থাইল্যান্ডে অভিবাসীদের অমানুষিক কষ্ট
১৮ সেপ্টেম্বর ২০১১হালা মিন্ট৷ মিয়ানমারের নাগরিক৷ ভাগ্য বদলাতে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন৷ যোগাযোগ করেছিলেন দালালদের সঙ্গে৷ পরে সাতদিন ধরে জঙ্গলে জঙ্গলে ঘুরে অবশেষে গিয়ে পৌঁছান স্বপ্নের থাইল্যান্ডে৷ ভেবেছিলেন, কষ্টের দিন শেষ৷ এবার থেকে সামনে শুধু ভাল দিন৷
কিন্তু না৷ মিন্ট ভাবতেই পারেন নি, যে কষ্ট করে তিনি থাইল্যান্ডে পৌঁছেছেন, তার চেয়েও বেশি কষ্ট অপেক্ষা করছে তার জন্য৷
থাইল্যান্ডে সমুদ্রগামী একটি মাছ ধরার জাহাজে কাজ শুরু করেন মিন্ট৷ যদিও কোনো এক কারখানায় কাজ করার কথা ছিল তার৷ ঐ জাহাজেই শুরু হয় তার সাত মাসের কষ্টের জীবন৷ সেখান থেকে পালিয়ে না এলে চলতেই থাকতো সেটা৷ নয়তো কোনো একদিন জাহাজের ক্যাপ্টেনের গুলিতে প্রাণ দিতে হতো৷
জাহাজে তার কাজের বর্ণনা দিতে গিতে মিন্ট বলেন, তাকে কাজ করতে হতো দিনে ২০ ঘন্টা এবং সপ্তাহে সাতদিন৷ অর্থাৎ কোনো বিরতি নেই৷ শুধু খাওয়া দাওয়ার জন্য যে সময়টুকু দরকার সেটাই পেতেন তিনি৷ আর বাকীটা সময় কাজ আর কাজ৷ আর একটু গাফিলতি হলে শুরু হতো মালিকের নির্যাতন৷
এভাবে কাজ করতে না চেয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিল মিন্টের এক সহকর্মী৷ কিন্তু বিধি বাম৷ ধরা পড়ে যান মালিকের কাছে৷ ফলে সবার সামনে ঐ কর্মীকে মারধর করেন মালিক৷ পরে জাহাজের পেছন দিকে নিয়ে গিয়ে মাথায় গুলি করে তাকে মেরে ফেলা হয়৷
নিজের চোখের সামনে এই ঘটনা ঘটতে দেখে মিন্ট অসহায় হয়ে পড়েন৷ সিদ্ধান্ত নেন তিনিও পালিয়ে যাবেন৷ তাই একদিন ঝাঁপ দেন সাগরে৷ পরে লাইফ জ্যাকেটে ভর দিয়ে সাঁতরে পাড়ে ওঠেন তিনি৷
মিন্ট এখন কাজ করেন এমন এক সংস্থায়, যার কাজ হচ্ছে মিয়ানমারের আটকে পড়া যুবকদের উদ্ধার করা৷
এতক্ষণ থাইল্যান্ডের যে ঘটনা বলা হলো সেটা স্বাকীর করছেন সেদেশের সামাজিক উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী সিরিরাত আয়ুওয়াথানা৷ তিনি বলেন তাঁর সরকার এই সমস্যা সম্পর্কে অবহিত রয়েছে এবং এর সমাধানে একটি কমিশন গঠনের পরিকল্পনা করছে বলে জানান মন্ত্রী৷ এই কমিশনের মাধ্যমে মাছ ধরা জাহাজ ও সেখানে কাজ করা শ্রমিকদের তালিকা নিবন্ধন করা হবে৷
অবশ্য থাই মন্ত্রী স্বীকার করেছেন দূর সাগরে জাহাজে শ্রমিকদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয় সেটা পর্যবেক্ষণে রাখা কঠিন৷
এদিকে থাইল্যান্ডের একটি উপকূলীয় অঞ্চলের এক পুলিশ সদস্য বলেছেন প্রতি মাসে গড়ে ১০টি মৃতদেহ সাগর থেকে উপকূলে ভেসে আসে৷ আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা আইওএম'এর এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দেয়া হয়েছে৷
এছাড়া জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, কম্বোডিয়ার অভিবাসীদের অর্ধেকই বলেছে যে, তারা জাহাজে তাদের অন্তত একজন সহকর্মীকে মালিকের হাতে নিহত হতে দেখেছেন৷
তবে থাইল্যান্ডের জাতীয় মৎসসম্পদ সমিতির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন৷
উল্লেখ্য, থাইল্যান্ডের সামুদ্রিক খাবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে৷ চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোই প্রধানত থাইল্যান্ড থেকে এধরনের খাবার আমদানি করে থাকে৷
এমন পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ড থেকে সামুদ্রিক খাবার না কেনার জন্য বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ৷
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: রিয়াজুল ইসলাম