দমদমে যেভাবে প্রচার করছেন সৌগত, শীলভদ্র, সুজন
দমদমে এবার ত্রিমুখি লড়াই। তৃণমূল নেতা সৌগত রায়ের সঙ্গে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী ও বিজেপি-র শীলভদ্র দত্তের।
পরপর তিনবারের সাংসদ
সৌগত রায় পরপর তিনবার দমদম থেকে জিতেছেন। তাকেই আবার প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তিনি যে এলাকায় পরিচিত মুখ তাই নয়, লোকসভায় তৃণমূলের অন্যতম সক্রিয় সদস্য। বাংলা, ইংরাজি ও হিন্দিতে সাবলীলভাবে যুক্তিপূর্ণ ভাষণ দিতে পারেন। দীর্ঘদিনের সাংসদ, সাবেক মন্ত্রী ও অধ্যাপক সৌগত রায় তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থীদের মধ্যে অন্যতম।
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে
প্রচার চলছে প্রচণ্ড গরমের মধ্যে। খোলা গাড়িতে করে। রোদের হাত থেকে বাঁচতে মাথায় উঠে এসেছে ছাতা। মাঝেমধ্যে ডাবে চুমুক দিতে হচ্ছে। কিন্তু ৭৬ বছর বয়সি সৌগতর প্রচারে বিন্দুমাত্র ঢিলেমি নেই। রোজ সকাল থেকে প্রচার শুরু হয়ে যাচ্ছে। চলছে রাত পর্যন্ত।
'এভাবেই উন্নয়নের কাজ করতে চাই'
সৌগত বলছেন, তিনি উন্নয়নের কাজ করেছেন। বিধায়ক, পুরপিতাদের সঙ্গে মিলে এভাবেই উন্নয়নের কাজ ভবিষ্যতেও করতে চান। নিজের জয় নিয়ে চরম আত্মবিশ্বাসী সৌগত। তার সঙ্গে থাকছেন এলাকায় তৃণমূলের নেতা, পুরপিতারা। তারা জোর দিচ্ছেন মেয়েদের জন্য রাজ্য সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি ও প্রকল্পের উপর।
গতবার জেতেন ৫৩ হাজার ভোটে
২০১৯ সালে সৌগত রায় জিতেছিলেন ৫৩ হাজার ভোটে। দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন বিজেপি-র শমীক ভট্টাচার্য। জিতলেও ২০১৪-র তুলনায় সৌগতর জয়ের ব্যবধান অনেকটাই কমেছিল। এবারও কড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েছেন তিনি।
বিজেপি প্রার্থী শীলভদ্র দত্ত
দমদমে বিজেপি-র প্রার্থী হলেন শীলভদ্র দত্ত। একসময় তৃণমূলে ছিলেন। মুকুল রায় তাকে বিজেপি-তে নিয়ে আসেন। মুকুল আবার তৃণমূলে ফিরে গেলেও শীলভদ্র থেকে গেছেন বিজেপি-তে। তিনিও জনসংযোগে পিছিয়ে নেই।
দমদমে বিজেপি-র ভোট
দমদম থেকে ১৯৯৯ সালে জিতেছিলেন বিজেপি নেতা তপন শিকদার। তিনি বাজপেয়ীর সময় কেন্দ্রে মন্ত্রীও হয়েছিলেন। এই কেন্দ্রে গতবারও বিজেপি দুই নম্বরে ছিল। চার লাখ ৫৯ হাজার ভোট পেয়েছিলেন গতবারের বিজেপি প্রার্থী শমীক ভট্টাচার্য। ২০১৪ সালে তপন শিকদার তৃতীয় হলেও আড়াই লাখের বেশি ভোট পান।
এই গরমে হেঁটে প্রচারে জোর
শীলভদ্র হেঁটে প্রচারের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি একের পর এক রাস্তায় হাঁটছেন। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। অলিগলিতে ঢুকে পড়ছেন তিনি। তার দাবি, ভোটটা মানুষ মোদীকে দেবেন। দমদমে পানীয় জল নিয়ে, জল জমা নিয়ে, আবর্জনা নিয়ে, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে বর্তমান সাংসদ, পুরসভা ও রাজ্য সরকার কিছু করেননি বলে তার অভিযোগ।
পরিবর্তনের কথা বলে
শীলভদ্র এবার প্রচার করছেন পরিবর্তনের কথা বলে। পরপর তিনবারের সাংসদ সৌগত রায়। শীলভদ্রের দাবি, এলাকার মানুষ তার কাছ থেকে কিছুই পাননি। তাই তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে পরিবর্তনের কথা বলছেন। এভাবেই একেবারে পুরনো কায়দায় প্রচার করছেন শীলভদ্র।
বাম প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী ঝানু রাজনীতিক। এর আগে তিনি যাদবপুর থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হয়েছেন। যাদবপুর থেকে জিতে বিধানসভাতেও গেছেন। সিপিএমের লড়াকু নেতা বলে পরিচিত সুজন চক্রবর্তী এবার দমদম থেকে লড়ছেন। দমদম থেকে সিপিএম শেষবার জিতেছিল ২০০৪ সালে। অমিতাভ নন্দী হারিয়েছিলেন তপন শিকদারকে।
হেঁটে সুজন
বরাবরই হেঁটে প্রচার করতে ভালোবাসেন সুজন চক্রবর্তী। তিনি মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগে বিশ্বাসী। আর পায়ে হেঁটে প্রচার করলে মানুষের কাছে ভালোভাবে পৌঁছানো সম্ভব। তাই সুজন প্রচুর হাঁটছেন। বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। অলিগলিতে হেঁটে প্রচার করছেন।
সুজনের প্রচারে
সুজন চক্রবর্তী এবার নতুন কেন্দ্রে ভোটের লড়াইয়ে নেমেছেন। তিনি নিজে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচার করছেন। সেই সঙ্গে সিপিএমের রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতারাও প্রচারে আসছেন। ত্রিপুরার সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট, যুব নেত্রী ঐষী ঘোষ-সহ অন্যদেরও তার প্রচারে দেখা গেছে।
বাম ভোট
২০০৪ সালে এই কেন্দ্রে অসীম দাশগুপ্ত তিন লাখ ২৮ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। ২০১৯ সালে নেপালদেব ভট্টাচার্য পান এক লাখ ৬৭ হাজার ভোট। এবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়েছে সিপিএমের। আর সুজনও শক্তিশালী প্রার্থী। তাই ভালো ফল করার ব্যাপারে বামেরা আশাবাদী।