তুরস্কে খনি দুর্ঘটনা
‘‘আমার ছেলের কী হয়েছে? মেহমেত, তুই কোথায়?’’ – এই আহাজারি এক মায়ের৷ তুরস্কে কয়লা খনিতে বিস্ফোরণের ঘটনায় এখনো যাদের খোঁজ মেলেনি, তাদের জীবিত উদ্ধারের আশা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে এসেছে৷
কয়লাখনির নরককুণ্ডে
মঙ্গলবার দুপুরে তুরস্কের মানিসা প্রদেশের সোমা শহরে ব্যক্তি মালিকানাধীন ওই খনিতে বিস্ফোরণের পরপরই আগুন ধরে যায়৷ সে সময় ভেতরে ছিলেন অন্তত ৭৮৭ জন৷ তাদের মধ্যে ৩৭০ জনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে, নিহতের সংখ্যা ২৮০ ছাড়িয়েছে৷
বৈদ্যুতিক গোলোযোগে বিস্ফোরণ?
ইস্তানবুল থেকে আড়াইশ কিলোমিটার দক্ষিণে ওই খনিতে যখন বিস্ফোরণ ঘটে, তখন শ্রমিকদের পালা বদল চলছিল৷ কর্তৃপক্ষের ধারণা, বৈদ্যুতিক গোলোযোগই এ বিস্ফোরণের কারণ৷ আর অধিকাংশের মৃত্যু হয়েছে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সৃষ্ট কার্বন মনোক্সাইড গ্যাসের বিষক্রিয়ায়৷
জীবনের দূরত্ব ২ কিলোমিটার
ভূপৃষ্ঠ থেকে দুই কিলোমিটার ভেতরে এবং খনির প্রবেশ পথ থেকে চার কিলোমিটার দূরে এখনো বহু শ্রমিক আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ কিন্তু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় সেখানে নামা সম্ভব হচ্ছে না৷ উদ্ধার কর্মীরা যাদের জীবিত তুলে আনতে পেরেছেন, তাদের অধিকাংশই আহত৷
উৎকণ্ঠা, অশ্রু
আশেপাশের কয়কটি খনির শ্রমিকরাও সোমার এই কয়লাখনিতে উদ্ধার অভিযানে অংশ নিচ্ছেন৷ আর খনির বাইরে কেবলই উৎকণ্ঠা৷ কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেই তাকে স্ট্রেচারে করে তোলা হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্সে৷ চারপাশে ভীড় করে থাকা স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পরছেন থেকে থেকে৷
ভয়াবহতম?
তুরস্কের ইতিহাসে ভয়াবহতম খনি দুর্ঘটনাটি ঘটে ১৯৯২ সালে৷ কৃষ্ণ সাগরের কাছে সঙ্গুলডাক-এ ওই খনিতে বিস্ফোরণ ঘটলে নিহত হন অন্তত ২৭০ জন৷ খনিতে কাজের পরিবেশের উন্নয়ন এবং নিরাপত্তার দাবিতে তুরস্কের শ্রমিকরা গত বছর বিক্ষোভেও অংশ নেন৷ স্থানীয়দের আশঙ্কা, সোমায় নিহতের সংখ্যা সঙ্গুলডাক-কেও ছাড়িয়ে যেতে পারে৷
তিন দিনের শোক
তুরস্কের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ এ খনি দুর্ঘটনার পর তিন দিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার৷ এই তিন দিন জাতীয় পতাকা রাখা হবে অর্ধনমিত৷ প্রধানমন্ত্রী রেচেপ তাইয়িপ এর্দোয়ান ইতোমধ্যে আলবেনিয়া সফর বাতিল করে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷