1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দল বদলেও হারলেন যারা পশ্চিমবঙ্গে

৬ জুন ২০২৪

দলবদল করে লোকসভা নির্বাচনে হেরে গেলেন পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশের বেশ কয়েকজন প্রার্থী।

https://p.dw.com/p/4gjfd
লোকসভা নির্বাচনে ভালো ফল করার পর কলকাতায় তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের উচ্ছ্বাস।
তৃণমূল গতবারের তুলনায় আসনসংখ্যা অনেক বাড়িয়েছে। কিন্তু তারাও দলবদলুদের জেতাতে পারেনি। ছবি: Sudipta Das/NurPhoto/picture alliance

দলবদল করে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে নজির গড়েছেন ব্যারাকপুরের সাবেক সাংসদ অর্জুন সিং। তৃণমূলের থেকে টিকিট না পেয়ে ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রার্থী হন অর্জুন। কঠিন লড়াইয়ে হারিয়ে দেন তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদীকে।

পরবর্তীতে বিজেপি সাংসদ সবাইকে চমকে দিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। তবে সাংসদ পদ ছাড়েননি। আশা করেছিলেন তৃণমূল তাকে ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী করবে। ব্রিগেডে তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণার মঞ্চে হাজির ছিলেন অর্জুন। প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষিত না হওয়ায় তিনি মঞ্চ ছাড়েন। এরপরই বিজেপির থেকে টিকিট পান।

বিজেপির টিকিটে এই লোকসভা ভোটে লড়লেন অর্জুন। তার বিরুদ্ধে প্রার্থী ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও বিধায়ক পার্থ ভৌমিক। সহজেই অর্জুনকে হারিয়েছেন পার্থ। এলাকায় প্রভাব, বিজেপির প্রতীক কিংবা নরেন্দ্র মোদীর মুখ, কোনো ফ্যাক্টর দলবদলু নেতার হার আটকাতে পারেনি।

পদ্মে জিতে ঘাস ফুলে

বিজেপির তিন বিধায়ককে এবার লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তিনজনই হেরে গিয়েছেন।

উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ থেকে বিজেপির টিকিটে বিধানসভায় গিয়েছিলেন কৃষ্ণ কল্যাণী। তিনি আগে তৃণমূলে ছিলেন। লোকসভা ভোটের আগে পুরনো দলে ফিরে যান। রায়গঞ্জ কেন্দ্রে তাকে প্রার্থী করে তৃণমূল। প্রভাবশালী কৃষ্ণ এই কঠিন আসনে জয় এনে দেবেন, এমনটাই আশা ছিল নেতৃত্বের। কিন্তু এখানে জিতেছেন বিজেপি প্রার্থী কার্তিক পাল।

কার্তিক অনেক আগে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে গিয়েছিলেন। কালিয়াগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন। ২০২০ তে কার্তিক বিজেপিতে যোগ দেন। এবার এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছিল আলি ইমরান রামজকে। তিনি সংখ্যালঘু ভোটে ভাগ বসিয়ে কার্তিকের জয়ের পথ সহজ করে দিয়েছেন।

উত্তর ২৪ পরগনা বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস পদ্ম প্রতীকে জিতে বিধানসভায় গিয়েছিলেন। তিনি বিধানসভার সদস্যপদ ছেড়ে দিয়ে মতুয়া অধ্যুষিত বনগাঁ কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে লড়েন কেন্দ্রের বিদায়ী মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর

ঠাকুরবাড়ির সদস্য শান্তনু সঙ্গে লড়াই কঠিন ছিল বিশ্বজিতের। এমনিতেই মতুয়ারা গত কয়েকটি নির্বাচনে বিজেপির পক্ষেই রয়েছেন। এবার সিএএ কার্যকর হওয়ায় মতুয়া ভোট পদ্মকে ছেড়ে যায়নি। তাই শান্তনুকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি বিশ্বজিৎকে হারাতে।

অর্জুনের মতোই ভোটের ঠিক মুখে শিবির বদলেছিলেন রানাঘাট দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক মুকুট মণি অধিকারী। মতুয়া সমাজের তরুণ নেতাদের অন্যতম মুকুটমণি পেশায় চিকিৎসক।

২০১৯ সালেই রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে তার প্রার্থী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু চাকরিগত কারণে তিনি প্রার্থী হতে পারেননি। তার বদলে পদ্ম প্রতীকে জিতে লোকসভায় যান জগন্নাথ সরকার।

পরে ২০২১ এর বিধানসভা ভোটে মুকুটমণিকে প্রার্থী করে বিজেপি। সেই ভোটে জেতেন তিনি। এবার আশা করেছিলেন, বিজেপি তাকে রানাঘাট থেকে লোকসভার প্রার্থী করবে। কিন্তু বিপুল ভোটে জেতা জগন্নাথকে সরাতে চাননি শীর্ষ নেতৃত্ব। 

বিজেপি রানাঘাটে তাদের প্রার্থী ঘোষণার পর, হঠাৎ একদিন কলকাতায় তৃণমূলের মিছিলে দেখা যায় মুকুটমণিকে। এরপরই তিনি ঘাসফুলের টিকিট পান। যদিও জগন্নাথ এবারও সহজেই জিতেছেন রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে।

পারলেন না তাপস

ভোটের মুখে দলবদল করলেও অর্জুন বা মুকুটমণিদের সঙ্গে তাপস রায়কে এক আসনে রাখতে রাজি নন অনেকে। বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক বর্ষীয়ান তাপস ভোটের আগে দলের বিরুদ্ধে মুখ খোলেন। বিধায়ক পদ ছেড়ে যোগদান করেন বিজেপিতে।

উত্তর কলকাতা কেন্দ্রে তাপসকে প্রার্থী করে বিজেপি। তার বিরুদ্ধে ছিলেন তৃণমূলের দীর্ঘদিনের সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার রাজনীতিতে সুদীপ ও তাপসের বিরোধের কথা কারো অজানা নয়। তৃণমূলের মধ্যেও এ নিয়ে চোরাস্রোত রয়েছে। যদিও এসব ফ্যাক্টর অতিক্রম করে সুদীপ হারিয়ে দিয়েছেন তাপসকে।

অন্য রাজ্যে অনেক নেতা দলবদল করে জিতে গিয়েছেন। তবে বেশিরভাগ জায়গায় হারতে হয়েছে তাদের।

দলবদল যারা করেছেন, মানুষ তাদের খুব একটা পছন্দ করছে না: সুমন ভট্টাচার্য

দলবদল অন্য পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে মহারাষ্ট্রে। সেখানে দুটি আঞ্চলিক দলে বিভাজন হয়ে গিয়েছে। শিবসেনা ও এনসিপি আড়াআড়ি ভেঙে গিয়েছে। প্রধান নেতারা দলের প্রতীক হারিয়েছেন। তবে এনসিপি ভেঙে দেয়া অজিত পাওয়ার জোর ধাক্কা খেয়েছেন লোকসভা নির্বাচনে।

অবাদে দলবদল

তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর দলবদল অনেকটাই জলভাত হয়ে গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। একই কথা কেন্দ্রীয় স্তরে বিজেপির ক্ষেত্রে বলা চলে। মহারাষ্ট্রে দুটি আঞ্চলিক দলের বিভাজনের নেপথ্যে তাদের বড় ভূমিকা ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন রাজ্যে ক্ষমতা দখলের জন্য বিজেপি দল ভাঙিয়েছে।

দলবদল করার পর জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই আইনসভার সদস্যপদ ছাড়ছেন না। দলত্যাগ বিরোধী আইনে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে না। সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায় কোন দলের বিধায়ক তা নিয়ে বিস্তর জল্পনা চলেছে বহুদিন ধরে।

সাম্প্রতিককালে দলবদলের সবচেয়ে বড় নজির তৈরি করেছেন মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘির বিধায়ক বায়রন বিশ্বাস। তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। বায়রনের জয়কে বিরোধী শিবির সাগরদিঘি মডেল হিসেবে তুলে ধরে। কিন্তু কয়েকমাসের মধ্যেই তৃণমূলে যোগ দেন তিনি।

২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর অনেক নেতাই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন গত তিন বছরে। বিষ্ণুপুরের বিধায়ক তন্ময় ঘোষ, কালিয়াগঞ্জের বিধায়ক সৌমেন রায়, আলিপুরদুয়ারের বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল এর মধ্যে অন্যতম।

সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "দলবদল যারা করেছেন, মানুষ তাদের খুব একটা পছন্দ করছে না। এবার তাদের বিরুদ্ধে ভোট পড়েছে। রাজনীতিতে নৈতিকতা জিনিসটি ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। তাপস রায় এর মধ্যে বিরলতম উদাহরণ, যিনি বিধায়ক পদে ইস্তফা দিয়ে তারপর লোকসভা লড়তে গিয়েছিলেন। বাকিরা সেটাও করেননি। এটা সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।"

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷