থাইল্যান্ডের বেকার হাতি ও মাহুতদের সংকটময় দিন
করোনার আঘাতে থাইল্যান্ডের পর্যটন খাতে যে বিপর্যয় নেমেছে তা আর আগের অবস্থায় ফেরেনি৷ পর্যটকদের মনোরঞ্জনে ব্যবহৃত হাজারো হাতি আর তাদের উপর নির্ভরশীল মানুষেরা তাই পড়েছেন বিপাকে৷
মা, সন্তান ও মাহুত
এই বাচ্চা হাতিটির নাম পাংমামায়ে৷ মা আর মাহুতের সঙ্গে খাবারের সন্ধানে বেরিয়েছে সে৷ থাইল্যান্ডে এই হাতি আর তার মাহুতদের জন্য প্রতিটি দিনই এখন চ্যালেঞ্জের৷ কাজ নেই, তাই টাকাও নেই৷ মাহুতেরাই যেখানে হিমশিম খাচ্ছেন রোজগারে, সেখানে হাতিদের খাবার সংগ্রহ তারা কিভাবে করবেন?
বিকল্প আয়ের সন্ধানে
থাইল্যান্ডের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের গ্রাম বান তা ক্লাং৷ সেখানকার বাসিন্দা সিরিপর্নের প্রতিদিনের কাজ শুরু হয় টিকটক ও ইউটিউবে তাদের দুই হাতির লাইভ স্ট্রিমিং করে৷ কয়েক ঘণ্টার লাইভে কোনোরকমে এক হাজার বাথ বা প্রায় আড়াই হাজার টাকা অনুদান পায় সে৷ সেই টাকা হাতির পেছনেই খরচ হয়ে যায়৷ নিজেদের খাবারেরে জন্য তাই বাজারে ফল বিক্রি করতে হয় তাদের৷
পুরোনো দিন
আগে এই হাতিগুলো পর্যটকদের নানা খেলা দেখিয়ে মনোরঞ্জন করতো৷ তাতে ভালোই রোজগার হতো হাতিপালকদের, যা দিয়ে শুধু প্রাণীটির লালনপালনই নয়, নিজেদের পরিবারের খরচও চলে যেতো৷ কিন্তু ২০১৯ সালের আগে যেখানে চার কোটি পর্যটক এসেছে দেশটিতে সেখানে গত বছর এই সংখ্যা চার লাখে ঠেকেছে৷
বেকার হাজারো হাতি
ওয়াইল্ডলাইফ ফ্রেন্ডস ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠনের হিসাবে দেশটিতে অন্তত এক হাজার হাতির এখন ‘প্রয়োজনীয় আয়’ নেই৷ পর্যটকের সংখ্যা না বাড়লে এই পরিস্থিতি বদলের সম্ভাবনাও তেমন নেই৷ সংঠনটির প্রতিষ্ঠাতা এডউইন ইউকের মতে, এমন অবস্থায় পালনকারী পরিবারগুলোর পক্ষে এই হাতিদের বাঁচিয়ে রাখা কঠিন হয়ে যাবে৷
সরকারি সহায়তা
হাতিদের খাওয়ানোর জন্য ২০২০ সাল থেকে কয়েকটি প্রদেশে পাঁচ লাখ কেজি ঘাস পাঠিয়েছে সরকার৷ হাতি দেশটির জাতীয় প্রাণীর মর্যাদা পায়৷ ওয়াল্ডলাইফ কনজারভেশন সোসাইটির হিসাবে প্রতিদিন স্থলভাগের সর্ববৃহৎ প্রাণীটির উদর পূর্তির জন্য দৈনিক ১৫০-২০০ কেজি খাবার প্রয়োজন৷
‘পরিবারের সদস্যের মতো’
সুরিন প্রদেশে বান তা ক্লাং থাইল্যান্ডে হাতিদের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত৷ এখানকার মানুষ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে হাতি পালন ও তাদের ব্যবহার করে রোজগার করে আসছেন৷ সিরিপর্নের মা পেন্সরি সাপমাক বলেন, ‘‘পরিবারের সদস্যের মতো ওদের সঙ্গে আমাদের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক৷ হাতি ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত৷ আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ৷’’
পরিস্থিতি বদলাবে?
থাইল্যান্ডের প্রাণীসম্পদ বিভাগের মহাপরিচালক সরাভিত থানিতো জানান, হাতিদের নিয়ে এই সংকটকে জাতীয় ইস্যু হিসেবে দেখা হচ্ছে৷ সরকার হাতিদের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা বাজেট বরাদ্দ দিবে বলেও জানান তিনি৷ এছাড়া কর্তৃপক্ষের আশা চলতি বছর এক কোটি পর্যটকের আগমন ঘটবে, যা পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাতে সহায়তা করবে৷
বন্দি হাতির সংখ্যা বেশি
সরকারি হিসাবে থাইল্যান্ডে ৩,২০০ থেকে ৪,০০০ হাতি বন্দি অবস্থায় রয়েছে৷ অন্যদিকে বন্য হাতির সংখ্যা প্রায় ৩,৫০০৷