ত্রাণ কাজে ধীরগতি
১৫ নভেম্বর ২০১৩রাস্তায় রাস্তায় ছড়িয়ে আছে মৃতদেহ৷ টেলিযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, নেই বিদ্যুৎ৷ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় ত্রাণ বিতরণও ব্যাহত হচ্ছে৷ হাইয়ান আঘাত হানার এক সপ্তাহ পরেও টাকলোবানের অবস্থা এখন এটা৷
ত্রাণকাজে ধীরগতি এবং বিশুদ্ধ পানির অভাবে শরণার্থীদের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ এ কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র নাইকা আলেকজান্ডার ফিলিপাইন্স সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে মৃতদেহ উদ্ধারের চেয়ে শরণার্থীদের প্রতি বেশি নজর দেয়া হয়৷
তাই ফিলিপাইন্সে দুর্গতদের যারাই সাহায্য করতে চাচ্ছেন, চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন৷ হংকং-এর মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মী জানালেন, অনেক চেষ্টা করেও টেলিফোনে সংযোগ স্থাপন করতে পারেননি তিনি৷ হংকং-এ ১ লাখ ৩৩ হাজার ফিলিপিনো অধিবাসীর বসবাস৷ তাই তারা উদগ্রীব স্বজনদের খবর জানতে এবং তাদের সাথে যোগাযোগ করতে৷
১৮ বছর বয়সী হাওয়ার্ড বার্তা সংস্থা এপিকে জানালেন, ঝড়ের দিন থেকেই তিনি তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন, কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন খবর পাননি তাদের৷ কখনো কখনো তিনি হতাশ হলেও আবার চেষ্টা করেন এবং বারবার ফোন করতে থাকেন এই আশায় যদি অলৌকিক কিছু ঘটে৷
একই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত প্রবাসীদেরও৷ এখন তারা গির্জায় গিয়ে প্রার্থনায় রত৷ প্রতিদিনই তারা মিলিত হচ্ছেন বিশেষ প্রার্থনায়৷ মধ্যপ্রাচ্যেও চলছে প্রার্থনা৷ সেখানকার অধিবাসীরা স্বজনদের জন্য যেমন প্রার্থনা করছেন, সেইসাথে এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেন পৃথিবীর আর কোথাও না হয় সেই প্রার্থনাও করছেন৷
এদিকে, ফিলিপাইন্স সরকার নিহতদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশ করছে না এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা ৩,৬২১৷ দেশটির দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ বিভাগের প্রধান এদুয়ার্দো দেল রোসারিও সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েই তারা এই সংখ্যা প্রকাশ করছেন৷ এমনকি টাকলোবানের ৯৫ ভাগ মানুষ ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে – এই তথ্য অস্বীকার করে প্রেসিডেন্ট বেনিগনো অ্যাকুইনো অভিযোগ করেছেন, কর্মকর্তারা বিভ্রান্তিকর তথ্য উপস্থাপন করছেন৷
এদিকে, ত্রাণ কাজে সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডে হতাশ জনগণ৷ ত্রাণ কাজে ধীরগতির কারণে স্থানীয় গণমাধ্যম অ্যাকুইনোর নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ফিলিপাইন্সের ডেইলি ইনকুইরার পত্রিকার শিরোনাম – ‘হু ইজ ইনচার্জ হিয়ার'? বিশ্লেষকরাও বলছেন, এই ঝড়ে অ্যাকুইনোর কর্মকাণ্ড পরবর্তী নির্বাচনে বেশ প্রভাব ফেলবে৷
হাইয়ানের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে ফিলিপাইন্সের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও৷ ন্যাশনাল ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট কর্তৃপক্ষ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ২০১৩ সালে দেশটির গড় উৎপাদন ০.৩ শতাংশ থেকে ০.৮ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে৷ যার ফলে প্রবৃব্ধি কমবে ৬.৫ ভাগ থেকে ৭ ভাগ৷
এপিবি/এসবি (এপি, এএফপি, ডিপিএ, রয়টার্স)