তুরস্ক কি তার নীতি বদলাচ্ছে?
২১ অক্টোবর ২০১৪বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির চোখে বিগত কয়েক সপ্তাহে তুরস্কের ভাবমূর্তির ব্যাপক হানি ঘটেছে৷ কোবানিতে যুদ্ধরত কুর্দদের সাহায্য না করার অর্থ, তুরস্ক তার সংকীর্ণ জাতীয় স্বার্থকে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের উদ্বেগের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে৷ দৃশ্যত কুর্দদের নিয়ন্ত্রণে রাখাটা আংকারার কাছে আইসিস-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷
কোনটা বেশি জরুরি
তুরস্ক সিরিয়ার কুর্দদের সাহায্য করতে দ্বিধা করছে, কেননা তাদের পিকেকে-র সঙ্গে যোগ আছে, যে সন্ত্রাস গোষ্ঠী পূর্ব তুরস্কে কুর্দ স্বশাসনের দাবিতে তিন দশক ধরে বিদ্রোহ চালিয়েছে৷ যে কারণে তুরস্ক তার সিরিয়া সীমান্ত খুলে দিয়ে কোবানি ও কোবানি'র কুর্দ যোদ্ধাদের জন্য ত্রাণ ও অস্ত্র সরবরাহের পথ উন্মুক্ত করতে চায়নি৷ এমনকি তুরস্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তুর্কি বিমানঘাঁটিগুলি ব্যবহার করতে দেয়নি৷ যার ফলে ওয়াশিংটন ও ন্যাটো তুরস্কের নীতি সম্পর্কে আন্তরিকভাবে উদ্বিগ্ন এবং কিছু কিছু পর্যবেক্ষক ইতিমধ্যেই ন্যাটোর সদস্য হিসেবে তুরস্কের নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷
অন্যদিকে রয়েছে, কোনটা বেশি জরুরি, সেই প্রশ্ন৷ কুর্দদের কি তুরস্কের পক্ষে একটা বাস্তব এবং অব্যবহিত বিপদ বলে গণ্য করা চলে? না, চলে না৷ আইসিস কি এই অঞ্চলের মানুষদের জন্য – এবং অন্যত্র একটা বিপদ? সেটা নিশ্চিত এবং দৃশ্যত তুরস্ক ছাড়া সেটা প্রায় সবারই জ্ঞাত৷ আইসিস-এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন এবং সেক্ষেত্রে তুরস্কের সহযোগিতা অত্যাবশ্যক৷
মোড় ফেরা
দৃশ্যত তুরস্কের এতদিনে সেটা বোধগম্য হয়েছে৷ দেরিতে হলেও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুট চাভুশলু ঘোষণা করেছেন যে, তাঁর দেশ ইরাকের কুর্দ সেনাবাহিনীকে কোবানিতে যুদ্ধরত কুর্দ যোদ্ধাদের সাহায্য করতে দেবে, অর্থাৎ সীমান্ত পার হয়ে তাদের সঙ্গে যোগদান করতে দেবে৷ এই সিদ্ধান্ত এসেছেও শেষ মুহূর্তে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোবানিতে অস্ত্রশস্ত্র, খাদ্য ও ঔষধপত্র এয়ারড্রপ করা শুরু করার পর৷ ওয়াশিংটনের এই পদক্ষেপও ছিল বস্তুত তুরস্কের অনমনীয়তার কারণে৷
এখন প্রশ্ন হল, কোবানির উপর আইসিস-এর চাপ উপশমের জন্য তুরস্ক আর কী করতে প্রস্তুত? আংকারা কি এবার ওয়াশিংটনের সঙ্গে পূর্ণ সহযোগিতা করবে? শুধু বিমান হানা দিয়ে যে আইসিস-কে পরাজিত করা যাবে না, সে বিষয়ে পশ্চিমি বিশেষজ্ঞরা একমত৷ অপরদিকে ‘বুটস অন দ্য গ্রাউন্ড' বা স্থলযুদ্ধে আইসিসএর মহড়া নিচ্ছে একমাত্র কুর্দরা৷ কাজেই তাদের আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রসমাজের – এবং সেই সঙ্গে তুরস্কের পূর্ণ সাহায্য পাবার নৈতিক অধিকার রয়েছে বৈকি৷