তুরস্কে নাস্তিকতা বাড়ছে!
১৩ জানুয়ারি ২০১৯কোন্ডা নামের একটি প্রতিষ্ঠান নানা বিষয়ে জরিপ পরিচালনার জন্য বিখ্যাত৷ তাদের এক জরিপে দাবি করা হয়, গত ১০ বছরে তুরস্কে ‘অবিশ্বাসীদের' সংখ্যা বেড়েছে৷ দেশটিতে ইসলাম পালন করা বা কট্টর ইসলামপন্থি লোকের সংখ্যা ৫৫ শতাংশ থেকে ৫১ শতাংশে নেমেছে৷
৩৬ বছর বয়সি কম্পিউটার বিজ্ঞানী আহমেত বালেইমেজ ১০ বছর ধরে নাস্তিক৷ তিনি বলেন, ‘‘তুরস্কে ইসলাম পালন করতে বাধ্য করা হয়৷ আমাদের প্রশাসন আমাদের ওপর তা চাপিয়ে দিচ্ছে৷ ফলে আমরা ভাবতে বাধ্য হই– এই কী আসল ইসলাম?'' তিনি মনে করেন, ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা থেকে নিজেকে রক্ষায় নাস্তিকতা উত্তম বিকল্প৷
তুরস্কের ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে ঘোষণা দিয়েছিল যে, দেশটির ৯৯ শতাংশ লোক ইসলাম ধর্মের অনুসারী৷ কিন্তু কোন্ডার এই গবেষণা প্রকাশের পর ধর্মমন্ত্রণালয়ের এ দাবি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে৷
ধর্মতত্ত্ববিদ কেমিল কেলিক বলেন, ‘‘কোন্ডার জরিপ ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের জরিপ দুটোই সঠিক৷ কারণ, তুরস্ক একটি মুসলিম প্রধান দেশ৷ এই দেশে জন্মসূত্রে সবাই মুসলমান৷ এখানে ৯৯ শতাংশ মুসলমানের একটি অংশ শুধুমাত্র সামাজিক দায়-দায়িত্ব পালনের লক্ষ্যে ইসলাম পালন করে৷ তাঁরা আত্মিকভাবে মুসলমান নয়৷ তাঁরা নিয়মিত নামাজ আদায় করে, হজে যায়, হিজাব পরে, কিন্তু মানসিকভাবে ধর্মকে সামাজিক অনুশাসনের পদ্ধতি ছাড়া কিছুই ভাবে না৷ তাঁদের পরিচয়ও কিন্তু মুসলমান।অন্যদিকে আরেকটি গ্রুপ ইসলাম ধর্মকেই নিশ্চিত নিয়ম বলে এর সব কঠোর অনুশাসন মেনে চলে৷ এদের সংখ্যা ৬০ শতাংশের মতো৷ এরা সত্যিকার অর্থে ধার্মিক৷''
কেমিল তুরস্কের জনগণকে ১৭ শতাব্দীর উমাইয়াদ গোত্রের সঙ্গে তুলনা করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় উমাইয়াদ জনগোষ্ঠী নিজ দেশের শাসককে খুশি রাখতে প্রার্থনা করতো৷ তুরস্কের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী প্রশাসনকে সন্তুষ্ট রাখতে নিয়মিত নামাজ পড়ে৷ অথচ কোরানে ন্যায়ের শাসনের কথা উল্লেখ রয়েছে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘তুরস্কে মসজিদ আর প্রশাসন একে অপরের সহযোগী৷ কারণ, এখানে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হচ্ছে প্রশাসনের প্রতি আনুগত্যের লক্ষণ৷ আর নিয়মিত মসজিদে নামাজ পড়া সেই আনুগত্যকে আরো সুস্পষ্ট করে৷ মসজিদ হিসাব রাখে নামাজের৷''
তুরস্কের নাস্তিকদের অন্যতম প্রধান সংগঠন অ্যাটিজম ডেরনেগির প্রধান সেলিম ওজকোহেন বলেন, ‘‘এর্দোয়ান প্রশাসন চেষ্টা করছে ধর্মপ্রাণ মুসলমান প্রজন্ম তৈরি করতে, যাঁদের নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করা যাবে৷ অথচ ভেতরে ভেতরে এই প্রজন্মের মধ্যে বিশ্বাসগত বিভাজন স্পষ্ট হচ্ছে৷''
এ প্রসঙ্গে সেলিম ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ওই অভ্যুত্থানের দায় দেওয়া হয়েছিল ধর্মীয় চিন্তাবিদ ফেতুল্লাহ গুলেনকে৷ তাঁর অনুসারীরা প্রশাসনের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে যুক্ত হয়৷ এতেই রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভেদ স্পষ্ট৷ একই ধর্মের অনুসারী একই কাতারে নামাজ পড়ে ধর্মীয় ভাবধারায় আলাদা আচরণ করছে৷ জনগণ নিজেদের বিশ্বাসগত এই পার্থক্য লক্ষ্য করছে৷ এদের মধ্যে যৌক্তিক আচরণের ব্যক্তিরা নাস্তিকতায় ঝুঁকছে৷''
টুঙ্কা ও্যগ্রেটেন/এফএ