তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি
১২ নভেম্বর ২০১৩বাংলাদেশে এখন শুধু নারী-পুরুষ নয়, হিজরারাও আলাদা একটি লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত পেলেন৷ আর প্রচলিত ধারণাকে ভেঙে এই তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতির ব্যাপারে মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নেয় সোমবার, যা হিজরাদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়ে তুলেছে৷ তাঁরা মনে করেন, এখন তাঁরা দেশের সব নাগরিক মতো অধিকার ভোগ করতে পারবেন৷ সমাজে মানুষের মত বাঁচতে পারবেন৷
সাধারণ হিসেবে দেশে প্রায় ১০ হাজার হিজড়া রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷ কিন্তু হিজরাদের নেতা আবুল হোসেন ডয়চে ভেলেকে জানান, সারা দেশে তাঁদের সংখ্যা ৪০ হাজারের কম হবেনা৷ তিনি আরও জানান, এতদিন তাঁরা লিঙ্গবৈষম্যের শিকার হয়েছেন৷ নারী বা পুরুষের বাইরে আর কোন লিঙ্গের আইনি স্বীকৃতি না থাকায় তাঁরা মৌলিক এবং নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ চাকরি, স্কুলে পড়াশুনা এমনকি ভোটাধিকার থেকেও তারা বঞ্চিত৷ কারণ এসব সুবিধা পেতে হলে প্রচলিত আইনে পুরুষ অথবা নারী হতে হয়৷ কিন্তু হিজড়ারা নারী বা পুরুষ – এর কোনোটিই নয়৷ তাই তাঁদের লিঙ্গের স্বীকৃতি তাদের বঞ্চনা থেকে বাঁচাবে বলে মনে করেন আবুল হোসেন৷
আরেকজন হিজরা দীপালি ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁদের লিঙ্গের স্বীকৃতি না থাকায় তাঁরা বেঁচে থাকার তাগিদেই কখনো পুরুষ আবার কখনো নারীর পরিচয় ধারণ করেন৷ আর তাঁদের শুধু বঞ্চনা নয়, নির্যাতনেরও শিকার হতে হয়৷ তাঁরা নির্যাতনের শিকার হয়ে থানায় মামলা করতে গেলে থানা মামলা নেয়না৷ এমনকি তাঁরা মারা গেলে তাদের জানাজা বা সত্কার নিয়েও হয় জটিলতা৷ তিনি মনে করেন, তাঁদের লিঙ্গের স্বীকৃতি এখন তাদের মানুষ এবং নাগরিক হিসেবে অধিকার আদায়ের সুযোগ করে দেবে৷
এদিকে মানবাধিকার নেতা নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ৷ তবে এই স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়৷ পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে রাষ্ট্রকে তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতে হবে৷ তাঁদের শিক্ষা, চিকিত্সা এবং কর্মসংস্থানের জন্য করতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা৷ যাতে তাঁরা ক্রমান্বয়ে সক্ষমতা অর্জন করে মূল জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে৷ আর তাঁদের ব্যাপারে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন আনতে হবে৷ বুঝতে হবে মানুষ ৩ লিঙ্গের – পুরুষ, নারী এবং হিজড়া৷ তিনি বলেন, এখন বিভিন্ন সরকারি কাগজপত্র, পাসপোর্টসহ সব ক্ষেত্রে লিঙ্গ হিসেবে হিজড়াও থাকতে হবে৷ প্রয়োজনে তাঁদের জন্য কোটা চালু করতে হবে৷ আর এই কাজ যত দ্রুত হবে ততই হিজরাদের জন্য মঙ্গল৷
সামাজিক কারণে হিজরারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন৷ লোকলজ্জার ভয়ে হয় বাবা-মা হিজরাদের পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেন৷ অথবা তাঁরাই অপমান সইতে না পেরে বিচ্ছিন্ন হয়ে যান পরিবার থেকে৷ বাস করেন হিজরাদের সঙ্গে দলবদ্ধ হয়ে৷ বাংলাদেশে হিজরাদের নিয়ে বেশ কিছু এনজিও কাজ করে৷ সরকারের উদ্যোগে একটি প্রকল্পও আছে৷ সেই প্রকল্পের পরিচালক এস এম এবাদুর রহমান মনে করেন, ‘‘হিজরাদের উন্নয়নে এবং মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে এখন প্রয়োজন সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ৷ আর পরিবর্তন হতে হবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির৷''