হয় অনেক৷
বায়ুভিত্তিক শীতলীকরণ ব্যবস্থা
যুক্তরাজ্য ভিত্তিক নতুন প্রতিষ্ঠান ‘আইসোটোপ' বায়ুভিত্তিক শীতলীকরণ ব্যবস্থার একটি বিকল্প উপায় তৈরি করেছে৷ বিশেষ তরল পদার্থ দিয়ে তৈরি এই বিকল্প শীতলীকরণ ব্যবস্থায় বিদ্যুৎ খরচ নাটকীয়ভাবে অনেক কমিয়ে আনা যাবে৷ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা রিচার্ড ব্যারিংটন এই বিষয়ে বলেন, সর্বশেষ সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে শুধু তথ্য সংরক্ষণকেন্দ্রগুলোতে চলতি বছর খরচ হবে ৪৩ গিগাওয়াট শক্তি৷ এই শক্তি নব্বইটি মাঝারি আকারের পরমাণুকেন্দ্রের সমান৷
ব্যারিংটন মনে করেন, এয়ার কুলিং সিস্টেমের বদলে তাদের তৈরি তরল শীতলীকরণ ব্যবস্থা ব্যবহার করলে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে হাজার গুন বেশি৷ এর ফলে তথ্য সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর খরচ যেমন কমবে, তেমনি পরিবেশের ক্ষতিও কমে যাবে অনেক৷
বিশেষ এই তরলের কাজ শুধু সার্ভার ঠাণ্ডা রাখার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না৷ বরং সার্ভার ঠাণ্ডা রাখতে গিয়ে এই তরল পদার্থ যখন গরম হয়ে যাবে, তখন তা ব্যবহার করা যাবে শীতের সময় ঘর গরম রাখতে৷ ফলে এই তরল ব্যবহার করা যাবে দুই কাজে৷
আইসোটোপ এই বিশেষ তরল নিয়ে উত্তর ইংল্যান্ডে অবস্থিত লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে কাজ করছে৷ তাঁরা এমন এক তরল পদার্থ সার্ভার শীতলীকরণের জন্য ব্যবহার করছে, যা বিদ্যুৎ পরিবাহী নয়৷ ফলে কোন ধরনের ক্ষতি হওয়ার সুযোগ নেই৷ ইতোমধ্যে সেই তরলে আইফোন ডুবিয়ে পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা৷ ইউটিউবে এই পরীক্ষার ভিডিও রয়েছে৷
বিকল্প উপায় খুঁজছে ফেসবুক, টুইটার
এখানে বলা প্রয়োজন, তথ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রগুলো ঠাণ্ডা রাখতে গুগল এবং ফেসবুকও বিভিন্ন বিকল্প পন্থার কথা ভাবছে৷ গুগল সম্প্রতি তাদের কিছু তথ্য সংরক্ষণ কেন্দ্র উত্তর আর্কটিকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে৷ সেখানকার ঠাণ্ডা পরিবেশ কম্পিউটার সার্ভারগুলোকে ঠাণ্ডা রাখতে সহায়ক হবে৷ এক্ষেত্রে খরচও কমবে৷
ব্যারিংটন গুগলের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন৷ তবে তিনি মনে করেন, এভাবে দুনিয়ার যাবতীয় তথ্য সংরক্ষণ সার্ভার আর্কটিকে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়৷
আইসোটোপ এখন পর্যন্ত দুটি তরল শীতলীকরণ ব্যবস্থাযুক্ত কম্পিউটার সার্ভার স্থাপন করেছে৷ কিন্তু গুগল বা ফেসবুকের মতো প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজন অনেক বড় ব্যবস্থা৷ আইসোটোপ তাই তাদের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম হবে কিনা, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না৷ তবে ভবিষ্যতে তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আরো সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব ব্যবস্থার দিকেই ছুটবে৷ আর তখন তরল শীতলীকরণ ব্যবস্থার মতো ভিন্ন পদ্ধতিগুলোর গুরুত্বও বাড়বে৷