1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

তেজস্ক্রিয়া

৬ এপ্রিল ২০১২

চেরনোবিল ও ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয়ের পর মানুষের মনে তেজস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক বেড়েছে৷ এমনটি হলে মৃত্যু প্রায় অনিবার্য৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষক টিম এই সব রোগীকে সাহায্য করার জন্য পরীক্ষা নিরীক্ষায় তত্পর৷

https://p.dw.com/p/14YqV

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গবেষকদের একটি টিম গবেষণাগারে কয়েকটি ইঁদুরকে এমন ভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে আনেন, যাতে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত৷ ২৪ ঘণ্টা পর গবেষকরা ইঁদুরগুলির চিকিত্সা শুরু করেন৷ দিনে দুবার অ্যান্টিবায়োটিকের ড্রপ সরাসরি এই প্রাণীগুলির পেটে ঢুকিয়ে দেয়া হয়৷ এ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিকের একটি ইনজেকশনও দেয়া হয় তাদের৷ এই থেরাপি ৩০ দিন ধরে চলে৷ গবেষক ওফার লেভি এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যে সব ইঁদুরকে আমরা চিকিত্সা দিয়েছি, সেগুলি বেঁচে থেকেছে৷''

অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে সুফল

বস্টনের হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক লেভি৷ বস্টন ক্যানসার ইন্সটিটিউটের ইভা গেইনেন'এর সঙ্গে তেজস্ক্রিয়তা জনিত অসুখ বিসুখ নিরাময়ে গবেষণা করছেন তিনি৷ অতিরিক্ত মাত্রায় তেজস্ক্রিয় রশ্মির সংস্পর্শে এলে মানব দেহের কোষগুলি মারা যেতে শুরু করে৷ হজম প্রক্রিয়া বিনষ্ট হয়৷ অস্থির মজ্জায় যথেষ্ট রক্তকণিকা তৈরি হয় না৷ ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তিও ভেঙে পড়ে৷ কিন্তু দুই ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের চিকিত্সায় ইঁদুরগুলি মৃত্যু এড়াতে পেরেছে৷ অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, তাই তেজস্ক্রিয়া জনিত রোগেও বিশেষ প্রভাব রাখতে পারে এই ওষুধ৷ গবেষক লেভি বলেন, ‘‘তেজস্ক্রিয় রশ্মি দ্বারা শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি নষ্ট হয়ে যায়৷ অন্ত্রে ছিদ্র দেখা দেয়৷ সেখান থেকে ব্যাকটেরিয়া রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় ঢুকে পড়ে, যেখানে তাদের থাকার কথা নয়৷''

Fukushima Daiichi Atomkraftwerk
চেরনোবিল ও ফুকুশিমার পরমাণু বিপর্যয়ের পর মানুষের মনে তেজস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আতঙ্ক বেড়েছেছবি: picture alliance / abaca

রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়ায় বিরাট ক্ষতি সাধন করে ব্যাকটেরিয়াগুলি৷ ইভা গেইনেন জানান, ‘‘প্রথমে ব্যাকটেরিয়াগুলি সংক্রমণ সৃষ্টি করে৷ এরপর তাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে দেখা দেয় রক্তদূষণ৷ এক কথায় ব্যাকটেরিয়ার ভয়ানক সংক্রমণ৷ এই রক্ত দুষণই মূল সমস্যা৷''

সুস্থ দেহের পক্ষে যা সহজ

কিছু ব্যাকটেরিয়া রক্তে থাকাটা সুস্থ মানুষের পক্ষে তেমন ক্ষতিকারক নয়৷ প্রায় প্রতি দিনই এমনটি ঘটে থাকে৷ যেমন দাঁত ব্রাশ করার সময়৷ ব্রাশ থেকে দাঁতের মাড়িতে ঢুকতে পারে ব্যাকটেরিয়ারা৷ রক্তের শ্বেত রক্তকণিকা এগুলিকে দমন করতে পারে৷ দেহের নিজস্ব এক ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক ‘বিপিআই'এর সাহায্যে ব্যাকটেরিয়াগুলিকে শুধু মেরেই ফেলা হয় না, সংক্রমণ প্রক্রিয়াও প্রতিরোধ করা হয়৷ কিন্তু তেজস্ক্রিয় রশ্মিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের বেলায় এটা সম্ভব নয়৷ লেভি বলেন, ‘‘ভুক্তভোগীদের রোগ প্রতিরোধ শক্তি তেজস্ক্রিয় রশ্মি দ্বারা অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে৷ এই রশ্মি অস্থির মজ্জা ধ্বংস করে৷ ফলে রক্তে শ্বেত কণিকার বিপিআই বা দেহের নিজস্ব অ্যান্টিবায়োটিক প্রস্তুত হয় না৷ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যখন প্রতিরোধ শক্তিটির বিশেষ প্রয়োজন, তখনই থাকে এটি অনুপস্থিত৷''

প্রতিরোধ শক্তি সচল হয়ে ওঠে

গবেষকরা গবেষণাগারের ইঁদুরগুলির দেহে ‘বিপিআই' ইনজেকশন করে ঢুকিয়ে দেন৷ ল্যাবরেটরিতে এই বিপিআই বহুদিন ধরেই প্রস্তুত করা হচ্ছে৷ তবে শুধু এই উপাদানটি প্রাণীগুলিকে সাহায্য করতে পারে না৷ তার ওপর প্রতিদিন একটি ব্রডব্যান্ড অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হয় বা ইনজেকশন নিতে হয়৷ এই চিকিত্সার পর তিন চতুর্থাংশ ইঁদুর মৃত্যুর হাত থেকে উদ্ধার পেয়েছে৷ গবেষক লেভির ভাষায়, ‘‘ইঁদুরগুলির অস্থির মজ্জা দ্রুত চাঙ্গা হয়ে ওঠে৷ শ্বেত কণিকা তৈরি করার মত শক্তি অর্জন করে, যা তত্পর হতে পারে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায়৷''

তেজস্ক্রিয়া জনিত রোগ ব্যাধিকে দমন করতে আগেও বহু থেরাপি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে৷ বেশির ভাগই নতুন কোনো উপাদান নিয়ে, সুস্থ মানুষের ওপর৷ ইভা গেইনেন এবং ওফার লেভি প্রচলিত ওষুধ নিয়েই গবেষণা করছেন৷ গবেষক লেভি জানান, ‘‘ব্রডব্যান্ড অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে রক্ত দূষণের চিকিত্সা করা হচ্ছে বহুদিন ধরেই৷ অথবা সেই সব রোগীদেরও এই ওষুধ দিয়ে চিকিত্সা দেয়া হচ্ছে, যাদের অস্থির মজ্জা, প্রতিস্থাপনের পর ধ্বংস হয়ে গেছে৷ আমরা জানি এটা কার্যকর ও নিরাপদ৷ বারোশো সুস্থ ও অসুস্থ ব্যক্তির ওপর বিপিআই প্রয়োগ করে পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়েছে৷''

দুই গবেষক অনেকটা আশাবাদী, এই থেরাপি তেজস্ক্রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদেরও সাহায্য করবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য