তেইশে মার্চ সশস্ত্র প্যারেড করেন ফোরকান
২৪ অক্টোবর ২০১২বর্তমান নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জে ১৯৫০ সালের ৬ই মে জন্মগ্রহণ করেন ফোরকান বেগম৷ বাবা মো. তমিজ উদ্দীন ভুঁইয়া এবং মা রোকেয়া বেগম৷ ফোরকান বেগমের মা একজন মুক্তিযোদ্ধা, ভাষাসৈনিক এবং বিদ্যোৎসাহী নারী ছিলেন৷ ফোরকান বেগম ১৯৬৬ সালে ঢাকা কামরুন্নেসা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ঢাকা সরকারি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ থেকে ১৯৬৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করেন৷ ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন ফোরকান বেগম৷
প্রিয় মাতৃভূমির মুক্তির জন্য কীভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন সেসম্পর্কে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন. ‘‘তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তান ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলাম এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান থেকে শুরু করে পরবর্তী আন্দোলনমুখর দিনগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে মিছিল-মিটিং করেছি৷ এছাড়া স্থানীয় পরিষদগুলোর সদস্যদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷ ঢাকায় গোয়েন্দাগিরি ও গেরিলা হামলার জন্য বিশেষ বাহিনী তৈরি করে তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি৷ ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে, সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের মাঠে এবং প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ামাগারে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি৷ এছাড়া আত্মঘাতী হামলার জন্যও কিছু ছেলে-মেয়েকে প্রস্তুত করা হয়৷ এর মধ্যে ইয়াহিয়া যখন ঘোষণা দিলেন যে, অধিবেশন স্থগিত করা হলো তখন পহেলা মার্চ আমরা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছি৷ ২রা মার্চ আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছি৷ এরপর ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক বক্তৃতার সময় সেনা-পুলিশ তো আমাদের পক্ষে ছিল না৷ তখন আমরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে রাজ্জাক ভাইয়ের নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা দিয়ে টুপি বানিয়ে সেই টুপি পরে হাতে লাঠি নিয়ে এই জনসভা নিয়ন্ত্রণ করেছি৷ ২৩শে মার্চ পাকিস্তান দিবস ছিল৷ অন্যান্য বছর পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা এই দিবসটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে পালন করলেও ১৯৭১ সালে তারা পূর্ব-পাকিস্তানে দিবসটি পালন করেনি৷ বরং স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যে, আমরা যারা সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য এবং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ছিলাম তারা ২৩শে মার্চ সকাল ১০টার মধ্যে বর্তমান পল্টন ময়দানে হাজির হয়ে প্যারেড করবো৷ সেখানে আমরা কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রী হাজির হয়ে সশস্ত্র প্যারেড করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের চার নেতাকে সালাম জানাই৷ আমি প্যারেডে সামনের সারিতে থেকে সালাম দিয়েছিলাম৷ সেখানেই ছাত্রলীগের অন্যতম কেন্দ্রীয় নেতা কামরুল আলম খসরু প্রথম উপরের দিকে বন্দুকের গুলি ফায়ার করে প্যারেড শুরু হওয়ার আগে মূল বড় পতাকাটি উত্তোলন করেন৷ আমরা এসব কর্মসূচি আগে প্রচার না করলেও সেদিন পল্টন ময়দানের চারিদিকে হাজার হাজার মানুষ হাজির হয়ে আমাদের প্যারেড উপভোগ করেছে এবং করতালি দিয়ে উৎসাহিত করে৷ আমরা প্রচণ্ড গরমের মধ্যে খালি পায়ে বন্দুক কাঁধে নিয়ে এবং পতাকা নিয়ে প্যারেড করে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়িতে যাই৷ কিন্তু প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে আমরা বঙ্গবন্ধুর হাতে সেই পতাকাটি তুলে দিতে পারিনি৷ বরং আসম আব্দুর রব ভাই তখন ইকুর হাত থেকে পতাকা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর হাতে তুলে দেন৷ বঙ্গবন্ধু পতাকাটি নিয়ে উঁচু থেকে জনতাকে সেটি দেখান৷ এছাড়া সেদিন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সাধারণ মানুষ বাড়ির উপর, দোকান-পাটে, নৌকায়, গাড়িতে এমনকি গাছের উপরও স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে৷ আমরা সেদিনই মনে করেছিলাম যে, আমরা স্বাধীন হয়ে গেলাম৷''