তালেবানকে আর ভয় পান না গুল
২৫ জুলাই ২০২০গত সপ্তাহে কামার গুলের সামনেই তার মা-বাবাকে গুলি করে হত্যা করে তালেবানের দুই সশস্ত্র হামলাকারী৷ তখন বাড়িতে থাকা একে-৪৭ রাইফেল নিয়ে সেই হামলাকারীদের গুলি করে মেরে ফেলেন পনেরো বছরের কিশোরী গুল৷ সাথে ছিল তার ১২ বছরের ছোট ভাই৷
আফগানিস্তানের ঘোর অঞ্চলের বাসিন্দা কামার গুলের বাবা-ই তাকে ছোটবেলায় বন্দুক চালাতে শিখিয়েছিলেন৷ তার জেরে কামার আর তার ভাই সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও মৃত্যু হয় তাদের বাবা-মায়ের৷
ঘটনার এক সপ্তাহ পরেও এতটুকু ভয় পাচ্ছেন না কামার৷ সংবাদসংস্থা এএফপিকে তিনি জানান, ‘‘আমি আর তালেবানকে ভয় পাই না৷ তাদের সাথে আবার লড়তেও আমি প্রস্তুত৷’’
রাইফেল হাতে কামারের একটি ছবি সোশাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে৷ প্রশংসিত হচ্ছে কামারের সাহস ও উপস্থিত বুদ্ধি৷
কিন্তু বাবা-মাকে শেষবার বিদায় না জানাতে পারা কষ্ট দিচ্ছে তাকে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা-মায়ের খুনিকে হত্যা করতে পেরে আমি গর্বিত৷ তাদের মারার পর আমি দৌড়ে আমার বাবা-মায়ের কাছে যাই, কিন্তু ততক্ষণে সব শেষ৷ তাদের নিঃশ্বাস পড়ছিল না৷ আমি জানি যে, সেদিন আমি হাতে বন্দুক না তুলে নিলে তারা আমাকে আর আমার ভাইকেও শেষ করে ফেলতো৷’’
কেন এই হামলা?
কামার গুলের অন্যান্য পরিজনরা মনে করেন, এই ঘটনার পেছনে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থাকতে পারে৷ নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, হামলাকারীদের মধ্যে একজন কিশোরী গুলের স্বামী ছিল৷ পরিজনদের বক্তব্যের সূত্র ধরে সেখানে আরো বলা হয় যে, জোর করে গুলকে স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে নিতে এসেছিল তারা৷
তবে সংবাদসংস্থা এএফপি বলছে, তালেবানের হামলাকারীরা গুলের বাবা, গ্রামের প্রধানকে হত্যা করতে এসেছিল, কারণ তিনি তালেবানবিরোধী ছিলেন৷
তালেবানও নিশ্চিত করেছে যে, ওই অঞ্চলে হামলাটি তারাই চালিয়েছে৷ কিন্তু ঘটনায় তাদের কোনো সদস্যের মারা যাবার কথা অস্বীকার করেছে তারা৷
ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানজুড়ে দাবি উঠছে কামার গুলকে নিরাপদে আফগানিস্তানের বাইরে পাঠিয়ে দেওয়ার৷ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন নারী অধিকার কর্মীরা৷
কিন্তু গুলের বড় ভাই আবদুল কাদির তার পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত নন৷ পুলিশি প্রহরায় তারা নিরাপদ বোধ করছেন বলে জানান তিনি৷
দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা মুনেরা ইউসুফজাদা বলেন, ‘‘তালেবানকে এটা বুঝতে হবে যে, আজকের নারীরা আর আগের মতো নেই৷ তালেবান শাসনের দিনের তুলনায় নারীরা অনেক বদলেছে৷’’
এসএস/এসিবি (এএফপি)