তিমির সুরক্ষায় সাউথ আফ্রিকায় আন্তরিক উদ্যোগ
২১ ডিসেম্বর ২০২২দেখলে প্রচলিত তিমি শিকার মনে হলেও এখানে মোটেই সেটা ঘটছে না৷ প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যামাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ম্যাথিউ খ্যারমিসহাউজেন ও তার সহকর্মীরা তিমির কল্যাণেই বৈজ্ঞানিক নমুনা সংগ্রহের চেষ্টা করছেন৷ ম্যাথিউ ও তার সহকর্মী জানালেন, ‘‘ত্বক ও ফ্যাটের অংশ সংগ্রহ করতে তিরের মধ্যে কয়েকটি বঁড়শি রয়েছে৷ কালো অংশটি ত্বক৷ আর এটা ফ্যাটের অংশ৷ বিভিন্ন বিশ্লেষণের জন্য এটা কাজে লাগে৷ এটা একেবারেই বেদনাদায়ক নয়৷ অনেকটা মৌমাছির হুল ফোটানোর মতো অনুভূতির মতো৷ তিমি কখনো লেজ তুলে দেয়৷ তবে সাধারণত পানিতে ডুব দিয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে সব ভুলে যায়৷''
অনেক সাদার্ন রাইট হোয়েল কেপ টাউনের পূর্বে হার্মানুস উপসাগরে শীতকালে আশ্রয় নেয়৷ অ্যান্টার্কটিকায় নিজেদের খোরাকের এলাকা ছেড়ে হাজার হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে তিমি সেখানকার সুরক্ষিত পানিতে সন্তানের জন্ম দেয়৷ কিন্তু কিছু সময় ধরে সেখানে তিমির সংখ্যা কমে চলেছে৷ গবেষকরা এমন অবস্থার কারণ জানার চেষ্টা করছেন৷
ল্যাবে ফিরে বিজ্ঞানীরা ত্বকের নমুনাগুলি নথিভুক্ত করে মা ও শাবকদের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করেন৷ আরো বিস্তারিত ডিএনএ বিশ্লেষণের জন্য নমুনাগুলি বরফের মধ্যে জমা রাখা হয়৷ তিমির জিপিএস লোকেশনও সিস্টেমে রাখা হয়৷
রিসার্চ ম্যানেজার এল্স ফার্মইউলুন জানালেন, যে কয়েকটি তিমির শরীরে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার লাগানো হয়েছে৷ ফলে এই প্রাণীর গতিবিধির উপর নজর রাখা যাচ্ছে৷ এল্স বলেন, ‘‘যেমন এই মাদি তিমি তার শাবকের সঙ্গে ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জে গিয়েছিল৷ এখন থেকে কি মা আর শাবক এমনটাই করবে? নাকি শাবক পরের বার একাই কোথাও যেতে চাইবে? আমরা সেই আচরণ এখনো বুঝি না৷ তাই আমরা ডিএনএ-র উপর স্থিতিশীল আইসোটোপের স্তর রাখছি৷ স্থিতিশীল আইসোটোপ আসলে ত্বকের উপর এমন চিহ্ন, যা প্রাণীগুলির খোরাকের স্থান সম্পর্কে তথ্য দেয়৷ কী খাচ্ছে, সেই তথ্যও পাওয়া যায়৷''
গবেষকদের ফাইলে হোয়েলিং স্টেশনের রেকর্ড বই রয়েছে৷ লাগামহীন শিকারের কারণে সাদার্ন রাইট হোয়েল প্রজাতি প্রায় লুপ্ত হতে বসেছিল৷ তারপর ১৯৩৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় তিমি শিকার নিষিদ্ধ করা হয়৷ তিমির সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে৷ তিমির মোট সংখ্যা কমে গেছে৷ বিশেষ করে মাদি তিমির সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমে চলেছে৷ এল্স ফার্মইউলুন বলেন, ‘‘শরীর পরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, যে গত ২০ বছরে মাদি তিমি আরও রোগা হয়ে গেছে৷ গত দশকে কোনো একটা বড় পরিবর্তন ঘটেছে৷''
তিমির খোরাক যে ক্রিল, সেই প্রাণী কি আরো দক্ষিণে চলে যাচ্ছে? নাকি ক্রিলের পরিমাণ কমে গেছে? তবে জলবায়ু পরিবর্তন যে বড় ভূমিকা পালন করছে, গবেষকরা সে বিষয়ে নিশ্চিত৷
স্থানীয় মানুষরা জানেন, যে তিমি আর না এলে হার্মানুস শহরের উপর বিপর্যয় নেমে আসবে৷ ‘হোয়েল ক্রাইয়ার অফ হার্মানুস' সংগঠনের বুলেলানি এনজিদি বলেন, ‘‘হার্মানুসের জন্য তিমির অনেক গুরুত্ব রয়েছে৷ এই প্রাণীর টানেই মানুষ এখানে আসে৷ সবাই তিমি দেখতে চায়৷ পর্যটনের জন্য তিমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, পর্যটনের চালিকা শক্তি বলা চলে৷''
মহামারির ফলে নিয়ন্ত্রণের মারাত্মক ধাক্কা সামলে হার্মানুস আবার গোটা বিশ্ব থেকে তিমি দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করছে৷ তিমি ডুব দিলে, লেজ উঠে এলে দেখতে অনেকের খুব ভালো লাগে৷ এক পর্যটক বললেন, ‘‘তিমি কী সুন্দর প্রাণী! এবং এত শান্তিপূর্ণ! এই প্রাণীর কল্যাণ আমাদের নিশ্চিত করতে হবে৷ আশা করি, বিশ্বনেতারা সেটা বুঝতে পারছেন৷ শুধু দক্ষিণ আফ্রিকার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নয়, জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সবার উপর প্রভাব রাখছে৷ এবং এই ধাক্কা মোকাবিলার লক্ষ্যে আমাদের কিছু একটা করতে হবে৷ জোরালো কিছু করতে হবে৷''
মহাসাগরে পরিবর্তন সম্পর্কে ম্যাথিউ খ্যারমিসহাউজেনের মনে কোনো সংশয় নেই৷ কিন্তু তিমির উপর এই প্রক্রিয়ার প্রভাব জানতে তাঁকে সমুদ্রের উপর আরও সময় কাটাতে হবে৷
ক্রিশ/ম্যুলার/এসবি