তাঁরা কি ফিরে আসবেন?
২৭ মে ২০১৯শনিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সমবেত হন নিখোঁজ বা গুমের শিকার ২০ জনের পরিবারের শতাধিক সদস্য৷ তাঁরা মানববন্ধনে তাঁদের প্রিয়জন সাথে না থাকার তীব্র বেদনার কথা জানান৷ পিতা নিখোঁজ হওয়ার সময় যাদের বয়স ছিল ছয় মাস বা এক বছর, তারা এখন বড় হয়েছে৷ বাবা ডাকতে পারে৷ তারা এখন তাদের বাবাকে পাশে চায়৷ ‘বাবা' ডাকতে চায়৷ বাবার ডাক শুনতে চায়৷
গত কয়েক বছর ধরে নিখোঁজ পরিবারের সদস্যরা প্রেসক্লাবে সমবেত হন ‘মায়ের ডাক' নামের আয়োজনে৷ এবারের মানববন্ধনে আগের মতোই তাঁরা নিখোঁজ বা গুমের শিকারদের ছবি নিয়ে আসেন৷ কালো ব্যানারে লেখা ছিল,‘‘মায়ের ডাক: খুন, গুম আর নয়''৷ তাঁদের সঙ্গে মানববন্ধনে ছিলেন মানবাধিকার কর্মী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা৷ তাঁদেরই একজন মানবাধিকার কর্মী এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘২০টি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একটি পহাড়ি পরিবারও ছিল৷ গত ৬-৭ বছরে আমাদের হিসেবে ৫-৬শ' লোক নিখোঁজ, অপহরণ বা গুমের শিকার হয়েছেন৷ একসঙ্গে ৭-৮জন নিখোঁজের ঘটনাও আছে, যাদের অধিকাংশই রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী৷ শনিবার তাঁদের পরিবারের সদস্যরা সরকারের কাছে জানতে চান যে, তাঁরা কোথায়, কিভাবে আছেন৷ তাঁদের চূড়ান্ত পরিণতি কী হয়েছে? সরকার তাঁদের অবস্থান সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিক৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘স্বজনরা অভিযোগ করছেন নিখোঁজদের ব্যাপারে পুলিশ বা র্যাবের কাছে বারবার গিয়েও কোনো তথ্য পাচ্ছেন না৷ তাঁদের অবহেলা করা হচ্ছে৷ নানা ধরনের বিব্রতকর প্রশ্ন করা হচ্ছে যা এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়৷''
এই নিখোঁজদের ফিরে আসা নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ, পুলিশের ভূমিকার প্রশ্নে ডয়চে ভেলে'র সঙ্গে কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দলের নেতা, সাবেক মন্ত্রী এবং সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া৷ তিনি বলেন, ‘‘তাঁরা যদি তাঁদের স্বজনদের খোঁজই চান, তাঁরা কোথায় আছে, কেমন আছে, জানতে চান, তাহলে এমন কঠোর আন্দোলন করতে হবে যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জবাব দিতে বাধ্য হয়৷ এভাবে প্রত্যেক বছর প্রেসক্লাবের সামনে মানবন্ধন করে তো হবে না৷''
সরকার কি এই নিখোঁজদের উদ্ধারের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘সরকারের তো অনেক অগ্রাধিকার ইস্যু থাকে৷ অনেকেই তো গুম হচ্ছে৷ এটা তদন্ত করে তাঁদের বের করে আনা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার৷ বিএনপি'র এক নেতাকে তো পাওয়া গেল ভারতে৷ কেউ তিন বছর পর বেরিয়ে আসছে দেখলাম পত্রিকাতে৷ তাই এটা তো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার৷''
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘এটা তো তাদের নৈতিক দায়িত্ব৷ তারা আসলে কী করছে সেটা জানানো উচিত৷''
ঢাকা মেট্রোপালিটন পুলিশের উপ-কমিশনার ( মিডিয়া) মাসুদুর রহমান নিখোঁজের সব ঘটনাকে অপহরণ, গুম বা হত্যার অপরাধজনিত মনে করেন না৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা নিখোঁজ বা অপহরণের ঘটনাকে কেস টু কেস তদন্ত করি৷ অনেক ঘটনায়ই অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার এবং অপহৃতকে উদ্ধার করেছি৷''
তিনি বলেন, ‘‘অনেক সময় প্রেমের কারণে অথবা অন্য কারণে পলাতক থাকতে পারে৷ কেউ ব্যবসায়িক অথবা সাংসারিক কারণে অবসাদগ্রস্ত হয়ে আত্মগোপনে যেতে পারে, কেউ নিজে আত্মগোপন করতে পারে আবার কেউ অপহৃতও হতে পারে৷ তদন্তে এটা বোঝা যায়৷ আমরা দেখেছি, কেউ কেউ আবার নিজেও কিছুদিন পরে ফিরে আসে৷ আমরা সব ঘটনাই গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করি৷''
অন্যদিকে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ডয়চে ভেলেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, ‘‘নিখোঁজের প্রতিটি ঘটনাই পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে৷ মামলাগুলো সব সময়ই মনিটর করা হয়৷ তবে অপরাধের ধরনের ভিন্নতার কারণে কিছু মামলা ডিটেকশনে বেশি সময় লেগে যায়৷ কিন্তু প্রতিটি মামলার বিষয়ে পুলিশ অ্যাক্টিভ রয়েছে৷ প্রায় প্রতিদিনই এ ধরনের মামলার রহস্য উদঘাটনসহ ভিকটিমকে উদ্ধার করা হচ্ছে৷’’