দুর্বল তালেবান
১২ নভেম্বর ২০১২২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করলে সে দেশের পরিস্থিতি নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই৷ বিশেষ করে তালেবান তখন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনা চলছে৷ কিন্তু জার্মান রেডিও এআরডি'র সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আইসাফ বাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গ্যুন্টার কাৎস একেবারে অন্য রকম এক চিত্র তুলে ধরলেন৷ তিনি মনে করেন, তালেবান এখনই অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে৷
জার্মান সেনাবাহিনীর এই জেনারেলের ভাষায়, ‘‘আগের বছরের তুলনায় গত তিন মাসে হামলার সংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গেছে৷ শুধু অক্টোবরের কথা ধরলে প্রায় ১৫ শতাংশ কম হামলা ঘটেছে৷''
আইসাফ বাহিনী অবশ্য শুধু সেই সব হামলা নথিভুক্ত করে, আন্তর্জাতিক বা আফগান বাহিনীর সৈন্যরা যার শিকার হয়৷ নিরীহ মানুষের উপর হামলার ঘটনা সেই পরিসংখ্যানে স্থান পায় না৷ জেনারেল কাৎস'এর সূত্র অনুযায়ী গত তিন মাসে প্রায় ১,১০০ নিরীহ মানুষ তালেবান হামলার শিকার হয়েছে৷ এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠছে, ২০১৪ সালের পর আফগান নিরাপত্তা বাহিনী কি একা হাতে বিদ্রোহীদের দমন করতে পারবে?
জেনারেল কাৎস মনে করেন, ‘‘প্রথমত আমাদের মেনে নিতে হবে, যে তালেবান তখনো অবশ্যই টিকে থাকবে৷ অর্থাৎ আফগান বাহিনীকে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে৷ তবে আমরা, অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সমাজ তখনো এখানে সক্রিয় থাকবো, তাদের সহায়তা করে যাবো৷ মোটকথা আফগানদের একা এই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে না৷''
তবে এখনো আরও প্রায় দুই বছর সময় রয়েছে৷ অনেক সমস্যাও রয়ে গেছে৷ যেমন ‘সর্ষের মধ্যে ভুত'৷ অর্থাৎ আফগান বাহিনীর মধ্য থেকেই বিদেশি সৈন্যদের উপর হামলা বেড়ে চলেছে৷ জেনারেল গ্যুন্টার কাৎস অবশ্য মনে করেন, প্রতিটি হামলার পর তালেবান দায় স্বীকার করতে এগিয়ে আসে বটে, কিন্তু ঘটনা হলো নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতেই তাদের প্রচারণার মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ তালেবানের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাহিনীর চররাই এই খবর দিচ্ছে৷ তবে তা সত্ত্বেও কোনো রকম ঢিলেমি বরদাস্ত করা হচ্ছে না৷ আচমকা হামলা ঠেকাতে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে৷ সৈন্যদের সব সময়ে সতর্ক থাকতে হচ্ছে৷ জেনারেল কাৎস নিজে টেবিলের উপর পিস্তল রেখে বসেন, যাতে প্রয়োজনে দ্রুত গুলি চালাতে পারেন৷ সব বিদেশি সৈন্যকেই সারা দেশে এখন এই নিয়ম মেনে চলতে হয়৷
এছাড়া ন্যাটো ও আফগান সৈন্যদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা সবাই বোঝে, কোন পরিস্থিতিতে তাদের চরম প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে৷ প্রায় এক দশক পরেও এমন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হওয়ায় কিছু মহলে সমালোচনা শোনা যাচ্ছে৷ তবে দেরিতে হলেও এমন পদক্ষেপের প্রয়োজনের কথা মেনে নিচ্ছে সবাই৷