1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তিন লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে বলছে সৌদি আরব

১৪ নভেম্বর ২০২২

সৌদি আরবে বসবাসরত মিয়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গাদের মধ্যে তিন লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট দিতে বলছে।

https://p.dw.com/p/4JVcQ
বাংলাদেশের পাসপোর্ট
বাংলাদেশের পাসপোর্টছবি: Sazzad Hossain/SOPA Images/ZUMA Wire/picture-alliance

সৌদি স্বরাষ্ট্র উপমন্ত্রী নাসের বিন আব্দুল আজিজ আল দাউদ রোববার ঢাকায় বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে বৈঠকে এই পাসপোর্টের কথা বলেন।

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জবাবে বলেছেন,"পাসপোর্ট যাচাই বাছাই করে নবায়ন করে দেয়া হবে।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন," সৌদি প্রতিনিধি দল আমাদের বলেছেন, সৌদি আরবে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দ্রুত নবায়ন করতে। আমরা বলেছি-তাদের দেশে অবস্থানরত সব রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট নবায়ন করা যাবে না। বরং শুধুমাত্র যারা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে সে দেশে গেছে তাদের পাসপোর্ট যাচাই-বাছাই করে নবায়ন করবে সরকার।”

বিশ্লেষকেরা বলছেন,"এই ইস্যুতে বাংলাদেশ উভয় সংকটে পড়েছে। এক দিকে সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার। অন্যদিকে সবাইকে পাসপোর্ট দিলে তখন তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্ন উঠতে পারে।”

এর আগেও সৌদি আরব একাধিকবার এই পাসপোর্ট নবায়নের প্রশ্ন তুলেছিলো। ২০১০ সাল থেকে তারা মূলত এই পাসপোর্ট নবায়নের জন্য চাপ দিচ্ছে। করোনার আগে তারা ৫৪ হাজার জনকে পাসপোর্ট দেয়ার জন্য বলেছিলো। এখন তারা বলছে তিন লাখ।

কেন এই রেহিঙ্গাদের পাসপোর্ট প্রসঙ্গ

কূটনৈতিক সূত্রসহ বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭৬ থেকে ১৯৭৯ সালের মধ্যে নির্যাতনের মুখে পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য হয়। তখন ওআইসির মধ্যস্থতায়  পাঁচ লাখ রোহিঙ্গাকে সৌদি আরব স্বেচ্ছায় আশ্রয় দেয়। সৌদি আরবের অনুরোধে দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশি এবং দুই লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে পাকিস্তানের পাসপোর্ট দেয়া হয়। পাকিস্তান তাদের পাসপোর্ট দিলেও তাদের মিয়ানমারের নাগরিক বলে উল্লেখ করে। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দেয়া পাসপোর্টে তাদের নাগরিকত্ব সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি। ফলে তাদের বাংলাদেশি নাগরিক হিসবেই চিহ্নিত করা হয়েছে। আর সংকটের শুরু সেখান থেকেই। সৌদি আরব বলছে যেহেতু তারা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে তাই তারা বাংলাদেশের নাগরিক।

‘বাংলাদেশের জন্য উভয় সংকট’

বাংলাদেশ কি কোনো সমস্যায় পড়বে?

মিয়ানমারে বাংলাদেশের সাবেক সামরিক অ্যাটাশে এবং সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল (অব.) শহীদুল হক বলেন,"ওই সময়ে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট দেয়ার ব্যাপারটি ছিলো সমঝোতামূলক। আর তার বিনিময়ে সৌদি আরবে বাংলাদেশে জনশক্তি রপ্তানির দুয়ায় খুলে যায়। তখন প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি নাগরিক সৌদি আরবে কাজের সুযোগ পায়। কিন্তু এখানে বাংলাদেশের যে কর্মকর্তারা পাসপোর্ট দিয়েছেন তারা কৌশলগত ভুল করেছেন। তারা রোহিঙ্গাদের সরাসরি বাংলাদেশের নাগরিক লিখে দিয়েছেন। এই ভুলটি পাকিস্তান করেনি। তারা তাদের  পাবিস্তানের নাগরিক বলেনি, মিয়ানমারের নাগরিক বলেছে।”

তার কথা,"এখন সৌদি আরব যে তাদের পাসপোর্ট দিতে বলছে বা নবায়ন করতে বলছে  সেটা নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে বাংলাদেশকে। এই ক্ষেত্রে যদি পাসপোর্ট দেয়ার আগে ভেরিফিকেশন প্রসেস স্ট্রং করা হয় তাহলে দেখা যাবে তারা বাংলাদেশের নাগরিক না। কারণ তাদের কো এখানো স্থায়ী ঠিকানা থাকতে হবে।  রোহিঙ্গারা তো সেটা দেখাতে পারবেনা।”

তিনি মনে করেন,"এজন্য সৌদি সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের একটি টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। এটা যৌথ টাস্কফোর্সও হতে পারে।  ভেরিফিকেশনের সময় যাদের বাংলাদেশের নাগরিক বলা হচ্ছে তাদের বাংলাদেশে স্থায়ী ঠিকানা আছে কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে।”

তিনি আরো বলেন,"তবে এর বাইরেও অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্টে অনেক দেশে গিয়েছে। আমি লিবিয়ার রাষ্ট্রদূত থাকার সময় দেখেছি সেখানে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশি পাসপোট নিয়ে অবস্থান করছে। পড়াশুনা করছে।”

তিনি জানান,"ওই রোহিঙ্গারা সৌদি আরবে নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছেন। এখন তারা পাসপোর্ট পেলে তাদের ফেরত পাঠিয়ে দিতে পারে।”

কিন্তু সমস্যা হলে সৌদি আরব বাংলাদেশের রেমিট্যান্সের এককভাবে সবচেয়ে বড় উৎস। সেখানে এখন কমবেশি ২৮ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত।  সৌদি সরকার তিন লাখ রোহিঙ্গাকে  বাংলাদেশি পাসপোর্ট দেয়ার বিষয়ে এটাকে কাজে লাগাতে পারে। শহীদুল হক বলেন,"আমাদের তাই লিগ্যালি ভেরিফিকেশন প্রসেসের মাধ্যমে প্রমাণ করতে হবে তারা বাংলাদেশের নাগরিক না। এটাই একমাত্র পথ।”

উভয় সংকটে বাংলাদেশ

সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেন,"এটা বাংলাদেশের জন্য উভয় সংকট। সৌদি আরবে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার। আবার সেখানকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের পাসপোর্ট দিলে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রশ্নও উঠতে পারে। দুইটি বিষয় বিবেচনায় রেখেই বাংলাদেশকে সতর্কভাবে এগোতে হবে।”

তিনি বলেন,"আমাদের এখানে করাপশন আর অদক্ষতা আছে। ওই সময়ে যেসব রেহিঙ্গাকে সৌদি আরব নিয়েছে তাদের দীর্ঘকাল ধরে থাকার সুবিধা দিয়েছে। সেই সুবিধা পেয়ে বাংলাদেশিরাও রোহিঙ্গা হিসেবে  বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছে সুবিধা পাওয়ার জন্য। তাদের সংখ্যা হয়তো কম হবে। আবার  রোহিঙ্গারাও এখানে অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গেছেন। এখন ঢালাও পাসপোর্ট বা নবায়ন করা নয়, ভেরিফিকেশন করে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমাদের এই প্রশ্নও করতে হবে ৫৪ হাজার কীভাবে তিন লাখ হলো।”

তার কথা,"নাগরিকত্ব ছাড়াও পাসপোর্ট দেয়া যায়। বাংলাদেশ তখন সেটা করতে পারত। পাকিস্তান সেটা করেছে। তবে সেজন্য সৌদি আরবের সঙ্গে আমাদের সেই ধরনের সমঝোতার দরকার ছিলো। এটা  আমাদের মেনে নিতে হবে যে সৌদি আরবের কাছে পাকিস্তানের অবস্থান যত শক্ত আমাদের ততো নয়।”

এনিয়ে সোমবার পরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রোববার বলেছেন,"যারা বিশেষ বিবেচনায়, বিশেষভাবে গিয়েছিলেন, তাদের চিহ্নিত করে, আমরা যাদের পাসপোর্ট দিয়েছি, তাদের পাসপোর্ট নবায়ন করার ব্যাপারে তো আমরা ওয়াদাবদ্ধ, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা দেখব।”