তাদের জন্য শহিদের রক্ত বৃথা যেতে পারে
২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭সারা দেশে পালিত হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারি৷ একুশের প্রথম প্রহর থেকেই শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিকতা৷ বরাবরের মতো দিনটি উপলক্ষ্যে বিভিন্ন চ্যানেলে থাকছে বিশেষ আয়োজন৷
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'-এর স্বীকৃতি দেয়৷ তারপর থেকে বিশ্বের অনেক দেশেই বিশেষ মর্যাদায় দিনটি পালন করা হয়৷ এমনকি পাকিস্তানেও ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ অবশ্য বিবিসি বাংলা-র খবর অনুযায়ী, সে দেশের কিছু মানুষ '৫২-র ইতিহাস না জেনেই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' উদযাপন করেন৷
ইয়াহিয়া, টিক্কা খানের দেশে '৫২-র প্রকৃত ইতিহাস জানানোর চেষ্টা হবে, সাধারণ মানুষ খুব জেনে-বুঝে ভাষাশহিদদের বিনম্র শ্রদ্ধা জানাবে- এ আশা বাংলাদেশের কোনো সচেতন মানুষই হয়ত করে না৷
বাংলাদেশেই কি সর্বস্তরে ইতিহাস সচেতনতা, শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা কাঙ্খিত মাত্রায় রয়েছে? নেই৷ সে কারণে এ সপ্তাহেই আমরা আদালতকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এক নির্দেশনা দিতে দেখেছি৷
২০১০ সালে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা এবং জাদুঘর স্থাপনের নির্দেশনা চেয়ে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট আবেদন করেছিল৷ পরিবেশবাদী সংগঠনটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সে বছরই হাইকোর্ট শহিদ মিনারের পাশে গ্রন্থাগারসহ জাদুঘর নির্মাণ, জাদুঘরে ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষা সংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি ও প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ ও মর্যাদা রক্ষাসহ আটটি নির্দেশনা দেয়৷
সেই আট নির্দেশনার একটিও গত প্রায় সাত বছরে কার্যকর হয়নি৷ সাত বছর অপেক্ষা করেছে আদালত৷ অবশেষে এ সপ্তাহে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সবগুলো নির্দেশনা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে৷
নির্দেশনাগুলো আগামী ছয় বছরেও বাস্তবায়িত হবে কিনা কে জানে৷ তাছাড়া সরকার চাইলে গ্রন্থাগার, জাদুঘর নির্মাণ, ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসসমৃদ্ধ তথ্যপঞ্জিকা রাখা, ভাষা সংগ্রামীদের প্রকৃত তালিকা তৈরি ও প্রকাশ, এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শহিদ মিনার নির্মাণ হয়ত করতে পারবে, কিন্তু তাতেই কি শহিদ মিনারের পবিত্রতা ও মর্যাদা রক্ষা সম্ভব হবে?
খবরে দেখছি, পুলিশই নাকি একুশে ফেব্রুয়ারির কথা ভুলে যায়!
আরো দেখছি, চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নামে ছাপা পোস্টার, ব্যানারে একুশে ফেব্রুয়ারিতে ‘৩০ লাখ শহীদের প্রতি' শ্রদ্ধা নিবেদনের হিড়িক৷ আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের নেতাদেরই যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে আদালতের নির্দেশে কতটুকু ‘মর্যাদা রক্ষা' সম্ভব'?
আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠনের অখ্যাত নেতা-কর্মীদের বেশি সমালোচনা করেই বা কী হবে? সর্বত্রই তো পচনের চিহ্ন৷
এক বেসরকারি চ্যানেলের একটি প্রতিবেদনে অভিনেত্রী সাবেরী আলমের কাণ্ড দেখলাম৷ অনেকে যে স্যান্ডেল পায়ে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে উঠে পড়েন- এ বিষয়ে তাঁর মতামত জানতে চাইলে সাবেরী খুব আবেগপ্রবণ হয়ে বলতে শুরু করেন, ‘‘শ্রদ্ধার ব্যাপারটি কোন জায়গায় রইল আমাদের? মানে, এইগুলো তো পারিবারিক শিক্ষা৷ এগুলো তো আসলে বড় হয়ে শেখার কথা না৷''
সাবেরী নিজে এই শিক্ষায় খুব শিক্ষিত৷ কিন্তু একটু আগে তিনি নিজেও কিন্তু স্যান্ডেল পায়ে শহিদ মিনারের বেদীতে উঠেছিলেন৷ সেই বিষয়ে যেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলো অমনি ভোল পাল্টে গেল৷ স্বনামধন্য অভিনেত্রী নির্বিকারভাবে বলতে লাগলেন, ‘‘এই বেদীতে স্যান্ডেল পরে উঠলে কিছু হবে না৷ ভাষাটাকে যদি শ্রদ্ধা করি, তাহলে এগুলো গৌণ৷''
পুলিশ যদি একুশে ফেব্রুয়ারি ভুলে যায়, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যদি টাকার গরমে ভুলে ভরা পোস্টার ছেপে ইতিহাস সম্পর্কে অজ্ঞতাকে ‘প্রিন্টিং মিসটেক' বলেন, সাবেরী আলমের মতো প্রখ্যাত অভিনেত্রীও যদি ভণ্ডামির এমন দৃষ্টান্ত হন, তাহলে শহিদের রক্ত বৃথা যেতেও পারে৷
বন্ধু, আশীষ চক্রবর্ত্তীর লেখাটি আপনার কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷