তুরস্কে ভয়াবহ ক্ষতির দায় নেবে কে?
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩তুরস্কে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারে পৌঁছেছে। এখনো উদ্ধারকাজ অব্যাহত। তারইমধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, এই ভয়াবহতার দায় নেবে কে? প্রশ্নটি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে কারণ, সম্প্রতি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়েপ এর্দোয়ান বলেছেন, ''অদৃষ্টে থাকলে এমনই হয়।'' অর্থাৎ, সবই ঈশ্বরের ইচ্ছা। অন্য কারও গাফিলতির কথা বলতে চাননি তিনি। আর সেখান থেকেই উঠেছে প্রশ্ন।
তুরস্কেরমানুষের প্রশ্ন, জাপানের অদৃষ্টে কেন এমনটা লেখা থাকে না! কেন কেবল তুরস্কের মানুষকেই বার বার আক্রান্ত হতে হয়? দক্ষিণ তুরস্কের পরপর দুইটি ভূমিকম্প হয়েছে নয় ঘণ্টার ব্যবধানে। তারমধ্যে প্রথমটি হয় ভোররাতে। সাত দশমিক আট তীব্রতার ভূমিকম্পেই বহু বাড়ি ধসে পড়ে। এরপর সন্ধ্যায় আবার তীব্র কম্পন হয়। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, এর ফলে ১০টি শহরে অন্তত ৩৩ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হয় সেগুলি ভেঙে পড়েছে অথবা সেগুলিকে ভেঙে ফেলা হয়েছে। সব মিলিয়ে ১ মিলিয়ন মানুষ ঘরছাড়া। ১৩ মিলিয়ন মানুষ কোনো না কোনো ভাবে সমস্যায় পড়েছেন।
নাগরিকদের প্রশ্ন, এর দায় কি সরকারের নয়? যারা বাড়ি তৈরি করে, তাদেরও কি কোনো দায় নেই? সরকারের নির্দেশে এখনো পর্যন্ত ১৩৪জন বিল্ডারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাড়ি তৈরির সময় ভূমিকম্পরোধের নিয়ম তারা পালন করেনি বলে অভিযোগ। কোনো কোনো বিল্ডারকে বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়েছে। বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে তারা পালাচ্ছিল।
নাগরিকদের অভিযোগ, সরকারও এর সঙ্গে যুক্ত। সরকারি কর্মচারী এবং রাজনীতিকদের ঘুষ দিয়ে ওই বিল্ডাররা খারাপ বাড়ি তৈরি করেন। নিয়ম না মেনে বাড়ি তৈরি করা হয়। নিয়ম বহির্ভূত বাড়ির ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হয়। এজন্য্ই জাপানের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। নাগরিকদের বক্তব্য, জাপানে তুরস্কের থেকে অনেক বেশি ভূমিকম্প হয়, কিন্তু জাপানের সরকার এমনভাবে বাড়ি তৈরি করে, যাতে ভূমিকম্পে সেই বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তুরস্কেও তেমন আইন আছে, কিন্তু তা পালন করা হয় না।
এর আগেও তুরস্কে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়েছে। হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আইন হয়েছে। কিন্তু সরকার এবং বিল্ডার কারো কোনো হেলদোল হয়নি। সে জন্যই এবার এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলো।
দক্ষিণ তুরস্কের যে অঞ্চলে এবার ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর বসবাস। যাদের মৃত্যু হয়েছে তার একটা বড় অংশ ছাত্র বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
এসজি/জিএইচ (রয়টার্স, এপি, এএফপি)