তানজানিয়ায় টিন-এজ মা
১৭ জুলাই ২০১১প্রতি বছর তানজানিয়ায় প্রায় আট হাজার মেয়ে গর্ভবতীর হওয়ায় স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়৷ এত অল্প বয়সে গর্ভধারণ রোধের নানা বিষয়গুলো এদের কাছে পুরোপুরি আজানা থাকায় এরা গর্ভবতী হয়ে পড়ে৷ ইহানামিলো উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ধরণের ঘটনা গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার ঘটেছে৷ প্রতিদিনের মত মেয়েরা স্কুল ড্রেস পডরে স্কুলে এসেছে, সবাই মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে৷ এদের একজন ১৯ বছরের এস্থার৷ ক্লাশ টেনের ছাত্রী৷ এক বছর আগে এস্থার একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে৷ অথচ এস্থার এখনো অবিবাহিতা৷ এস্থার জানাল, ‘‘আমি যখন গর্ভবতী ছিলাম তখন নিয়মিত স্কুলে আসতে পারতাম না৷ শারীরিকভাবে বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন আমি হয়েছিলাম৷ আমার পুরো জীবন পাল্টে যায়৷ আগের মত আর কোন কিছুই নেই৷''
এস্থারের ভাগ্য ভাল৷ কারণ তার বাবা-মা সন্তানসম্ভা থাকার সময় এস্থারের পাশে থেকেছে৷ বার বার মেয়েকে বুঝিয়েছে গর্ভবতী হলে বা একটি সন্তান হলেই সব শেষ হয়ে যায় না৷ এস্থারের বাবা-মা স্কুলের পাট শেষ করার ওপর জোর দিয়েছেন, এস্থার এখন নিয়মিত স্কুলে আসছে৷
তবে সবাই এস্থারের মত ভাগ্যবতী নয়৷ এস্থারের ক্লাশে আরো চারটি মেয়ে আছে৷ তাদের সবার একটি করে সন্তান রয়েছে এবং এরা সবাই প্রাণপণে চেষ্টা করছে স্কুল শেষ করার৷ তবে বেশিরভাগ মেয়েই শেষ পর্যন্ত আর স্কুলে আসার সময় পায় না৷ বাড়িতে বাচ্চাকে দেখাশোনার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় আর স্কুলে আসা হয় না৷ তবে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সব ধরণের সাহায্য আর সহযোগিতা পাওয়ার পরও এস্থার মনে করে একই সঙ্গে মা এবং স্কুল ছাত্রী হওয়া সহজ নয়৷ বাড়ি থেকে স্কুল ১০ কিলোমিটারের পথ৷ প্রতিদিন পায়ে হেঁটে স্কুলে যেতে হয়৷ বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যায়৷
এসব মেয়েদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে তানজানিয়া মেডিয়া ওম্যান এসোসিয়েশন৷ সংস্থায় কাজ করছেন আনানিলেয়া ইনকিয়া৷ তিনি জানান, এত দূরের পথ যেন হাঁটতে না হয় তাই অনেকেই মেয়েদের বলে যে সাইকেল অথবা মোটর বাইকে স্কুলে পৌঁছে দেয়া হবে তাদের৷ আর মেয়েগুলোও রাজি হয়ে যায় এরপরই ঘটে অঘটনগুলো৷ এর পাশাপাশি রয়েছে স্কুলের কোন কোন শিক্ষকের হুমকি৷ ছাত্রীকে যদি হাতের মুঠোয় না পাওয়া যায় তাহলে সেই ছাত্রীকে কখনোই পরীক্ষায় পাশ করানো হয় না৷
এসব মেয়েদের বাবা-মায়েরা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে না কারণ তাদের আগে থেকেই টাকা দেয়া হয় প্রতিবাদ না করার জন্য৷ তবে ইনকিয়ার বিশ্বাস, একদিন এই অবস্থার পরিবর্তন হবে এবং সেই দিন খুব দূরে নয়৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক