চিকিৎসা প্রযুক্তি
১৪ জুন ২০১৩ভাঙা হাঁটু, কোমরে গেঁটেবাত৷ ক্রমেই আরো বেশি রোগীর প্রস্থেসিস বা কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন হয়ে পড়ছে, যাতে তারা ব্যথা ছাড়াই চলাফেরা করতে পারেন৷ এক্স-রে করলে হিপ-এর ক্ষয় বোঝা যায়৷ টোমাস এঙেলস-এর কোমরের দশা এমন, যে সাধারণ কৃত্রিম অঙ্গে আর কাজ হবে না৷
ডিটার ভিয়ারৎস বন শহরের ইউনিভার্সিটি ক্লিনিকের ডাক্তার৷ জয়েন্ট বা অস্থির ক্ষয়ের জটিল প্রক্রিয়া নিয়ে তাঁর কাজ৷ তিনি টোমাস-কে বোঝান, তার ক্ষতিগ্রস্ত হিপ নিয়ে কী করা যেতে পারে৷ তিনি বলেন, ‘‘বুঝতেই পারছেন যে, এটা এখানে ঠিকমতো বসবে না৷ কাজেই আপনার হাড়ের বিশেষ অবস্থা অনুযায়ী আমাদের একটা কৃত্রিম প্রত্যঙ্গ তৈরি করতে হবে৷''
প্রথমে টোমাসের জন্য বিশেষ কৃত্রিম অস্থির একটা থ্রিডি মডেল তৈরি করা হয়েছে৷ সেটি প্রায় নিখুঁত হতে হবে, যাতে তা অতি সহজে হিপ-এর হাড়ে বসানো যায়৷ নড়লে-চড়লে, ঘষাঘষি হলে চলবে না৷ তারপর লেজার রশ্মির মাধ্যমে সত্যিকারের ‘ইমপ্ল্যান্ট'-টির ত্রিমাত্রিক ‘প্রিন্ট' নিতে হবে৷ ক্রিস্টফ ওভার আখেনের ফ্রাউনহোফার লেজার প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানে এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা তৈরির জন্য আমরা টাইটেনিয়াম পাউডার ব্যবহার করি৷ টাইটেনিয়াম শরীরের পক্ষে সবচেয়ে সহনীয়৷ ইমপ্ল্যান্ট শরীরে কয়েক বছর ধরে বসানো থাকলেও তা কোনো অ্যালার্জি বা বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে না৷''
প্রিন্টিং শুরু করার আগে রোগীর মাপজোক আরো একবার পরীক্ষা করে, প্রয়োজনে রদবদল করা হয়৷ তারপর কাজ শুরু হয়৷ ক্রিস্টফ ওভার বলেন, ‘‘প্রক্রিয়াটা চলে এমন এক বদ্ধ চেম্বারে, যা আসলে একটি পাইপ, যার মেঝেটা নীচের দিকে নড়ে৷ এই মেঝের উপর আমি টাইটেনিয়াম পাউডারের একটা চিকন স্তর ছড়িয়ে দেই৷ তারপর লেজার রশ্মি সেই সব অংশ গলিয়ে দেয়, যা পরে ইমপ্ল্যান্টের অংশ হবে৷ এরপর আমি মেঝেটা আরও এক স্তর নামিয়ে দেই৷ তখন ঠিক একই প্রক্রিয়া ঘটে৷ এভাবে ধীরে ধীরে ইমপ্ল্যান্ট-টি তার চূড়ান্ত রূপ পায়৷''
এইভাবে বেশ কয়েক হাজার স্তরে ইমপ্ল্যান্ট-টি ‘প্রিন্ট' করা হয়৷ এতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে৷ সাবধানে টাইটেনিয়াম পাউডার থেকে সেটা বার করে নিতে হয়৷ ওভার বলেন, ‘‘এটা হল সেই চূড়ান্ত ইমপ্ল্যান্ট৷ যেখানে যেখানে এটা হাড়ের সঙ্গে ঠেকবে, সেখানে এমন ডিজাইন করা আছে যে, শরীরের হাড় খালি অংশে এঁটে বসতে পারবে৷ যার ফলে ইমপ্ল্যান্ট-টা আরো স্বাভাবিকভাবে শরীরের অঙ্গ হয়ে উঠবে আর দীর্ঘস্থায়ী হবে৷''
প্রতিটি লেজার ইমপ্ল্যান্ট একেবারে অভিনব৷ বাঁধা মাপের প্রস্থেসিস যাদের কাজে লাগে না, তাদের জন্য এগুলি প্রয়োজনীয় মাপ অনুযায়ী তৈরি করা হয়৷ ওভার বলেন, ‘‘মাপ অনুযায়ী ইমপ্ল্যান্ট তৈরি করার ফলে আমরা সেই সব রোগীদের সাহায্য করতে পারছি, যাদের এতকাল কোনো আশা ছিল না, যারা হুইলচেয়ারে বসে দিন কাটাতেন৷ আগে তাদের সাহায্য করা যেত না৷ নতুন এই পদ্ধতির ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগীরা আবার হাঁটাচলা করতে পারেন, তাঁদের জীবনযাত্রার মান একেবারে বদলে যায়৷''
টোমাস এঙেলস এখনও ক্রাচ নিয়ে হাঁটছেন৷ তবে অপারেশনের পর তাঁর আর ক্রাচের প্রয়োজন পড়বে না বলেই মনে হয়৷
এসি / এসবি